• বাঁচাল না ‘লা নিনা’ও, উষ্ণতম জানুয়ারিতে আশঙ্কা আগামীর
    এই সময় | ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • আশঙ্কাই সত্যি হলো। ২০২৪ ইতিহাসের উষ্ণতম বছরের তকমা পেয়েছিল আগেই। পরিবেশবিজ্ঞানীরা সতর্কবার্তা দিয়েছিলেন, ২০২৫ যদি উষ্ণতম বছর হিসেবে গণ্য না–ও হয়, তা হলেও ইতিহাসের সবচেয়ে গরম তিনটি বছরের মধ্যে থাকার সম্ভাবনা প্রবল। ঘটনা হলো, নতুন বছরের প্রথম মাসটি কাটার পর পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আবহাওয়ার যে রিপোর্ট আসতে শুরু করেছে, তাতে দুশ্চিন্তা বাড়ছে। রিপোর্ট বলছে, ২০২৫–এর জানুয়ারি হলো ইতিহাসের উষ্ণতম জানুয়ারি। শিল্প বিপ্লবের আগে অর্থাৎ ১৮৫০–এর আগে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা যত ছিল, এ বছর জানুয়ারির গড় তাপমাত্রা তার চেয়ে ১.৭৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি।

    প্রশান্ত মহাসাগরের পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করেছিল গত জুলাই থেকে। মহাসাগরের জলের উপরিতলের তাপমাত্রা তার আগে পর্যন্ত স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি গরম ছিল। এই অবস্থাকে আবহবিদরা ‘এল নিনো’ বলেন। ‘এল নিনো’ পরিস্থিতি তৈরি হলে দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চলের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকে। ২০২৪–এর শুরু থেকেই এমন হওয়ার ফল হাতেনাতে টের পেয়েছে দুনিয়া। ভয়াবহ তাপপ্রবাহে ঝলসেছে ভারতের প্রায় গোটাটাই। অন্তত তিন হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলেন হিট স্ট্রোকে।

    দক্ষিণবঙ্গে টানা ২২ দিন তাপপ্রবাহের পরিস্থিতি ছিল। কিন্তু জুলাইয়ের পর থেকে প্রশান্ত মহাসাগরের উপরিতল ঠান্ডা হতে শুরু করেছিল। এই পরিস্থিতি আবহাওয়া বিজ্ঞানের পরিভাষায় ‘লা নিনা’ নামে পরিচিত।

    এমন অবস্থায় গড় তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে নীচে নেমে যায়। জুলাই থেকে সমুদ্র ঠান্ডা হতে শুরু করলেও ‘ঠিকঠাক’ ভাবে ‘লা নিনা’ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল ডিসেম্বরে। তার পর আবহবিদরা মনে করতে শুরু করেছিলেন, ভারতে শীতের প্রাবল্য বাড়বে, শীত দীর্ঘায়িত হবে। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। ‘লা নিনা’ নিজের সুনাম রক্ষা করতে পারেনি। জানুয়ারির গড় তাপমাত্রা প্রাক–শিল্প বিপ্লবের চেয়ে ১.৭৫ ডিগ্রি বেশি থাকায় পরিবেশবিজ্ঞানীদের কপালে চিন্তার ভাঁজ বেড়েছে। ‘লা নিনা’ ব্যর্থ হওয়া প্রসঙ্গে বিজ্ঞানীদের একাংশের ধারণা, এ বার ‘লা নিনা’ পরিস্থিতি তৈরি হলেও সেটি তেমন শক্তিশালী হতে পারেনি। তাই আবহাওয়ার উপরে কোনও প্রভাবও পড়েনি।

    ২০২৫–এর জানুয়ারির আবহাওয়া সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সংগ্রহ করে তার বিশ্লেষণ করেছেন ইউরোপিয়ান সেন্টার ফর মিডিয়াম রেঞ্জ ওয়েদার ফোরকাস্টিংয়ের (ইসিএমআরডব্লুএফ) বিজ্ঞানীরা। জানুয়ারির আবহাওয়া নিয়ে কাজ করছেন কোপার্নিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিসও (সি–থ্রিএস)।

    আবহবিদদের একাংশের পর্যবেক্ষণ, ২০২৪–এ পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ভয়াবহ দাবানল দেখা দিয়েছিল। অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আমেরিকা এবং উত্তর আমেরিকার দাবানল ভয়াবহ জায়গায় পৌঁছেছিল। পরিবেশবিজ্ঞানীদের প্রাথমিক হিসেব বলছে, ক্যালিফোর্নিয়ার দাবানলের জেরেে বাতাসে মিশে যাওয়া কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ অন্তত ৯০ লক্ষ মেট্রিক টন। এ ছাড়াও যে পরিমাণে গ্রিন হাউজ় গ্যাস পরিবেশে মিশছে—আবহবিদদের সতর্কবার্তা—তার মূল্য দিতে হবে সবাইকেই।

  • Link to this news (এই সময়)