বিজেপি-বিরোধী ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চের শরিক তৃণমূল কংগ্রেস বা সমাজবাদী পার্টি আগেই প্রশ্ন তুলেছে কংগ্রেসের ভূমিকা নিয়ে। এ বার ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চের কার্যকারিতা নিয়ে সরব হল আর এক শরিক দল সিপিআই-ও। কলকাতায় দলের একক সমাবেশ থেকে সিপিআইয়ের কেন্দ্রীয় ও রাজ্য নেতৃত্ব ‘ইন্ডিয়া’র নিষ্ক্রিয়তার জন্য কংগ্রেসের মনোভাবকেই দায়ী করলেন।
পাঁচ বছর পরে কলকাতায় একক শক্তিতে সমাবেশ ডেকেছিল সিপিআই। ভারতে কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠার শতবর্য উপলক্ষে ডাকা রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে বুধবারের সমাবেশে কলকাতা এবং বেশ কিছু জেলা থেকে ভিড় জমিয়েছিলেন সিপিআইয়ের কর্মী-সমর্থকেরা। সেই সমাবেসেই দলের সাধারণ সম্পাদক ডি রাজা বলেছেন, ‘‘লোকসভা নির্বাচনের পরে ‘ইন্ডিয়া’র নেতা, কংগ্রেসের সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে একটা বৈঠকও ডাকেননি। কোনও সমন্বয় নেই। নির্দিষ্ট পরিকল্পনা, কর্মসূচি হচ্ছে না। শুধু ভোটের সময় এলে জোটের কথা হবে? বড় দল হিসেবে দায়িত্ব তো কংগ্রেসকে নিতে হবে।’’ বিজেপির মোকাবিলায় বাম ঐক্যকে শক্তিশালী করার ডাক দিয়ে রাজার মন্তব্য, ‘‘এই দেশটা আরএসএস বা বিজেপির সম্পত্তি নয়! দেশ আমাদের। বিজেপিকে হটিয়ে দেশ রক্ষা করার দায়িত্ব বামপন্থীদের নিতে হবে।’’
সিপিআইয়ের রাজ্য সম্পাদক স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় আরও চাঁছাছোলা ভাষায় সমাবেশে বলেছেন, ‘‘কংগ্রেসের দয়ার জন্য নতজানু হয়ে বসে থাকলে চলবে না! কংগ্রেস যুক্তফ্রন্ট বোঝে না। রাজার দল! কংগ্রেসের কারণে ‘ইন্ডিয়া’ জোট ভেঙে যাচ্ছে। রাহুল গান্ধীর নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।’’ দলের কেন্দ্রীয় সম্পাদক পল্লব সেনগুপ্তের মন্তব্য, ‘‘কংগ্রেস নেতাদের অহং বোধের জন্য হারানো গেল না মোদী সরকারকে!’’ দেশে ক্ষমতায় বসে বিজেপি যা করছে, এ রাজ্যের সরকারে থেকে তৃণমূল কংগ্রেসও তা-ই করছে বলেও সরব হয়েছেন সিপিআই নেতারা। বাম শিবিরের একাংশের মতে, ‘ইন্ডিয়া’য় তৃণমূলের সঙ্গে থাকায় ‘দিল্লিতে দোস্তি, বাংলায় কুস্তি’র যে আক্রমণ বিজেপি করে থাকে, সিপিএমের মতো সেই অস্বস্তিও কাটাতে চাইছেন সিপিআই নেতৃত্ব।
নাম না-করে সিপিএমকেও এ দিন মৃদু হুঁশিয়ারি দিয়েছেন স্বপন। তাঁর মন্তব্য, ‘‘যে ভাবে ৩৪ বছর বামফ্রন্ট চালিয়েছেন, সেই ভাবেই এখনও চালাতে চাইলে ভুল করবেন! বিজেপি ও তৃণমূলকে হারানোর লক্ষ্যে আমরা পৌঁছতে পারব না তা হলে। বাম ঐক্য দরকার। মানুষের থেকে আমরা বিচ্ছিন্ন হয়েছি, তাঁদের কাছে আমাদের পৌঁছতে হবে।’’ সিপিআইয়ের তরফে এ দিন ঘোষণা করা হয়েছে, দলের দুই সাংসদ ছত্তীসগঢ়ে গিয়ে মাওবাদীদের সঙ্গে আলোচনা করে (তাদের মূল স্রোতে ফেরানো সংক্রান্ত) লোকসভার স্পিকারকেও রিপোর্ট দেবেন।