• কোভিড পর্বের মতো দেহ গঙ্গায় ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে,   কুম্ভের পদপিষ্ট নিয়ে সরব মমতা
    বর্তমান | ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা ও নয়াদিল্লি: পূর্ণকুম্ভে পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যুমিছিলের ঘটনায় বিজেপি শাসিত উত্তর প্রদেশের যোগী সরকারকে তীব্র কটাক্ষ বাণে বিঁধলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে মমতার অভিযোগ—কোভিড পর্বের মতোই মানুষের লাশ গঙ্গায় ভাসিয়ে দিয়েছে ওরা। সেই সময় আমাদের এখানে মালদহে মৃতদেহ ভেসে এসেছিল। বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন উদ্বোধনের প্রাকপর্বে মঙ্গলবার নিউটাউনের ইকোপার্কে আমন্ত্রিতদের সঙ্গে চা-চক্রে মিলিত হয়েছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। সেখানেই দৃশ্যত বিরক্ত মমতা বলেন, ডেথ সার্টিফিকেট ছাড়াই সব বডি পাঠিয়েছে। গণতন্ত্রে কোনওদিন এটা হতে পারে না! প্রসঙ্গত, পুণ্যস্নানে মোক্ষলাভের আশায় প্রয়াগরাজের সঙ্গমস্থলে গিয়ে পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছে বহু পুণ্যার্থীর। উত্তরপ্রদেশ প্রশাসন, ৩০ জনের মৃত্যুর খবর স্বীকার করলেও, মর্গের স্ট্রিং অপারেশন এবং ভুক্তভোগী পরিজনদের দাবি থেকে স্পষ্ট, মৃত্যুর খবর চেপে গিয়েছে যোগী সরকার। বাস্তবে মৃত্যুর সংখ্যা কমপক্ষে ১০০। পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছে এ রাজ্যের ছয় পুণ্যার্থীর। পোস্টমর্টেম ও ডেথ সার্টিফিকেট ছাড়া তাঁদের দেহ পাঠানো হয়েছে বাংলায়। 


    কুম্ভমেলার এহেন বিশৃঙ্খলার বিষয়ে নিজের ক্ষোভ উগড়ে দেওয়ার সঙ্গেই রাজ্য সরকার পরিচালিত সুনিয়ন্ত্রিত এবং শৃঙ্খলাবদ্ধ গঙ্গাসাগর মেলার প্রসঙ্গও উত্থাপন করেন মমতা। বলেন, গঙ্গাসাগর দেখে শিক্ষা নেওয়া উচিত। রাজ্য সরকার প্রতিটি পুণ্যার্থীর নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করেছিল। কেউ অসুস্থ হলে দ্রুত ‘এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে’ চাপিয়ে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আর কুম্ভে! সে তো গোটা দেশের মানুষ দেখলেন, পুণ্যার্থীদের সঙ্গে কী ব্যবহার করা হয়েছে। বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শ—ওখানে জল দূষিত হয়েছে। স্নান করলে, চর্ম রোগ হতে পারে! প্রসঙ্গত, সমাজবাদী পার্টির সাংসদ জয়া বচ্চনও সোমবার বলেছিলেন, প্রয়াগের গঙ্গায় মৃতদেহ ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখানকার জল সবচেয়ে দূষিত।


     সংসদে এদিনও কুম্ভের পদপিষ্টের ঘটনা নিয়ে সরব হয়েছে সমাজবাদী পার্টি। মৃতের সংখ্যা লুকানোর চেষ্টা হচ্ছে বলে যোগী সরকারকে একহাত নিয়েছেন দলের সুপ্রিমো অখিলেশ যাদব। যাঁরা সঠিক তথ্য আড়াল করতে চাইছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার পক্ষে সওয়াল করেন উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। একইসঙ্গে তাঁর প্রশ্ন, কুম্ভকে ডিজিটাল মেলা হিসেবে প্রচার চালাচ্ছে, তাহলে কেন পদপিষ্টে সঠিক মৃত্যুর সংখ্যা দেওয়া যাচ্ছে না? 


    সপাকে জবাব দিতে এদিন সংসদ চত্বরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মথুরার বিজেপি সাংসদ হেমা মালিনী বলেন, পূর্ণকুম্ভের মতো বিশালাকার আয়োজন অত্যন্ত নিপুণ হাতে পরিচালনা করছে উত্তরপ্রদেশ সরকার। সেখানে যে কর্মকাণ্ড চলছে, তা প্রশংসার দাবি রাখে। কোটি কোটি মানুষ সেখানে আসছেন এবং স্নান সেরে ফিরে যাচ্ছেন। পুরোটা নিখুঁতভাবে নিয়ন্ত্রণ করা খুব কঠিন হলেও আমরা পূর্ণ শক্তিতে তা করে চলেছি। আমরা নিজেরাও সেখানে স্নান করেছি। কোথাও কোনও সমস্যা নেই। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও যাচ্ছেন কুম্ভে। সবকিছুই ভালোভাবে চলছে। এটা সত্যি যে, একটি বড় অঘটন ঘটে গিয়েছে। তবে তেমন বড়কিছু নয়। বিষয়টিকে অতিরঞ্জিত করে দেখানো হচ্ছে। 


    মথুরার সাংসদের এহেন মন্তব্য ঘিরে বিতর্কের ঝড় ওঠে। তাঁকে একহাত নিয়েছেন সপা সাংসদ ধর্মেন্দ্র যাদব। তিনি বলেন, কুম্ভে ভিআইপি ব্যবস্থা ছিল অভিনেত্রী-সাংসদের জন্য। পদপিষ্ট হয়ে শত শত মানুষের মৃত্যু হয়েছে—এটা আজ কারও কাছে গোপন নেই। অথচ যোগী সরকার মৃত্যুর সংখ্যা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
  • Link to this news (বর্তমান)