• পোর্টাল বন্ধ দীর্ঘদিন, ২ লক্ষ মানুষের বার্ধক্যভাতা অমিল
    এই সময় | ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • প্রশান্ত ঘোষ, ভাঙড়

    চিত্র ১: ভাঙড়ের চালতাবেড়িয়া অঞ্চলে দুয়ারে সরকার ক্যাম্প। ওই ক্যাম্পে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, শিক্ষাশ্রী, কন্যাশ্রী, স্বাস্থ্যসাথী, কোনও ক্যাম্পেই সে ভাবে ভিড় নেই। যত ভিড় বার্ধক্যভাতার কাউন্টারে। কারণ? দীর্ঘদিন ধরে মিলছে না এই ভাতা। তাই নতুন করে আবেদনপত্র হাতে নিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে কাদিম আলি মোল্লা, মোজাম্মেল মোল্লা, আরতি করালের মতো মানুষরা। কাদিমের বক্তব্য, ‘গত তিন-চার বছর ধরে বারবার হাঁটছি, কখনও পঞ্চায়েত প্রধানের কাছে, কখনও আবার বিডিও–র কাছে। কিছুতেই মিলছে না বার্ধক্যভাতা।’

    চিত্র ২: ভাঙড়–১ ব্লক অফিস কার্যালয়। বিডিও–র চেম্বারের বাইরে বেশ কিছু মানুষের জটলা। কেউ নেবেন ইনকাম সার্টিফিকেট, কারও দরকার স্বাস্থ্যসাথী কার্ড। আবার কেউ চান বার্ধক্যভাতা। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে দাঁড়িয়ে অরুণ চক্রবর্তী। ভাঙড়ের বাসিন্দা অরুণের বক্তব্য, তিনি পুজোপাঠ করে জীবন চালান, অথচ পুরোহিত ভাতা জোটেনি। এখন তাঁর বয়স ৬৫ বছর। পাঁচ বছর ধরে লাগাতার আবেদন করেও বার্ধক্যভাতা জোটেনি বলে বিডিও–র সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন।

    এই ছবি শুধু ভাঙড়–১ কিংবা ২ নম্বর ব্লকের নয়। গত কয়েক বছর ধরে বার্ধক্যভাতা অমিল গোটা রাজ্য জুড়েই। অন্য সমস্ত প্রকল্পের অনুদান মিললেও কোনও এক অজানা কারণে বার্ধ্যক্যভাতা পাচ্ছেন না লক্ষ লক্ষ উপভোক্তা। শুধুমাত্র ভাঙড়–২ ব্লকেই ৬৭০০ আবেদন জমা হয়ে পড়ে আছে। দীর্ঘদিন আগে আবেদন করেও আজও ভাতা চালু হয়নি। গত দশ মাসে প্রায় ১৬০০ আবেদন জমা পড়ে রয়েছে। যে আবেদন আবার সরকারি পোর্টালে তোলা যায়নি, অর্থাৎ বার্ধক্যভাতার পোর্টালে নথিভুক্ত হয়নি। কারণ, ২০২৪ সালে লোকসভা নির্বাচনের সময় সরকার বার্ধক্যভাতার পোর্টাল বন্ধ করে দিয়েছিল। সেই পোর্টাল না–খোলায় নতুনদের আবেদন সরকারি ভাবে গৃহীত হচ্ছে না। গোটা দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলা জুড়ে এই সঙ্কট প্রকট হয়ে উঠেছে।

    জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, গোটা জেলায় ২৯টি ব্লকের প্রায় ২ লক্ষ মানুষ আবেদন করলেও বার্ধক্যভাতা পাচ্ছেন না। জীবনতলার বাসিন্দা সৃষ্টিধর পাল বলেন, ‘তপশিলি জাতি ও উপজাতিরা ‘তপশিলি বন্ধু’ এবং ‘জয় জহওর’–এর মাধ্যমে ভাতা পাচ্ছেন। ১৮-৬০ বছরের যে সমস্ত মহিলা লক্ষ্মীর ভাণ্ডার পাচ্ছেন, তাঁদের বয়স ৬১ হয়ে গেলেই সরাসরি মিলছে বার্ধক্যভাতা। শুধু সমস্যা হচ্ছে ‘জেনারেল কাস্ট’ পুরুষদের। এর মধ্যে স্বস্তির খবর, রাজ্য জুড়ে এখন দুয়ারে সরকার ক্যাম্প চলছে। এ বার দুয়ারে সরকার ক্যাম্পে সরকারি বার্ধক্যভাতার জন্য আলাদা কাউন্টার খোলা হয়েছে। ইতিমধ্যে প্রতি ব্লকে গড়ে ৫০০ থেকে ৭০০ মানুষ নতুন করে বার্ধক্যভাতার জন্য আবেদন করেছেন। সেই আবেদন প্রথমে ভেরিফাই হবে এবং পরে অ্যাপ্রুভড হবে। তবেই মানুষ ভাতা পাবেন।

    তবে এর মধ্যে কয়েক হাজার মানুষ বার্ধক্যভাতা পাচ্ছেন না বলে মুখ্যমন্ত্রীর ‘দিদিকে বলো’–তে সরাসরি ফোন করে সুফল পেয়েছেন। ভাঙড়–২ ব্লকে সরাসরি দিদিকে বলো–তে অভিযোগ জানানোর পরে এক হাজার মানুষের ভাতা চালু হয়েছে। জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘লোকসভা ভোটের জন্য এত দিন এই পোর্টাল বন্ধ ছিল। এ বার পোর্টাল খুলে দেওয়া হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, খুব তাড়াতাড়ি সব নাম নথিভুক্ত হয়ে যাবে।’

  • Link to this news (এই সময়)