তাজপুরে অখিলের কাণ্ড মনে করাল কাঁথি, সুপ্রকাশের হুমকি ভিডিও ভাইরাল
বর্তমান | ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: তাজপুরে বনদপ্তরের এক মহিলা অফিসারকে হুমকি দিয়ে মন্ত্রীপদ খুইয়েছিলেন অখিল গিরি। এবার তাঁর ছেলে তথা কাঁথি পুরসভার চেয়ারম্যান সুপ্রকাশ গিরির একটি হুমকি ভিডিও ভাইরাল হল। ঘটনায় জেলার রাজনৈতিক মহলে শোরগোল পড়েছে। সেই ভিডিওতে সুপ্রকাশ কখনও ‘তুলে নিয়ে যাওয়া’, আবার কখনও ‘ঠাটিয়ে দেওয়া’-র নিদান দিয়েছেন। আবার জেসিবি এনে বাড়ি ভাঙার হুমকিও শোনা গিয়েছে তাঁর গলায়। শুধু হুমকি-ধমকি দিয়েই থেমে থাকেননি চেয়ারম্যান। তাঁর বিরুদ্ধে শারীরিক নিগ্রহেরও অভিযোগ তুলেছেন গোরাচাঁদ পাত্র নামে এক ব্যক্তি। কাঁথি পুরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের ওই ঘটনায় অনেকেই বলছেন, সুপ্রকাশের বিরদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। বিষয়টি তৃণমূল নেতৃত্বের নজরেও আনা হয়েছে বলে খবর।
কাঁথি পুরসভার ধনদিঘি বৃন্দাবন কলোনিতে বাড়ি তৈরি করছেন মানিকলাল মান্না। তিনি প্রাক্তন মন্ত্রী অখিল গিরির বাড়িতে কাজকর্ম করেন। বাড়ি তৈরির জন্য ওই এলাকার একটি সরকারি পুকুরের জল তিনি ব্যবহার করেন। যদিও পুকুরের জল কম থাকায় মানিকবাবুকে অন্য একটি পুকুর থেকে জল নেওয়ার পরামর্শ দেন গোরাচাঁদ পাত্র। এনিয়ে ঝামেলার সূত্রপাত। মানিকবাবুর পক্ষ নিয়ে এলাকায় হাজির হন সুপ্রকাশ। তিনি গোরাচাঁদবাবুর সঙ্গে তর্কাতর্কিতে জড়ানোর সময় তাঁকে তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দেন। ২০২২-২৩সাল নাগাদ বাড়ি বানিয়েছেন গোরাচাঁদবাবু। তাঁর বাড়ির প্ল্যান অনুমোদন না থাকার কথা বলে উপস্থিত পুরকর্মীদের জেসিবি এনে বাড়ি ভেঙে ফেলার হুমকিও দেন। ওই ব্যক্তির নামে পুরসভা থেকে নোটিস পাঠানোর প্রসঙ্গও তোলেন।
একটা সময় দু’জনের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় চলাকালীন সুপ্রকাশ ধাক্কাধাক্কি করেন বলেও অভিযোগ। ঘটনার ভিডিও নিমেষে ভাইরাল হয়ে যায়। বিষয়টি দলের শীর্ষ নেতৃত্বের নজরেও আনা হয়েছে বলে খবর। এরআগে গতবছর ৩ আগস্ট তাজপুরে বনদপ্তরের এক মহিলা অফিসারকে হুমকি দিয়ে মন্ত্রীপদ খুইয়েছিলেন অখিল গিরি। এদিন তাঁর ছেলের হুমকি ভিডিও ভাইরাল হতেই অনেকে সেদিনের ঘটনার স্মৃতিচারণ করছেন। পুরসভার চেয়ারম্যান পদের ক্ষমতাকে ব্যবহার করে কখনও জেসিবি আবার কখনও নোটিস পাঠানোর হুমকি দেন। আবার সমাজ বিরোধীদের স্টাইলে ‘ঠাটিয়ে দেওয়া’, ‘তুলে নিয়ে যাওয়ার’ কথাও তার গলায় শোনা গিয়েছে।
গোরাচাঁদবাবু বলেন, ‘আমি কোনওভাবেই উত্যক্ত করিনি। চেয়ারম্যানের প্রতিটি কথার জবাব দিয়েছি। মুখের উপর জবাব দেওয়া তাঁর পছন্দ হয়নি। তাই হুমকি-ধমকি দিয়েছেন। এর পাশাপাশি ধাক্কাধাক্কি করেছেন। যদিও আমি আগাগোড়া সংযত ছিলাম।’ যদিও সুপ্রকাশ গিরি বলেন, ‘ওই ব্যক্তি পুরসভার নিয়ম মেনে প্রয়োজনীয় জমি না ছেড়ে বাড়ি বানিয়েছেন। অনুমতি ছাড়াই বাড়ির আন্ডারগ্রাউন্ড করেছেন। পুরসভার পুকুর ব্যক্তিগতভাবে ব্যবহার করছেন। তাঁর বিরুদ্ধে পুরসভায় ডেপুটেশন পড়েছিল। গত জুন মাস থেকে নোটিস পাঠানো হয়েছে। তিনি ধারাবাহিকভাবে নোটিস উপেক্ষা করেছেন। সম্প্রতি পুরসভায় এসে পুকুর দখলমুক্ত করার অঙ্গীকার করেছেন। উৎসবের মরশুমে ফের পুকুর জবরদখল করার পরিকল্পনা ছিল। আমি খবর পেয়ে এলাকায় যাই। তখন আমাকে লক্ষ্য করে অকথ্য ভাষায় গালিগালজ করা হয়। আমাকে উত্তেজিত করা হয়। আমি থানায় এনিয়ে লিখিত অভিযোগ করেছি।’