ধর্মেও আছি, জিরাফেও আছি!
কলকাতা বুকফেয়ার সে সব ছাপিয়ে অনেক কিছুতেই আছে। বই তো আছেই, সঙ্গে ফুড স্টল, সেল্ফি, রাজনীতি, টলিউড সব কিছুরই ককটেল যেন। তাল মিলিয়ে ‘এই সময়’–এর স্টলেও বই আর বিনোদনের প্যাকেজ। বুধবার যেন ক্রিকেট আর সিনেমায় বুঁদ হয়ে থাকল চার নম্বর গেটের কাছে ‘এই সময়’–এর ১৯০ নম্বর স্টল।
আলোচনা করতে এসেছিলেন চিত্র পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়। কিন্তু সে পরিচয় দিলে এই সৃজিতকে চেনানো যাবে না। হতে চেয়েছিলেন ক্রিকেট লিখিয়ে। সেটা না হতে পারলেও বাইশ গজের পৃথিবী নিয়ে বায়োস্কোপের নির্দেশক মশাইয়ের কিন্তু জ্ঞানের অভাব নেই। সাংবাদিক অনির্বাণ ভট্টাচার্যের সঙ্গে আলাপচারিতায় সৃজিতের প্রতিটা কথায় ধরা পড়ল ক্রিকেট প্রেম, ক্রিকেটজ্ঞান।
আলোচনার বিষয় ছিল, ‘আইপিল চাই না ক্রিকেট।’ ক্রিকেট রোম্যান্সের ভক্তদের মতোই সৃজিতও সাদা পোশাকের লাল বলের ভক্ত। কিন্তু আইপিএল বন্ধ হয়ে যাক, এমন কথা তিনি ভাবতেও পারেন না। তাই বলে দিলেন, ‘বিরিয়ানি ভালোবাসলে কি ফুচকা পছন্দ কার যায় না? ফ্রায়েড রাইস খেলে কি ঝালমুড়ি খাওয়া যায় না?’
সোজা কথায়, আইপিএল নিয়ে কোনও ছুৎমার্গ নেই সৃজিতের। এখানে কিন্তু ‘সত্যি বলে সত্যি কিছু নেই’–এর মতো ব্যঞ্জনার ধারে–কাছ দিয়ে হাঁটেননি সৃজিত। তাঁর সোজাসাপ্টা, ‘আইপিএলকে সমর্থন করার অনেক কারণ আছে। ভারতীয় ক্রিকেটে অনেক ক্রিকেটার উপহার দিয়েছে আইপিএল। তবে আমি সবার আগে এই বলব, আইপিএল ভারতীয় ক্রিকেটারদের সবচেয়ে বেশি করে যা দিয়েছে, তা হলো আর্থিক নির্ভরতা।’
কথায় বলে ঢেঁকি স্বর্গে গিয়েও ধান ভানে। সৃজিত যে বাইশ গজের সঙ্গে বায়োস্কোপকে মেলালেন অনায়াসে। তাঁর বক্তব্য, ‘আইপিএল ক্রিকেটারদের হাতে টাকা দিচ্ছে, এ কথা তো সত্যি। টাকার তো দরকার আছে। আমাদের ইন্ডাস্ট্রির দিকে দেখুন। তুলসী চক্রবর্তী, কামু মুখোপাধ্যায়ের মধ্যে অভিনেতারা বিনা চিকিৎসায় মারা গিয়েছেন। ক্রিকেটে বিনোদ কাম্বলির কথাই ধরুন। সব মিলিয়ে আইপিএলের প্রয়োজন আছে।’
শুধু অর্থের প্রয়োজনেই আইপিএল চাইছেন এমন নয়। সৃজিতের সংযোজন, ‘ভারতীয় ক্রিকেটকে অসংখ্য ক্রিকেটার দিয়েছে আইপিএল। যাকে এখন বিশ্বের সেরা পেসার বলা হচ্ছে, সেই বুমরার উৎপত্তি আইপিএল থেকে। আবার যদি সাম্প্রতিক অস্ট্রেলিয়া সিরিজ়ে ভারতীয় টিমের সবচেয়ে লড়াকু চরিত্রের কথা বলি, তা হলে বলতে হবে নীতীশ কুমার রেড্ডির কথা। সানরাইজার্স হায়দরাবাদের হয়ে ওর উত্থান।’
বাংলার হালফিলের পরিচালকদের সঙ্গে ক্রিকেটারদের মধ্যে কাকে কী ভাবেন সৃজিত? বলে গেলেন, ‘কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় ‘দ্রাবিড়’, শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ‘সচিন’, রাজ চক্রবর্তী ‘যুবরাজ’, কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায় ‘ব্রায়ান লারা।’ নিজের তুলনা করছেন জাক কালিসের সঙ্গে।
স্টলে বিকেলের আড্ডা শুরু হয়েছিল খেলা দিয়েই। ‘এই সময়’ পত্রিকার ক্রীড়া বিভাগের চার সাংবাদিক তুলে ধরলেন তাঁদের সাংবাদিকতার বিশেষ অভিজ্ঞতার কথা। সব মিলিয়ে মেলায় মিশল খেলা।