• সুস্থতার পরেও দীর্ঘ পরিচর্যা প্রয়োজন জিবিএস আক্রান্তদের
    আনন্দবাজার | ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • গিয়ে বারে সিন্ড্রোম (জিবিএস)-এ আক্রান্ত হয়ে রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালে এই মুহূর্তে ১৭ জন চিকিৎসাধীন। কয়েক জনকে ভেন্টিলেশন থেকে বার করা হয়েছে। তবে এই মুহূর্তে অল্পবয়সি ও বয়স্ক মিলিয়ে অন্তত ন’জন ভেন্টিলেশনে রয়েছেন। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, ভেন্টিলেশনে থাকা জিবিএসে আক্রান্তদের জন্য প্রথম সাত থেকে ১০ দিন গুরুত্বপূর্ণ। তার জন্য ক্রিটিক্যাল কেয়ার ব্যবস্থাপনায় কড়া নজর রাখতে হয়। এখানেই শেষ নয়। বাড়ি ফিরলেও অন্তত দুই থেকে চার মাস যথাযথ পরিচর্যার মধ্যে রাখতে হয় রোগীদের।

    রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, ক্রিটিক্যাল কেয়ার ব্যবস্থাপনায় যাতে কোনও রকম খামতি না থাকে তার জন্য ইতিমধ্যেই সমস্ত মেডিক্যাল কলেজ, হাসপাতালগুলিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, জিবিএস-এ আক্রান্তদের প্রাথমিক উপসর্গে পা অসাড় হতে শুরু করে। তার পরে সেই অসাড়তা ক্রমশ শরীরের উপরের দিকে উঠতে থাকে। এর পরেই অনেক রোগীর শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। ক্রিটিক্যাল কেয়ার বিশেষজ্ঞদের কথায়, ‘‘শ্বাসকষ্ট শুরু হলে রোগীকে অবিলম্বে ভেন্টিলেশনে দিতে হয়। সঙ্গে ইন্ট্রাভেনাস ইমিউনোগ্লোবিউলিন ইঞ্জেকশন, বা প্লাজ়মাফেরেসিস-এর মাধ্যমে চিকিৎসা করতে হয়।’’ কিন্তু ওই ইঞ্জেকশন বা প্লাজ়মাফেরেসিস-এর কোর্স সম্পূর্ণ হলে রোগী পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠলেন, তেমনটাও নয়। তবে ওইগুলির মাধ্যমে পক্ষাঘাতের তীব্রতাকে শ্লথ করে দেওয়া হয় বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা।

    ক্রিটিক্যাল কেয়ারের শিক্ষক-চিকিৎসক সুগত দাশগুপ্ত জানাচ্ছেন, ভেন্টিলেশন, ইমিউনোগ্লোবিউলিন ইঞ্জেকশন বা প্লাজ়মাফেরেসিস (প্লাজমা পরিবর্তন) দেওয়া সত্ত্বেও কিছু রোগী মারা যায়। কারণ, ‘অটোনোমিক ডিসফাংশন’-এর কারণে ওই জিবিএস আক্রান্তের শরীরে রক্তচাপ ও হার্ট রেটের প্রক্রিয়া মারাত্মক ব্যাহত হয়। ওই চিকিৎসকের কথায়, ‘‘আচমকাই রোগীর রক্তচাপ ও হার্ট রেট মারাত্মক বেড়ে বা কমে যেতে পারে। তাতে মৃত্যু ঘটে। তাই ভেন্টিলেশনে থাকা জিবিএস আক্রান্তের শারীরিক মাপকাঠির দিকে প্রথম সাত-দশ দিন অত্যন্ত কড়া নজর রাখতে হয়।’’ ক্রিটিক্যাল কেয়ারে থাকার সময়ে প্রতিদিনই স্নায়ু রোগ চিকিৎসকদেরও পর্যবেক্ষণ করতে হয় পক্ষাঘাতে আক্রান্ত স্নায়ু কতটা সচল হচ্ছে। ক্রিটিক্যাল কেয়ারের আর এক চিকিৎসক সৌতিক পাণ্ডা জানাচ্ছেন, ইঞ্জেকশন বা প্লাজ়মা ফেরেসিসের প্রক্রিয়া শেষের পরেও যদি দেখা যায় রোগীর শ্বাসপ্রশ্বাসের পেশির কার্যক্ষমতা ফেরেনি, তখন দীর্ঘদিন ভেন্টিলেশনে রাখার প্রয়োজন হয়। তার জন্য ট্র্যাকিওস্টমি করতে হয়।

    সৌতিক বলেন, ‘‘ওই অবস্থায় দীর্ঘ সময় ধরে আইসিইউ বা ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে থাকার ফলে দ্বিতীয় কোনও সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি হয়। নিউমোনিয়া, মূত্রনালির সংক্রমণ (ইউটিআই)-এ আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। সেই সময়টা কড়া নজরদারির প্রয়োজন।’’ চিকিৎসকেরা এ-ও জানাচ্ছেন, থেরাপি শেষে অনেক রোগীর শ্বাসপ্রশ্বাসের পেশি এবং হাত-পায়ের পেশির কার্যক্ষমতা ফিরতে শুরু করে। সেই সময়ে ভেন্টিলেশন থেকে ওই রোগীকে বার করা গেলেও, তিনি তখনই নিজে হাঁটাচলা করতে পারবেন তেমনটাও নয়। সুগতর কথায়, ‘‘ভেন্টিলেশন খুলে দেওয়া হলেও, রোগীকে প্রয়োজন মতো অক্সিজেন দিতে হয়। তার সঙ্গে প্রয়োজন ঠিক পরিচর্যার। না হলে, রোগী একই জায়গায় শুয়ে থাকার ফলে ত্বকে দীর্ঘায়িত চাপের ফলে ক্ষত বা বেডসোর হতে পারে। প্রস্রাব বা পায়খানারও সমস্যা দেখা দিতে পারে।’’

    গিয়ে বারে সিন্ড্রোম থেকে মুক্ত হলেও, ওই সংক্রমণের ফলে শরীরের বিভিন্ন অংশে তৈরি হওয়া পক্ষাঘাত কাটাতে বিভিন্ন পদ্ধতি প্রয়োগের কথাও জানাচ্ছেন ফিজ়িক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন-এর শিক্ষক-চিকিৎসক রাজেশ প্রামাণিক। তাঁর কথায়, ‘‘শ্বাস নেওয়ার ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য কিছু প্রক্রিয়া রয়েছে। যা রোগীকে একটা নির্দিষ্ট সময় ধরে করাতে হয়। একই সঙ্গে হাত-পায়ের পেশির শক্তি ফিরে আসার পরে যাতে সেগুলি বেঁকে না যায়, তার জন্য ইলেকট্রিক্যাল স্টিমুলেশন দিতে হয়। প্রায় কয়েক মাস ধরে বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রোগীকে স্বাভাবিক জীবনে ফেরানো সম্ভব।’’

  • Link to this news (আনন্দবাজার)