• ধৃত জওয়ানের অ্যাকাউন্টে টাকা ঢোকে বিভিন্ন দেশ থেকে: সিবিআই
    এই সময় | ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • ভুয়ো নথি বানিয়ে তার ভিত্তিতে বাংলায় কেন্দ্রীয় বাহিনীতে বেআইনি নিয়োগ–চক্রের অন্যতম পান্ডা হিসেবে গ্রেপ্তার হওয়া জওয়ান মহেশ কুমার চৌধুরীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে বিভিন্ন দেশ থেকে টাকা ঢুকেছে বলে আদালতে দাবি করল সিবিআই। বুধবার আলিপুরে সিবিআইয়ের সেকেন্ড কোর্টে কেন্দ্রীয় ওই তদন্তকারী সংস্থা জানিয়েছে যে, উত্তর ২৪ পরগনার কামারহাটির মহেশের অ্যাকাউন্টে মিলেছে এক কোটি টাকা। বিচারক সুজিত কুমার ঝা–র প্রশ্ন, ধৃত কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান মহেশ চৌধুরী পাকিস্তানের নাগরিকদের ভারতীয় সেনা কিংবা আধা সামরিক বাহিনীতে চাকরি দিয়েছেন, এ রকম প্রমাণ কোথায়? বিচারকের মন্তব্য, ‘এ রকম অভিযোগ খুবই সিরিয়াস বিষয়।’

    বস্তুত, এই চক্র নিয়ে ২০২৩–এর ৮ অগস্ট এফআইআর হয়। তার পর কলকাতা হাইকোর্টে হওয়া যে মামলার জেরে সিবিআই এই তদন্ত শুরু করেছে, সেই মামলায় বলা হয়েছিল, বেআইনি নিয়োগের চক্রটি ভারতীয় সেনা ও আধা সামরিক বাহিনীতে পাকিস্তানিদের চাকরি দিয়েছে। এ দিন বিচারক প্রশ্ন করার পর মহেশের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকার পরিমাণ এবং সেখানে বিভিন্ন দেশ থেকে বিভিন্ন অঙ্কের টাকা ঢুকেছে বলে সিবিআই আদালতে জানায়।

    উত্তর ২৪ পরগনার কাঁকিনাড়ায় একটি কেন্দ্রীয় বাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং স্টোর ডিপো–তে কর্মরত জওয়ান মহেশ কুমার চৌধুরীকে সিবিআই গত শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারি গ্রেপ্তার করে।

    এ দিন আদালতে সিবিআই জানায় যে, ভুয়ো নথি তৈরি করে তার মাধ্যমে বেআইনি নিয়োগের এই চক্রটি দেশের সীমান্ত পেরিয়ে বিভিন্ন দেশে ছড়ানো এবং আন্তর্জাতিক ওই চক্রে সক্রিয় ভূমিকা রয়েছে মহেশের। সিবিআইয়ের বক্তব্য, তাদের দায়িত্ব হলো, কোনও বিদেশি নাগরিক ওই চক্রের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় বাহিনীতে চাকরি পেয়েছেন কি না, সেটা খুঁজে বার করা। সিবিআই আগেই জানিয়েছিল, অযোগ্য চাকরিপ্রার্থীদের জন্য পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তবর্তী জেলা এবং মাওবাদী প্রভাবিত বলে পরিচিত কয়েকটি জেলার ভুয়ো ডোমিসাইল সার্টিফিকেট বানিয়ে সেগুলো দিয়ে তাদের বেআইনি নিয়োগ করেছিল চক্রটি।

    বুধবার আদালতে অভিযুক্ত মহেশের আইনজীবী জানান, একটা প্রমান দেখানো হোক, যেখানে পাকিস্তানি কেউ চাকরি পেয়েছেন। মহেশের আইনজীবীর বক্তব্যে, তাঁর মক্কেল স্ত্রীর চিকিৎসা করাবেন বলে জমি বেচে পাওয়া এক কোটি টাকা ব্যাঙ্কে রেখেছেন। সিবিআই জানায়, পশ্চিমবঙ্গের বাইরে অনেকের বেআইনি ভাবে চাকরি হয়েছে। উত্তরপ্রদেশ, বিহারের অনেকের বেআইনি ভাবে কেন্দ্রীয় বাহিনীতে চাকরি হয়েছে তাঁদের পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা হিসেবে প্রতিপন্ন করে তৈরি জাল নথির ভিত্তিতে।

    সেই সব প্রার্থীর ঠিকানা বলে দেখানো হয়েছে এ রাজ্যের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা, যেখানে মহেশ থাকেন। এ রাজ্যের কাস্ট সার্টিফিকেট, শিক্ষার সার্টিফিকেট জাল করে কেন্দ্রীয় বাহিনীতে অনেককে চাকরির ব্যবস্থা করে দিয়েছে চক্রটি। ব্যারাকপুরের এক প্রশাসনিক আধিকারিকের সই জাল করে কিছু নথি বানানো হয়। এই চাকরির জন্য এক–এক জন চাকরিপ্রার্থী চার থেকে ছয় লক্ষ টাকা দিয়েছেন। ওই টাকা মহেশ কখনও সরাসরি নিয়েছেন, কখনও বা দালালদের মাধ্যমে নিয়েছেন বলে সিবিআইয়ের বক্তব্য।

    কেস ডায়েরিতে বেশ কিছু তথ্যের উল্লেখ করা হয়েছে বলে জানিয়ে সিবিআই এ দিন বিচারককে কেস ডায়েরি দেয়। ধৃত মহেশের অফিসের সিনিয়রদের কারও সঙ্গে চক্রটির যোগ ছিল কি না, সেটা খতিয়ে দেখছে সিবিআই। এ দিন দু’পক্ষের সওয়াল–জবাব শুনে মহেশ চৌধুরীকে বিচারক ৭ ফ্রেবুয়ারি পর্যন্ত সিবিআই–হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।

  • Link to this news (এই সময়)