উত্তর ২৪ পরগনার দত্তপুকুরে যুবকের মুন্ডুহীন দেহ উদ্ধারের ঘটনায় দু’জনকে গ্রেফতার করল পুলিশ। নিহত যুবকের পরিচয় সম্পর্কেও নিঃসংশয় হওয়া গিয়েছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর।
পুলিশ জানিয়েছে, নিহত যুবকের নাম নাম হজরত লস্কর। তিনি আদতে দক্ষিণ ২৪ পরগনার লক্ষ্মীকান্তপুরের বাসিন্দা। বৃহস্পতিবার হজরতের পরিবারের লোকেরা বারাসাত মেডিকেল কলেজের মর্গে এসে দেহ শনাক্ত করেন। হজরতের দেহ চিহ্নিত হওয়ার পর পুলিশ তাঁর মামাতো ভাই ওবায়দুল গাজিকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। পরে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার করা হয়েছে গাজির স্ত্রী পূজা দাসকেও।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জেনেছে, নিহত হজরতের একাধিক বিয়ে। শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, তিনি বরাহনগরের ঝুপড়ি এলাকায় থাকতেন। চুরি, ছিনতাইয়ের মতো অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগও রয়েছে হজরতের বিরুদ্ধে। গাইঘাটা থানায় গত ২ ফেব্রুয়ারি ‘মিসিং ডায়েরি’ করেছিল তাঁর পরিবার। শেষ পর্যন্ত বাঁ হাতের হৃদয়চিহ্ন, ‘বি’ ট্যাটু দেখে হজরতের দেহ শনাক্ত করেন স্ত্রী এবং পরিবারের সদস্যেরা।
পুলিশ জানতে পেরেছে, পূজার সঙ্গে হজরতের পুরনো সম্পর্ক ছিল। সেই সম্পর্ক থাকাকালীনই পূজা বিয়ে করেছিলেন গাজিকে। বিয়ের পরও পূজার সঙ্গে হজরতের সম্পর্ক ছিল বলে পুলিশের একটি সূত্র জানাচ্ছে। তদন্তকারীরা মনে করছেন, সেই ঘটনার জেরে গাজির মনে তৈরি হওয়া আক্রোশের জেরেই এই খুন। কিন্তু হজরতের খুনে পূজা কেন এই ঘটনায় সহযোগিতা করেছিলেন তা এখনও পর্যন্ত পুলিশের কাছে স্পষ্ট নয়। তবে খুনের আরও দু’টি কারণ থাকতে পারে বলেও মনে করছে পুলিশ। প্রথমত, চুরি-ছিনতাই করে উপার্জিত টাকাপয়সার ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে সমস্যা। দ্বিতীয়ত, সম্প্রতি পুলিশের টিপারের (চর) কাজ করছিলেন হজরত। তার ফলে বেশ কয়েক জন দুষ্কৃতী গ্রেফতার হয়েছিলেন। সে কারণে দলেরই একাংশ মামাতো ভাইকে কাজে লাগিয়ে খুন করাতে পারে তাঁকে।
প্রসঙ্গত, গত সোমবার ভোরে দত্তপুকুর থানার ছোট জাগুলিয়ার মালিয়াকুর বাজিতপুর এলাকার একটি ফাঁকা জমিতে হজরতের মুন্ডুহীন দেহ দেখতে পেয়েছিলেন স্থানীয় কৃষকেরা। গোটা শরীরে ক্ষতচিহ্ন ছিল। উপড়ে নেওয়া হয়েছিল যৌনাঙ্গ। মৃতের হাত-পা বাঁধা ছিল। ঘটনাস্থল থেকে রক্তমাখা মদের গ্লাস, চিপ্সের প্যাকেটও খুঁজে পায় পুলিশ। শুরু হয় কাটা মুন্ডুর খোঁজ। তার জন্য বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি হয়েছে। খালে ডুবুরি নামানো হয়। কিন্তু কাটা মুন্ডুর হদিস মেলেনি। কিন্তু নিহতের বাম হাতে দুটো উল্কি ছিল— প্রথমটি, ‘লভ সাইন’ (হৃদয়চিহ্ন)। দ্বিতীয়টি ইংরেজি হরফে লেখা ‘বি’। জট খুলল সেই সূত্র ধরেই।