বিচারাধীন বন্দিদের মতো এ বার কোনও মামলায় যাতে পুলিশ অফিসার বা পুলিশকর্মীরা ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে সাক্ষ্য দিতে পারেন, সেই ব্যবস্থা করতে চলেছে রাজ্য পুলিশ। সূত্রের খবর, এই ব্যবস্থা চালু হলে সশরীরে আদালতে হাজির না হয়ে নিজের ইউনিটে বসেই কোনও ঘটনার সাক্ষ্য দিতেপারবেন সংশ্লিষ্ট অফিসার বা পুলিশকর্মী। নতুন এই ব্যবস্থার নাম দেওয়া হয়েছে ‘ই-সাক্ষ্য’। এটি চালু করার উদ্দেশ্যে রাজ্য পুলিশের সমস্ত থানার সঙ্গে আদালতের ভিডিয়ো সংযোগ করার প্রস্তাব ভবানী ভবনের তরফে নবান্নে পাঠানো হয়েছে। সেখানে রাজ্যের বিভিন্ন আদালত-সহ ৬০০টি ইউনিটে এই ব্যবস্থা চালু করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
কেন এই ব্যবস্থা চালু করতে চাইছেন রাজ্য পুলিশের কর্তারা? অভিযোগ, একাধিক ঘটনার ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, বেশির ভাগ সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে ব্যস্তথাকার কারণে আদালতে হাজির হয়ে মামলায় সাক্ষ্য দিতে পারেন না পুলিশ অফিসার বা পুলিশকর্মীরা।কোনও ক্ষেত্রে সাক্ষ্য দিতে আবার দূরের জেলা থেকে নির্দিষ্ট আদালতে আসতে হয় তাঁদের। এ ভাবে আসতে গিয়ে বিচার পর্বের একটি দিন নষ্ট হলে গোটা বিচার প্রক্রিয়াই বিলম্বিত হয়। সেই কারণে পুলিশের শীর্ষ কর্তারা চাইছেন, ভিডিয়োকনফারেন্সের মাধ্যমে সাক্ষ্য দানের ব্যবস্থা চালু করে বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করতে। তাঁদের মতে, এতে এক দিকে যেমন সময় বাঁচবে, তেমনই আর্থিক দিক থেকেও লাভবান হবে রাজ্য প্রশাসন।
ভবানী ভবনের তরফে নবান্নে পাঠানো প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ‘ই-সাক্ষ্য’ ব্যবস্থায় সবার আগে থানার একটি ঘরকে সাক্ষ্য দানের জন্য নির্দিষ্ট করতে হবে।ওই ঘরের সঙ্গে আদালতের ভিডিয়ো সংযোগ থাকবে। পাশাপাশি, সংশ্লিষ্ট মামলার সাক্ষী যে পুলিশ অফিসার বা কর্মী, তাঁকে শনাক্তকরবেন ওই থানার আইসি বা ওসি। সাক্ষ্য দান চলাকালীন ওই ঘরে যাতে অন্য কেউ না থাকেন, তার জন্য পুরো ঘরকে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনতে হবে।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি উত্তর দিনাজপুরের আদালত থেকে জেলে যাওয়ার পথে পুলিশকর্মীদের গুলি করে পালিয়ে গিয়েছিল এক বিচারাধীন বন্দি। পরে অবশ্য সে পুলিশের গুলিতে মারা যায়। ওই ঘটনার তদন্তে উঠে আসে, আদালত চত্বরেই ওই বিচারাধীন বন্দিকে বন্দুক সরবরাহ করেছিল আর এক দুষ্কৃতী। সেই ঘটনার পরেইবিচারাধীন বন্দিদের আদালতে সশরীরে হাজির না করে ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে পেশ করানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। গোটা রাজ্য জুড়ে আপাতত এই কাজ চলছে। প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, বর্তমানে ৭০ শতাংশ ক্ষেত্রেই বিচারাধীন বন্দিদের আর আদালতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছেনা। বদলে তাঁদের বিচারকের সামনে হাজির করানো হচ্ছে ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে। রাজ্য পুলিশের এক কর্তা জানান, ১০০ শতাংশ বিচারাধীন বন্দিকেই যাতে ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে বিচারকের সামনে হাজির করানো যায়, আদালতের সঙ্গে আলোচনা করে সেই চেষ্টা চলছে।