মহম্মদ মহসীন, উলুবেড়িয়া
‘এ বার কী হবে আমার? কী ভাবে পরীক্ষায় বসব? সব তো পুড়ে ছাই হয়ে গেল...’
শরীরের বিভিন্ন অংশে এখনও পুড়ে যাওয়ার দগদগে চিহ্ন। তার পরিবারের বাকিরা হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে। পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে বাড়ি–ঘরদোর, মাধ্যমিকের অ্যাডমিট কার্ড থেকে শুরু করে আধার কার্ড, ব্যাঙ্কের পাসবই, সব জরুরি নথি। আহত হলেও বাড়িতে থাকার মতো অবস্থায় রয়েছে একমাত্র রেনুকা পারভিন।
আচমকা আগুন গ্রাস করে নিয়েছে তাগের দোতলা বাড়ি। প্রাণে বেঁচে গেলেও দুশ্চিন্তায় কাতর কিশোরীর এখন একটাই প্রশ্ন, মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসতে পারবে তো সে? ইতিমধ্যেই অবশ্য প্রশাসনের তরফে আশ্বাস মিলেছে, ওই কিশোরীর যাতে পরীক্ষায় বসতে কোনও অসুবিধে না হয়, সে দিকে নজর দেওয়া হবে।
বুধবার বাগনান থানার হাল্যান গ্রামের একটি বাড়িতে আচমকা আগুন ছড়িয়ে পড়ে। ১৬–১৭ বছরের ইশরানা পারভিন ও রেনুকার সঙ্গে গুরুতর ভাবে অগ্নিদগ্ধ হন ৫২ বছরের আকতার আলি এবং ৪১ বছরের রিয়াজুল আলম। রেনুকা ছাড়া বাকি তিন জন আশঙ্কাজনক অবস্থায় উলুবেড়িয়া শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। প্রাথমিক চিকিৎসার পর রেনুকাকে আর হাসপাতালে যেতে হয়নি ঠিকই, কিন্তু এই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে তাদের ইটের দেওয়াল, টিন ও টালির ছাউনি দেওয়া দোতলা বাড়ি ভস্মীভূত হয়ে গিয়েছে।
ওই পরিবারের এক সদস্য শেখ আরিফুল বলেন, ‘বুধবার ভোরে বাড়ির সকলে ঘুমিয়ে ছিলেন। হঠাৎ ওই বাড়িতে আগুন দেখতে পান আমাদের পরিবারের এক সদস্য। তখন আগুন বাড়ির অনেকটাই গ্রাস করে নিয়েছে। বাড়ি থেকে বেরনোর সময় অগ্নিদগ্ধ হয়ে যায় আমাদের পরিবারের চার জন সদস্য। বাড়িতে গ্যাস সিলিন্ডারের পাশাপাশি কয়েকটি উনুনও আছে। আগুনের দাপটে একটি গ্যাস সিলিন্ডার ফেটে যায়।’
বাড়ির লোকের চিৎকারে প্রতিবেশীরা বেরিয়ে আসেন। তাঁরা নিজেদের মতো করে আগুন নেভানোরও চেষ্টা করেন। এলাকার বাসিন্দা শেখ মসিয়ার রহমান বলেন, ‘ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি, আগুনের তীব্রতা অনেক বেশি। স্থানীয়রা প্রথমে বাগনান থানায় খবর দেন। সেখান থেকে দমকলকে খবর দেওয়া হয়। দমকলের দু’টি ইঞ্জিন নিয়ে কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছন। কিন্তু আগুনের তীব্রতা এতটাই ছিল যে, তাঁদের পক্ষে আগুন নেভানো সম্ভব হয়নি।’
উলুবেড়িয়া অগ্নিনির্বাপক দপ্তরের আধিকারিক সৌমিত্র হালদার অবশ্য জানিয়েছেন, যে বাড়িতে আগুন লেগেছে, সেখানে দমকলের গাড়ি প্রবেশ করতে পারেনি। তখন দমকলের অন্য এক বিশেষ যন্ত্র নিয়ে গিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করা হয়। প্রায় দু ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন আয়ত্তে আনা সম্ভব হয়। তবে আগুন লাগার সঠিক কারণ কী, সেই বিষয়ে দমকলের আধিকারিকরা কিছু জানাতে পারেননি। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই বাড়ির এক সদস্য আকতার আলি হাল্যান হাইস্কুলের কাছে ভুট্টা বিক্রি করেন। তাঁর একটি ছোট্ট গ্যাস সিলিন্ডার ছিল, যেটি কামরার মধ্যেই থাকত। সেটি ফেটে গিয়েও আগুন লেগে থাকতে পারে।
আগুন লাগার খবর পেয়ে উলুবেড়িয়ার মহকুমা শাসক মানসকুমার মণ্ডল বাগনান দু’নম্বর ব্লকের বিডিওকে ঘটনাস্থলে যেতে বলেন। এসডিওর নির্দেশে বাগনান দু’নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি প্রিয়জিৎ নন্দী, সংশ্লিষ্ট ব্লকের বিডিও নেহাল আহমেদ, হাল্যান গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান শেখ মাসুদ ঘটনাস্থলে পৌঁছন। পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি প্রিয়জিৎ নন্দী বলেন, ‘দুর্গতদের রান্না করা খাবার দেওয়ার পাশাপাশি হাঁড়ি-বাসন, চাল, ডাল, আনাজ দেওয়া হয়েছে। দেওয়া হয়েছে কম্বল, জামাকাপড়ও। পাশের একটি কমিউনিটি হলে তাঁদের থাকারও ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়া মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীকে সমস্ত বই দেওয়া হয়েছে বলেও জানান বিডিও নেহাল আহমেদ।