মুক্ত মঞ্চ করতে না দেওয়া নিয়ে বিতর্ক চলছিলই। এ বার নতুন সংযোজন বইমেলায় চিত্রশিল্পীদের জায়গা না পাওয়া। অভিযোগ, বহু দশক ধরে লিটল ম্যাগাজ়িন চত্বরের গা ঘেঁষে বসা চিত্রশিল্পীদের এ বার বইমেলার মাঠে বসতেই দেয়নি পাবলিশার্স অ্যান্ড বুক সেলার্স গিল্ড। গিল্ডের যুক্তি, চিত্রশিল্পীরা রাস্তায় বসে ছবি আঁকেন। বিদ্যুতের সংযোগ নিয়ম মেনে নেন না। আগুন লেগে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। কিন্তু গিল্ডের এই অভিযোগ মানতে রাজি নন চিত্রশিল্পীদের অনেকেই। তাঁদের পাল্টা দাবি, তাঁরা বসার জায়গার ভাড়া দেন না বলেই হয়তো গিল্ড তাঁদের বসতে দেয়নি। অনেকে আবার এ-ও মনে করছেন, চিত্রশিল্পীরা আর জি কর-কাণ্ড নিয়ে বইমেলায় বসে ছবি আঁকতে পারেন, এই আশঙ্কাও হয়তো কাজ করেছে তাঁদের জায়গা না দেওয়ার পিছনে।
‘চিত্রশিল্পী ও লিটল ম্যাগাজ়িন ওয়েলফেয়ার সোসাইটি’র সম্পাদক মুন্না আহমেদ জানালেন, এ বছর যে তাঁদের বসতে দেওয়া হবে না, গিল্ড থেকে তেমনই আভাস পেয়েছেন তাঁরা। মুন্না বলেন, ‘‘এ বারই প্রথম আমাদের কোনও জায়গা দেয়নি গিল্ড। প্রতি বার বইমেলায় দুশো থেকে আড়াইশো শিল্পী এসে ছবি আঁকেন। বিশেষত, দুঃস্থ শিল্পীদের এই সময়ে একটু-আধটু রোজগার হয়। গিল্ড-কর্তারা ইতিমধ্যেই ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, এ বছর আর কিছু হবে না। শুনেছি, বিনা ভাড়ায় গিল্ড কাউকে আর জায়গা দেবে না। সেটা ওরা খোলাখুলি আমাদের জানালে আমরা ভাড়ার অঙ্ক নিয়ে আলোচনায় বসতে পারি।’’
গিল্ডের সভাপতি ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, চিত্রশিল্পী কিংবা হস্তশিল্পের ব্যবসায়ীরা বিদ্যুতের সংযোগ নিয়ম মেনে নেন না। গত বছর ওই জায়গায় আগুন লেগেছিল। এই প্রসঙ্গে মুন্নার বক্তব্য, ‘‘আমাদের অন্যের থেকে বিদ্যুতের সংযোগ নিতে হয়। তবে, সেটা হুকিং নয়। যা আলো দেওয়া হয়, তাতে ছবি আঁকা যায় না। গত বছরের যে অগ্নিকাণ্ডের কথা বলা হচ্ছে, সেই ঘটনার জন্য আমরা দায়ী নই। ঝিলের ধারে যেখানে শিল্পীরা বসেন, সেখানে প্রচুর গাছ আছে। শুকনো পাতায় কোনও ভাবে আগুন লেগেছিল। সেই দায় আমাদের উপরে চাপাতে চাইছে গিল্ড।’’
এরই সঙ্গে মুন্নার আরও দাবি, ‘‘আমাদের ধারণা, গিল্ড আশঙ্কা করছে যে, আর জি কর-কাণ্ড নিয়ে শিল্পীরা ছবি আঁকতে পারেন। তাতে বিতর্ক তৈরি হবে। আমাদের জায়গা না দেওয়ার পিছনে হয়তো সেটাও একটা কারণ। আমরা কিন্তু আগেই জানিয়েছিলাম, আর জি কর নিয়ে ছবি আঁকার কোনও পরিকল্পনা আমাদের নেই।’’ উল্লেখ্য, আর জি কর নিয়ে বিক্ষোভ চলাকালীন অনেক চিত্রশিল্পীও তাতে যোগ দিয়েছিলেন।
অনেকেই মনে করছেন, যে কারণে প্রকাশ্যে আর জি কর-কাণ্ড নিয়ে ক্ষোভ-বিক্ষোভ এড়াতে মুক্ত মঞ্চ এ বার তৈরি করা হয়নি, সেই একই কারণে চিত্রশিল্পীদেরও বসতে দেওয়া হয়নি, যাতে আর জি কর-কাণ্ড নিয়ে বইমেলায় বসে কেউ ছবি আঁকতে না পারেন। ত্রিদিব অবশ্য কোনও নাম না করে বলেন, ‘‘এমন কোনও কিছুই বইমেলায় করা যাবে না, যা প্রচার পেলে অন্য দিকে নজর ঘুরে যাবে। আগামী দিনেও এ নিয়ে সতর্ক থাকা হবে।’’