ভয়ঙ্কর মাঙ্কি পক্সের হোমিওপ্যাথি সমাধান আবিষ্কার ৫ বঙ্গসন্তানের
বর্তমান | ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
বিশ্বজিৎ দাস, কলকাতা: প্রথম আবিষ্কৃত হয় ষাটের দশকে। ২০২২ সাল থেকে বিশ্বজুড়ে ক্রমেই ত্রাস হয়ে ওঠে। সেই মাঙ্কি পক্স রোগের নতুন ওষুধের সন্ধান দিলেন বাংলার পাঁচ চিকিৎসক। এক নাইজেরীয় অধ্যাপকও শামিল হয়েছেন এই যুগান্তকারী গবেষণায়। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, মাঙ্কি পক্সের ভবিষ্যতের নতুন ওষুধের তাঁরা সন্ধান দিয়েছেন হোমিওপ্যাথি শাখা থেকে। পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ গবেষণা পত্রিকা স্প্রিঙ্গার নেচারের ইন সিলিকো ফার্মাকোলজি নামক জার্নালের এবছরের জানুয়ারি সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছে এই ‘আশ্চর্য আবিষ্কার’। গবেষক দলের সদস্যরা হলেন ভাইরোলজির বিখ্যাত গবেষক ডঃ শতদল দাস, ডি এন দে হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজের অধ্যাপক ও প্যাথলজির বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক শুভময় ঘোষ, হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক গবেষক ডাক্তার প্রীতম গোস্বামী, রাজ্য সরকারের হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল অফিসার ডাক্তার সায়ক ঘোষ এবং নাইজেরিয়ায় কেমিস্ট্রির অধ্যাপক ডঃ ইমানুয়েল।
গবেষণাপত্রটিতে তাঁরা দাবি করেছেন, ৫টি হোমিওপ্যাথিক ওষুধের মূল উপাদান মাঙ্কি পক্স বা এমপক্স ভাইরাসের অত্যন্ত কার্যকরী সমাধানের ক্ষমতা রাখে। প্রশ্ন উঠতে পারে, কতটা কার্যকরী? গবেষকরা জানিয়েছেন, বর্তমানে মাঙ্কি পক্সের কার্যকরী ওষুধ হিসেবে বিশ্বজুড়ে প্রচলিত মডার্ন মেডিসিনের টেকোভিরিম্যাট। কখনও কখনও সিডোফোভির নামক অ্যান্টিভাইরালটিরও প্রয়োগ হয়। বিশেষ ডকিং পদ্ধতিতে দেখা গিয়েছে, বিশ্বজুড়ে প্রচলিত ৪৭টি জরুরি ফাইটোকেমিক্যালের মধ্যে অন্তত ৬টি মাঙ্কি পক্স ভাইরাসকে কাবু করতে প্রচলিত মডার্ন মেডিসিনের দুটি ওষুধের থেকেও কার্যকর ভূমিকা নিচ্ছে।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, এই আশ্চর্য ৬টি ফাইটোকেমিক্যালস বা মূল উপাদানই রয়েছে প্রচলিত ৫ হোমিওপ্যাথিক ওষুধের মধ্যে। ফাইটোকেমিক্যালসগুলি হল সারসাপোনিন, কুয়ারসিটিন, ইউপাফোলিন, কারকিউমিন, এটিজেনিন এবং ডুসিমেরিন। এই ৬টি ফাইটোকেমিক্যাল যে ৫টি হোমিওপ্যাথিক ওষুধে পাওয়া যাচ্ছে, সেগুলি হল সারসাপারিল্লা (অনন্তমূল), ইউপেটোরিয়াম (অসমলতা), কারকিউমা লঙ্গা (হলুদ), চাম্যামিলা (কর্পূর পুষ্প) আর ডালকামারা (বন তামাকু)।
গবেষক দল প্রথমে মলিকিউলার ডকিং করে মাঙ্কি পক্স ভাইরাসের রোগ সৃষ্টিকারী প্রোটিনের ক্রিস্টালের সঙ্গে ৪৭টি ফাইটোকেমিক্যালের কী কী ঘাত, প্রতিঘাত, সংযোগ হচ্ছে, তা প্রত্যক্ষ করেন। দেখা যায়, সারসাপোনিন, ডুসিমেরিনসহ পাঁচটি ফাইটোকেমিক্যালসের মাঙ্কি পক্স ভাইরাসকে আটকানোর ক্ষমতা প্রচলিত অ্যান্টিভাইরাল ওষুধের থেকেও বেশি। পরের ধাপে শরীরে এই ওষুধগুলির আত্তীকরণ, পরিবহণ এবং বিপাক-শোষণ কতটা হতে পারে, সেই চূড়ান্ত পরীক্ষা করা হয়। তাতে শেষ পর্যন্ত বাজিমাত করে ৬টি প্রাথমিক উপাদান বা ফাইটোকেমিক্যালস। বিশিষ্ট ভাইরোলজিস্ট এবং গবেষক দলের অন্যতম সদস্য শতদলবাবু বলেন, ‘১৯৫৮ সালে ডেনমার্কে বাঁদরদের একটি কলোনিতে প্রথমে এই ভাইরাস পাওয়া যায়। যত সময় গড়িয়েছে, ততই এর দাপট বেড়েছে। ২০২৪ সালে মাঙ্কি পক্সকে পাবলিক হেলথ ইমার্জেন্সি হিসেবে ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)। সে-বছরই কেরল এবং দিল্লি মিলিয়ে সারা ভারতের ৩০টি ঘটনা ঘটে। ভবিষ্যতেও যেকোনও সময় এই ভাইরাস থেকে বড়সড় জনবিপর্যয় হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সেদিক থেকে কার্যকর ওষুধ হাতে পাওয়া খুব জরুরি। আশা করছি, আমাদের আবিষ্কার পরবর্তীকালে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হবে এবং ভাইরাস-যুদ্ধে জয়ী হওয়ার জন্য মানব সভ্যতাকে নতুন হাতিয়ার দেবে।’