শিল্পকেন্দ্রিক সম্মেলন হলেও, বিশ্ব বাংলা বাণিজ্য সম্মেলনের (বিজিবিএস) উদ্বোধনী মঞ্চে সস্ত্রীক ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনের উপস্থিতি নজর কাড়ল রাজনৈতিক মহলের। সেই মঞ্চ থেকে একযোগে কাজ করার আহ্বানও জানিয়েছেন হেমন্ত। পর্যবেক্ষক শিবিরের একাংশের মতে, ইন্ডিয়া মঞ্চের মধ্যে যখন ডামাডোল চলছে, তখনই সেই মঞ্চের দুই শরিকের মধ্যেকার এই সমীকরণ তাৎপর্যপূর্ণ।
অষ্টম পর্যায়ের বিজিবিএস-এ আগেই সরকারি ভাবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রীকে। এ দিনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্ত্রী কল্পনাকে নিয়ে পৌঁছে যান হেমন্ত। অনুষ্ঠান চলাকালীন পাশে বসা হেমন্ত এবং কল্পনার সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ কথাও হয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। পরে নিজের ভাষণে হেমন্ত বলেন, ‘‘ঝাড়খণ্ডের অর্ধেক এলাকা পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে এক দেওয়ালে অবস্থিত। অনেক কিছুর মিল রয়েছে দুই রাজ্যের মধ্যে। দুই রাজ্যকে ভাগ করাও যায় না বহু বিষয়ে। মমতাজি (বন্দ্যোপাধ্যায়) অনেক চেষ্টা করছেন। একসঙ্গে কাজ করা গেলে দেশের উন্নয়নে শরিক হয়ে সহযোগিতা করা যাবে।’’ মমতাও ভাষণে হেমন্তের উদ্দেশে জানান, পুরুলিয়ায় পরিকাঠামোর অনেক কাজ হচ্ছে। তৈরি হচ্ছে আর্থিক করিডর। রঘুনাথপুরে প্রায় ৭২ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের কাজ চলছে। আদিবাসী প্রধান এলাকাগুলির মানুষের উন্নয়নে হেমন্ত যে খুশি হবেন, সেই আশাও প্রকাশ করেন মমতা।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ মনে করিয়ে দিচ্ছেন, এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) হাতে গ্রেফতার হওয়ার পরে প্রতিবেশী মুখ্যমন্ত্রী মমতাকে পাশে পেয়েছিলেন হেমন্ত। তখন কেন্দ্রীয় সংস্থাকে দিয়ে বিরোধী কন্ঠ রোধ করার অভিযোগ তুলে কেন্দ্রের মোদী সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা শোনা গিয়েছিল মমতার বক্তব্যে। ঝাড়খণ্ডে গত বিধানসভা নির্বাচনের সময় মমতার সঙ্গে আলোচনা করেছিলেন সেখানকার প্রার্থী কল্পনা। সেই ভোটে জয়লাভের পরে হেমন্তের শপথগ্রহণের অনুষ্ঠানে গিয়েওছিলেন মমতা। সব মিলিয়ে এ দিন বাণিজ্য সম্মেলনের মঞ্চে দুই প্রতিবেশী নেতার মধ্যেকার রসায়নকে ইঙ্গিতপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ। বিশেষ করে ইন্ডিয়া মঞ্চের শরিকদের মধ্যে যখন নানাবিধ সমীকরণের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে সাম্প্রতিক সময়ে।
এ দিনের মঞ্চে ছিলেন রিলায়্যান্স-কর্তা মুকেশ অম্বানী-সহ শিল্প-কর্তাদের অনেকে। সকলের উদ্দেশে হেমন্ত বলেন, ‘‘ঝাড়খণ্ডে ৪০%-এর বেশি খনিজ পদার্থ রয়েছে। দেশের অর্থনীতিতে সেই রাজ্য বড় ভূমিকা নেয়। এ ছাড়াও বস্ত্র-সহ অন্যান্য শিল্প এবং তসরের বিপুল উৎপাদন হয় সেখানে। আপনারা আমাদের রাজ্যেও আসুন, একসঙ্গে কাজ করতে পারব।’’