• বাংলায় সুপবন বহিতেছে, বদলে যাওয়া রাজ্যের বিপণন শিল্পপতিদের, উদ্বোধনে হল বিনিয়োগের ঘোষণাও
    আনন্দবাজার | ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • গত বার বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন (বিজিবিএস)-এর অন্যতম স্লোগান ছিল, ‘গন্তব্য বাংলা’। সেই স্লোগানের রেশ ধরে এ বছর বিজিবিএসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে একাধিক শিল্পপতি বার্তা দিলেন, ‘বাংলাই গন্তব্য’।

    সঞ্জীব গোয়েন্‌কা থেকে সঞ্জীব পুরী, হর্ষ নেওটিয়া থেকে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়েরা বদলে যাওয়া বাংলার বিপণন করলেন বণিক মহলের সামনে। মুকেশ অম্বানীর মতো জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরের প্রভাবশালী শিল্পপতি বাংলার সুনাম করলেন। আইটিসি থেকে রিলায়্যান্স, জেএসডব্লিউ থেকে গোয়েঙ্কা গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হল নতুন বিনিয়োগের।

    কলকাতায় এআই হাব তৈরি করার ঘোষণা করেছেন মুকেশ। জানিয়েছেন, আজ থেকে ন’বছর আগে রাজ্যে তাদের বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল দু’হাজার কোটি টাকা। এখন সেটাই বেড়ে হয়েছে ৫০ হাজার কোটি। জিয়ো কেন্দ্রিক ডিজিটাল পরিকাঠামো উন্নয়নে বিনিয়োগের ঘোষণা করেছেন। মুকেশ জানিয়েছেন, কলকাতাতেই প্রথম জিয়ো সেন্টার গড়ে উঠেছিল। যা এখন সারা পৃথিবীর ডিজিটাল যোগাযোগের দিগন্ত উন্মোচিত করে দিয়েছে। জানালেন, বাংলাতেই জিয়োর গ্রাহক সবচেয়ে বেশি। তাঁর কথায়, ‘‘বাংলায় এখনও পর্যন্ত জিও স্টোর রয়েছে ১৩০০। আরও ৪০০ স্টোর হবে এই রাজ্যে।’’ ‘স্বদেশ’ নামে একটি স্টোর খোলা হবে বলেও জানিয়েছেন রিলায়্যান্স কর্ণধার। তার মাধ্যমে বালুচরী, মসলিন, কাঁথা স্টিচের মতো বাংলার শাড়ির বিশ্ববিপণন করা হবে।

    এ রাজ্যে ১০০ বছরের বেশি সময় ধরে ব্যবসা করছে আইটিসি। সেই প্রসঙ্গ উল্লেখ করে পুরী বলেন, ‘‘এই রাজ্যে অনেক ক্ষেত্রেই বিনিয়োগ করেছি। প্রায় ৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ রয়েছে আমাদের এই রাজ্যে।’’ আইটিসি গোষ্ঠী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) হাব করতে চলেছে বাংলায়। তাঁর কথায়, ‘‘বাংলা আমাদের রাজ্য। এখানে আমাদের বিনিয়োগের ধারা আগামী দিনেও অব্যাহত থাকবে।’’

    বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে আরপিএসজি দেশে অগ্রণী শিল্পগোষ্ঠী। ইদানীং ক্রীড়াক্ষেত্রেও বিনিয়োগ বাড়িয়েছে তারা। বিজিবিএসের মঞ্চ থেকে কর্ণধার সঞ্জীব বলেন, ‘‘আমরা এই রাজ্যে ইতিমধ্যেই ৪০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছি। আরও প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা আমরা এখানে বিনিয়োগ করব। মূলত শিক্ষা, স্বাস্থ্যক্ষেত্রে এই বিনিয়োগ করার কথা রয়েছে।’’ অতীতের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘আগে এখানে শিল্পায়নে বাধা ছিল। কিন্তু তা এখন অতীত। বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে অনেক কিছুই স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছে।’’

    মমতার সঙ্গে অনেকের মতো হর্ষের সখ্য প্রশাসনিক এবং শিল্পমহলে সুবিদিত। তিনি কথায়, ‘‘স্বাস্থ্যক্ষেত্রে আমাদের ১৫০০ কোটি টাকা বিনিয়োগে পাঁচটা হাসপাতাল রয়েছে। দার্জিলিং, কালিম্পং, গরুমারা ফরেস্ট, দিঘা ও শান্তিনিকেতনে আমাদের নতুন প্রকল্প তৈরি হচ্ছে, যেখানে প্রায় ১২০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ রয়েছে। আগামি ৫-৬ বছরে আরও ১৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে চলেছি।’’

    জিন্দাল গোষ্ঠীর কর্ণধার বলেন, ‘‘১৬ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে শালবনিতে ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ার পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের। এ ছাড়া প্রায় ২০০০ একর জমির উপর একটা শিল্পতালুক তৈরিরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। হাজারেরও বেশি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ চাকরির জায়গা তৈরি হতে চলেছে এই বিনিয়োগের মাধ্যমে।’’

    ২০২৩ সালে বিনিয়োগ টানতে স্পেন ও দুবাই সফরে গিয়েছিলেন মমতা। মাদ্রিদে মমতার সফরে যুক্ত হয়ে ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রাক্তন অধিনায়ক ঘোষণা করেছিলেন, শালবনীতে বিনিয়োগ করে তিনি একটি ইস্পাত কারখানা গড়ে তুলবেন। বিজিবিএসের উদ্বোধনী মঞ্চে বাংলার শিল্পবান্ধব পরিস্থির কথা তুলে ধরে সৌরভ জানিয়েছেন, তাঁর বিনিয়োগের কাজ চলছে। যদিও পরে মমতা বলেছেন, আদালতে মামলা রয়েছে বলে সৌরভ সবটা খোলসা করেননি। দেশ-বিদেশের শিল্পপতিদের উদ্দেশে সৌরভ ক্রীড়াক্ষেত্রেও বিনিয়োগের আবেদন জানিয়েছেন।

    সম্মেলনের মঞ্চে যখন বাংলার শিল্পপরিস্থিতিতে সুপবনের কথা বলা হচ্ছে, তখন বিনিয়োগ নিয়েই বিরোধীরা কটাক্ষ করছে রাজ্য সরকারকে। রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপির তরফে বলা হয়েছে, ‘‘বিজিবিএস-এর অর্থ বোমা-গুলি-বালির শিল্প।’’ বিজেপির অভিযোগ, ‘‘প্রতি বছর এই শিল্প সম্মেলনে যে বিনিয়োগ প্রস্তাব আসছে, তার মধ্যে কতটা বাস্তবায়িত হচ্ছে, রাজ্য সরকার কিছুতেই তার হিসেব দিচ্ছে না।’’ প্রায় একই সমালোচনা সিপিএমেরও। বিজিবিএসের মঞ্চ থেকে এই প্রসঙ্গ টেনেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘আমার কাছে নথি আছে। আমি নথি দেখিয়ে বলছি, বাংলায় ১২ লক্ষ কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে। কোনও প্রকল্পের কাজ চলছে। কোনও প্রকল্পের কাজ শেষের মুখে। তোমাদের কা‌ছে কোনও প্রমাণ আছে?’’

  • Link to this news (আনন্দবাজার)