স্ত্রী ও শিশুকন্যাকে খুনের দায়ে যুবককে ফাঁসির নির্দেশ কোর্টের
বর্তমান | ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, জলপাইগুড়ি ও সংবাদদাতা, নাগরাকাটা: স্ত্রী ও আঠারো মাসের শিশুকন্যাকে কুড়ুল দিয়ে কুপিয়ে খুনের দায়ে এক যুবকের ফাঁসির নির্দেশ দিল জলপাইগুড়ি আদালত। মঙ্গলবার জলপাইগুড়ির অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা আদালতের তৃতীয় কোর্টের বিচারক বিপ্লব রায় ওই সাজা শোনান। সাজাপ্রাপ্তের নাম লালসিং ওরাওঁ। সাজা ঘোষণার পর আদালতের মধ্যেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। যদিও আদালত থেকে কোর্ট লকআপে নিয়ে যাওয়ার পথে প্রশ্ন করা হলেও কিছু বলতে চাননি সাজাপ্রাপ্ত ওই যুবক।
নাগরাকাটার লুকসান চা বাগানের বাসিন্দা লালসিং ওরাওঁ ২০২৩ সালের ২৭ মার্চ স্ত্রী সখী ওরাওঁ (২৭) ও আঠারো মাসের মেয়ে মমতা ওরাওঁকে কুপিয়ে খুন করেন। তারপর খুনের ঘটনা ধামাচাপা দিতে তিনি ছুরি দিয়ে ক্ষতবিক্ষত করেন নিজের শরীর। মৃত বধূর মা বুধনি ওরাওঁয়ের দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিস তদন্তে নেমে লালসিংকে গ্রেপ্তার করে। মামলার সরকারপক্ষের আইনজীবী প্রসেনজিৎ দেব বলেন, অভিযোগকারী বুধনি ওরাওঁ সহ মোট ১৩ জন সাক্ষ্য দেন। অভিযুক্ত বিভিন্ন সময়ে আদালতের কাছে নানারকম ঘটনা সাজানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু সেসব বক্তব্যের পক্ষে কোনও তথ্যপ্রমাণ পেশ করতে পারেননি। স্ত্রী ও শিশুকন্যাকে রক্ষা করার কথা যাঁর, তিনি যেভাবে তাদের খুন করেছে, তাতে ঘটনাটিকে বিরলের মধ্যে বিরলতম আখ্যা দিয়ে এদিন বিচারক অভিযুক্তের ফাঁসির সাজা শোনান। তবে এই রায়ের প্রেক্ষিতে অভিযুক্ত চাইলে হাইকোর্টে যেতে পারেন বলেও এদিন উল্লেখ করেন বিচারক। জলপাইগুড়ির পুলিস সুপার খণ্ডবাহলে উমেশ গণপত বলেন, পুলিস ঘটনায় দ্রুত তদন্ত শেষ করে আদালতে চার্জশিট জমা দেয়। পরে সাপ্লিমেন্টরি চার্জশিটও জমা পড়ে। পুলিস সময়মতো তদন্ত প্রক্রিয়া শেষ করার কারণে খুবই কম সময়ের মধ্যে মামলার সাজা ঘোষণা হল। স্ত্রী ও শিশুকন্যাকে খুনের কারণ কী ছিল? মামলার সরকারপক্ষের আইনজীবী বলেন, লালসিং কোনও কাজকর্ম করতেন না। ওঁর স্ত্রী বাগানে কাজ করতেন। সংসারের খরচ চালাতেন তিনি। লালসিং তাঁর কাছ থেকে যখনতখন টাকাপয়সা চাইতেন। তারপর সেই টাকা দিয়ে নেশা করে বাড়িতে এসে স্ত্রীর উপর অত্যাচার চালাতেন। পুলিস ও আদালত সূত্রে খবর, লালসিংয়ের দুই সন্তান। বছর পাঁচেকের একটি ছেলে রয়েছে। সে দিদার কাছে থাকে। মেয়েকে নিয়ে বাড়িতে শুয়ে ছিলেন ওই যুবকের স্ত্রী। কুড়ুল দিয়ে কুপিয়ে তাদের দু’জনকেই খুন করে নিজের পেটে ছুরি ঢুকিয়ে দেন লালসিং। বাড়িতে তখন ওই যুবকের দাদা পান্নালাল ছিলেন। তিনি ভাইয়ের বউয়ের গোঙানির আওয়াজ শুনতে পেয়ে গিয়ে ওই বীভৎস ঘটনা দেখে চিৎকার করে ওঠেন। খবর পেয়ে নাগরাকাটা থানার পুলিস এসে জখম লালসিংকে প্রথমে সুলকাপাড়া হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে তাঁকে নিয়ে আসা হয় জলপাইগুড়ি মেডিক্যালে। সেখানে চিকিৎসার পর তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিস।