নিজস্ব প্রতিনিধি, কোচবিহার: প্রায় ৭২ ঘণ্টা ডিজিটাল অ্যারেস্ট! এক অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে ২ লক্ষ ৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় এক সাইবার অপরাধী। কোচবিহার সাইবার ক্রাইম থানায় অভিযোগ দায়ের হতেই অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে অভিযুক্তকে পাকড়াও করে নিয়ে আসে পুলিস।
কোচবিহারের তুফানগঞ্জ মহকুমার বক্সিরহাট থানার ভানুকুমারীর মদনমোহন পাড়ার বাসিন্দা উত্তমকুমার পালকে সম্প্রতি ওই প্রতারক হোয়াটসঅ্যাপ কল করে নিজেকে সিবিআইয়ের সাইবার সেল স্টেশনের অফিসার বলে দাবি করে। রীতিমতো পুলিসের পোশাক পরেই ওই শিক্ষককে হোয়াটসঅ্যাপে কল করা হয়েছিল। যা দেখে স্বাভাবিক ভাবেই ঘাবড়ে যান ওই শিক্ষক। তাঁকে মানি লন্ডারিং কেসের মিথ্যে গল্প বলে ফাঁসানো হয়। আর সেই সুযোগেই তাঁর কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া হয় টাকা।
জানুয়ারি মাসের শুরুর দিকের এই ঘটনায় তদন্তে নামে পুলিস। এরপর যোগ পায় অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যের বিশাখাপত্তনমের। সেখানকার ভিজিয়ানাগারাম জেলার আমাকাম এলাকার ওল্ড কলোনি থেকে পিল্লা ননি নামে এক ব্যক্তিকে কোচবিহার জেলা পুলিসের টিম গ্রেপ্তার করে নিয়ে এসেছে। কোচবিহারের পুলিস সুপার দ্যুতিমান ভট্টাচার্য বলেন, সাইবার অপরাধ ও ডিজিটাল অ্যারেস্ট নিয়ে আমরা সকলকে সচেতন করছি। তবুও নানাভাবে মানুষ এসবের ফাঁদে পড়ে যাচ্ছে। ৮ জানুয়ারি বক্সিরহাট থানায় এলাকার এক শিক্ষককে সিবিআই পরিচয় দিয়ে ৭২ ঘণ্টা ফোনের সামনে বসে থাকতে বলা হয়। তাঁর ফোন নম্বর মানি লন্ডারিং কেসে ব্যবহার হয়েছে বলা হয়। পরবর্তীতে আমাদের কাছে অভিযোগ জমা পড়তেই ঘটনার তদন্ত শুরু করি। বিশাখাপত্তনমে আমাদের টিম গিয়ে পিল্লা ননি নামে একজনকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে এসেছে। এরসঙ্গে আরও কয়েকজন যুক্ত। তাদেরও খোঁজ চলছে। ডিজিটাল অ্যারেস্ট বলে কিছু হয় না। জেলায় এটাই ডিজিটাল অ্যারেস্ট প্রথম ঘটনা। এমন আরএকটি কেসের তদন্ত চলছে। ধৃতকে আদালতে তোলা হলে ১০ দিনের হেফাজতে পাওয়া গিয়েছে।
পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ৯ জানুয়ারি এই ঘটনায় টাকা দেওয়া হয়। ১১ জানুয়ারি অভিযোগ দায়ের হয়। এরপর তদন্ত করে পুলিস বিষয়টি জানতে পারে। অভিযুক্তের খোঁজে ২৮ জানুয়ারি কোচবিহার থেকে এসআই বিপন সুব্বা, এসআই মৃণাল লামা ও দুই কনস্টেবলের একটি টিম বিশাখাপত্তনম যায়। ৩১ জানুয়ারি ওই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়। মঙ্গলবার তাকে কোচবিহারে নিয়ে আসা হয়। এরপরেই এদিন দুপুরে সাংবাদিক সম্মেলন করে বিষয়টি জানান এসপি।
তদন্তকারী এক পুলিস অফিসার জানিয়েছেন, অবসরপ্রাপ্ত ওই শিক্ষক ডিজিটাল অ্যারেস্টের শিকার হয়ে তাঁর ফিক্সড ডিপোজিট ভাঙিয়ে ৮ লক্ষ টাকা থেকে ২ লক্ষ ৫ হাজার টাকা দিয়েছিলেন। পরে তাঁর স্ত্রী বাড়িতে এসে বিষয়টি জানতে পারেন। এরপরেই পুলিসে অভিযোগ দায়ের করা হয়। জেলা পুলিসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই ধরনের সাইবার অপরাধ বা ডিজিটাল অ্যারেস্ট থেকে সাধারণ মানুষকে সচেতন থাকতে হবে। কারণ এখন আর সাধারণ পকেটমারি হয় না। সাইবার অপরাধীরা ডিজিটাল অ্যারেস্টের মতো নানা ফাঁদ পেতে সরাসরি মানুষকে প্রতারণা করছে।