প্রদীপ চক্রবর্তী, চুঁচুড়া
টানা রিকশা থেকে ডবল ডেকার বাস। ট্রাম থেকে হাওড়া ব্রিজ। ব্রিটিশ আমলের স্টিম ইঞ্জিন থেকে এখনকার আধুনিক রেল ইঞ্জিন। পাঞ্জাবের স্বর্ণ মন্দির থেকে বিবেকানন্দ রক। ব্যান্ডেল গির্জা থেকে দক্ষিণেশ্বর কালীমন্দির। তাজমহল থেকে ভিক্টোরিয়া। অধুনা লুপ্ত থেকে বর্তমানের প্রায় দেড় হাজার আশ্চর্যজনক নিদর্শন রয়েছে তাঁর ঝুলিতে। কোনও রকম প্রশিক্ষণ ছাড়াই নিজের ইচ্ছেতেই দেশ ও রাজ্যের নানা স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিভিন্ন স্থাপত্য ও দ্রষ্টব্যকে রূপ দিয়েছেন অসমিয়া বাঁশ কেটে। ছোট, বড়, পাতলা ও মাঝারি বাঁশ দিয়ে সব কিছুকেই মডেলের মতো তৈরি করেছেন শিল্পী গণেশ ভট্টাচার্য।
চুঁচুড়া স্টেশন লাগোয়া চন্দননগরের হরিদ্রাডাঙায় গণেশের বাড়িতে এলে চোখ জুড়নো বাঁশের শিল্পে মোহিত হতে হয়। বড়দিনের আগে তৈরি হয়েছে ব্যান্ডেল গির্জা। অসমের বাঁশকে জলে পচিয়ে শিল্পের কাজে ব্যবহার করতে হয়। বাঁশকে কীট ও ঘুণপোকার হাত থেকে সুরক্ষিত রাখতে এক বিশেষ ধরনের বাঁশের ব্যবহার করেন শিল্পী। তবে বাঁশ দিয়ে তৈরি কোনও কিছুতেই পেরেক ও লোহার ব্যবহার নেই, রয়েছে আঠার ব্যবহার। পরিবেশ বান্ধব বাঁশের তৈরি হরেক রকমের জিনিস সবার কাছে সমাদৃত হয়েছে।
নিজের হাতে তৈরি বাঁশের তৈরি সামগ্রী বিক্রি করেই দিন গুজরান করেন বছর চল্লিশের শিল্পী। গণেশের কথায়, ‘২০ বছর আগে মাত্র ২৫০ টাকা পুঁজি নিয়ে বাঁশ দিয়ে নানা জিনিস তৈরির কাজ শুরু করি। আসামের বাঁশকে সরু করে কেটে নিয়ে চায়ের কাপ তৈরি করেছিলাম। সবাই কিনেছিল। তাতেই উৎসাহ বাড়ে। তারপর আস্তে আস্তে একের পর এক জিনিস করেছি। মানুষ কিনেছে। বাঁশ–শিল্পের সুবাদেই কলকাতায় বেশ কয়েকটি বারোয়ারি থিমের মণ্ডপ করেছি।’
গণেশ জানালেন, ‘এখন আমার স্বপ্ন ভারতে ১৮৫৩ সাল থেকে যে ট্রেন যাত্রা শুরু হয়েছিল, সেই ট্রেন–সহ ২০২৪ পর্যন্ত সর্বশেষ বন্দে ভারত।’ অতীত থেকে বর্তমান পর্যন্ত যত প্রকার ভারতের রেল ইঞ্জিনের মডেল রয়েছে, তা সংখ্যায় কমবেশি ১৬০-১৭০ হবে। ভারতের বিভিন্ন রেলের সংগ্রহশালায় কোথাও সম্পূর্ণ সংরক্ষণ নেই বলে জানান শিল্পী। ‘আমার বাসনা, এই পুরোনো থেকে নতুন, সব রকমের রেল ইঞ্জিন আমি বাঁশ দিয়ে নিজের হাতে বানিয়ে একটি সংগ্রহশালা করব। কেন্দ্র বা রাজ্য সরকারের এ ক্ষেত্রে কোনও সংরক্ষণ নেই। যদি সরকার বা রেল আগ্রহ দেখায়, তা হলে আমি চেষ্টা করব।’