শালবনীর মহাশোল গ্রামে সিংহবাড়িতে লক্ষ্মী ও সরস্বতীর পুজো হয় একসঙ্গে
বর্তমান | ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
রাজদীপ গোস্বামী, শালবনী: কথায় আছে লক্ষ্মী-সরস্বতীর একসঙ্গে সহবস্থান হয় না। ব্যাতিক্রম শালবনী ব্লকের মহাশোলের সিংহ পরিবার। তাঁদের পরিবারে লক্ষ্মী ও সরস্বতীকে একসঙ্গে পুজো করা হয়। প্রায় ২২৫ বছর ধরে চলা এই পুজোকে কেন্দ্র করে মহাশোল গ্রামে বসেছে মেলা। জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ একসঙ্গে লক্ষ্মী ও সরস্বতীর পুজো দেখতে ভিড় জমাচ্ছেন। এবছর রেকর্ড ভিড় হয়েছে বলে জানান সিংহ পরিবারের সদস্যরা। রীতি মেনে বাড়িতে মহিলা সদস্যরা চিড়ে আর নলেন গুড় দিয়ে নাড়ু তৈরি করেছেন। সিংহ পরিবারের সদস্যদের কথায়, এবছরও হরিনাম সংকীর্তনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাশাপাশি গ্রামবাসীদের মনোরঞ্জনের জন্য রয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। মহাশোল, জগন্নাথপুর সহ ১০টি গ্রামের মানুষ এই পুজোয় অংশ নেন। সিংহ বাড়ির পুজোর মূল আহ্বায়ক চিত্তরঞ্জন সিংহ, দুলালচন্দ্র সিংহ বলেন, এই পুজোর সময় গোটা পরিবার একসূত্রে বাঁধা পড়ে। সকলের সহযোগিতা ছাড়া এত বড় মাপের পুজোর আয়োজন করা সম্ভব নয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শালবনী ব্লকের মহাশোল অন্যতম জনপ্রিয় একটি গ্রাম। প্রায় ৫০০ বছর আগে বিহারের ছাপরা থেকে মহাশোল গ্রামে বসতি স্থাপন করেন সৈজন সিংহ। মূলত ব্যবসায়িক কারণেই তিনি এখানে এসেছিলেন। সেইসময় তাঁর উদ্যোগেই গ্রামে একটি আটচালা তৈরি করা হয়েছিল। জনশ্রুতি, সৈজনবাবুর নাতি প্রয়াত ঈশান সিংহ একদিন শীতের সন্ধ্যায় বাড়ির লোকদের নিয়ে আটচালায় গল্প করছিলেন। সেই সময় তাঁরা লক্ষ্য করেন দু’জন মেয়ে আটচালার পাশে পুজো করছে। বিষয়টি দেখে সকলে অবাক হয়ে যান। মনে নানা প্রশ্ন নিয়ে আটচালায় বসে থাকা লোকজন তাদের কাছে যেতেই মেয়ে দু’টি উধাও হয়ে যায়। এরপর তাঁরা বাড়িতে ফিরে খেয়েদেয়ে ঘুমিয়ে যান। কিন্তু, ঈশানবাবু চোখে কিছুতেই ঘুম আসছিল না। ভোররাত পর্যন্ত তাঁর চোখের সামনে ওই দৃশ্য মনে পড়ে যাচ্ছিল। এরপর ভোরের দিকে তিনি ঘুমিয়ে যান।
জানা গিয়েছে, ঘুমের মধ্যে তিনি স্বপ্নাদেশে ওই দুটি মেয়েকে দেখতে পান। ওই দুই মেয়ে ঘুমের মধ্যেই তাঁকে বলেন, দুই বোনের পুজো কর, মঙ্গল হবে বংশপরম্পরায়। এরপর ওই নির্দেশ মতো ঈশানবাবু পুজো করার মনস্থির করেন। দ্রুত মন্দির নির্মাণ করে লক্ষ্মী আর সরস্বতীর একসঙ্গে পুজো শুরু হয়। সিংহ পরিবারের সদস্য সন্দীপ সিংহ জানান, শুরুর দিকে তিনদিন ধরে পুজো হতো। এই পুজো শুরুর ৫০ বছর পর হরিনাম সংকীর্তনের প্রচলন হয়। পুজোকে কেন্দ্র করে বর্তমানে গ্রামে সাতদিন ধরে মেলা বসে। নিরঞ্জন সিংহ, নেপাল সিংহ বলেন, পুরোনো রীতি-নিয়ম মেনেই পুজো হয়ে আসছে। গোটা এলাকা আলোকসজ্জায় সেজে ওঠে। সিংহ পরিবারের প্রবীণা সদস্য আভারানি সিংহ বলেন, প্রায় ৬০ বছর ধরে আমি শাশুড়ির কাছে বিশেষ নাড়ু তৈরি শিখেছি। আজও সেই ধারা বজায় রয়েছে।