• মর্গ থেকে দেহ ‘পাচার’, মানবাধিকার কমিশনের তদন্তেও কালপ্রিট সন্দীপ
    এই সময় | ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • এই সময়: বছর দুয়েক আগে আরজি কর হাসাপাতালে আচমকাই পাঁচটি দেহ ‘লোপাট’ হয়ে গিয়েছিল মর্গ থেকে। পরে দেখা গিয়েছিল, তৎকালীন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের অঙ্গুলিহেলনে ইএনটি বিভাগের একটি কর্মশালার জন্যে ময়নাতদন্তের আগেই মর্গ থেকে তুলে আনা হয়েছিল ওই পাঁচটি দেহ। সেই ঘটনায় সন্দীপের পাশাপাশি ইএনটি এবং ফরেন্সিক মেডিসিন বিভাগের তদানীন্তন দুই বিভাগীয় প্রধানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করল রাজ্য মানবাধিকার কমিশন। রাজ্যের মুখ্যসচিবকে কমিশন নির্দেশ দিয়েছে, এই তিন জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে তিন মাসের মধ্যে ‘অ্যাকশন টেকেন রিপোর্ট’ পাঠাতে হবে কমিশনে।

    এর ফলে সিবিআই, ইডি–র পরে মানবাধিকার কমিশনের স্ক্যানারেও চলে এলেন সন্দীপ। ২০২৩–এর জানুয়ারি মাসে আরজি করের ওই ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসে। সে সময়ে ইএনটি বিভাগে একটি কর্মশালায় স্নাতকোত্তর ডাক্তারি পড়ুয়াদের ‘এন্ডোস্কোপিক সাইনাস সার্জারি’ শেখানোর জন্যে পাঁচটি শবদেহের প্রয়োজন পড়েছিল।

    সাধারণত এমন ক্ষেত্রে ময়নাতদন্ত হয়ে যাওয়া দাবিদারহীন দেহই ব্যবহার করা হয়। কিন্তু তৎকালীন ইএনটি বিভাগের প্রধান ইন্দ্রনাথ কুণ্ডুর অনুরোধে সন্দীপ ফরেন্সিক মেডিসিন বিভাগকে নির্দেশ দেন তড়িঘড়ি পাঁচটি দেহ পাঠাতে। মর্গ থেকে জানানো হয়, পাঁচটি দেহ আছে, যেগুলি ময়নাতদন্তের পর পরিবারের অনুমতি নিয়ে পাঠানো যেতে পারে। কিন্তু বেপরোয়া সন্দীপ নির্দেশ দেন, ময়নাতদন্তের আগেই দেহগুলি পাঠাতে হবে।

    এতে বেঁকে বসেছিলেন ফরেন্সিক মেডিসিনের তৎকালীন বিভাগীয় প্রধান সোমনাথ দাস। সন্দীপ সরিয়ে দেন সোমনাথকে। নতুন বিভাগীয় প্রধান করা হয় প্রবীর চক্রবর্তীকে। তার পর আর দেহ হস্তান্তরে অসুবিধা হয়নি। এই ঘটনার খবর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত ও সম্প্রচারিত হওয়ার পরেই তদন্ত শুরু করে মানবাধিকার কমিশন। কমিশনের চোখে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন সন্দীপ, ইন্দ্রনাথ ও প্রবীর। সম্প্রতি ওই তিন জনের বিরুদ্ধে রাজ্য সরকারকে ব্যবস্থা নিতে বলেছে কমিশন। কমিশনের বক্তব্য, তাদের তদন্ত বিপথে চালিত করারও চেষ্টা করেছিলেন তিন অভিযুক্ত। এর মধ্যে সন্দীপ এখন জেলবন্দি, প্রবীর অবসর নিয়েছেন এবং ইন্দ্রনাথ বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজে ইএনটি–র বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কর্মরত।\

    এমন ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে, তা নিয়েও সতর্ক করেছে রাজ্য মানবাধিকার কমিশন। ৩৬ পাতার অর্ডারে কমিশন রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব নারয়ণস্বরূপ নিগমকে নির্দেশ দিয়েছে, অবিলম্বে সব হাসপাতালের সুপার ও বিভাগীয় প্রধানদের এবং মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষদের প্রতি এ নিয়ে সার্কুলার জারি করতে হবে—যাতে আর কোথাও কোনও কর্মশালা, সেমিনার কিংবা ক্লাসরুমের পঠনপাঠনে মর্গ থেকে এ ভাবে ময়নাতদন্তের আগে দেহ তুলে আনা না হয়। বিষয়টি মানবাধিকারের পরিপন্থী এবং মৃতদেহের প্রতি অবমাননাকর।

  • Link to this news (এই সময়)