• নিষিদ্ধ পল্লি থেকে প্রেম-পরিণয়-বিচ্ছেদ, স্ত্রীর দ্বিতীয় বিয়ের পর টানাপোড়েনেই খুন দত্তপুকুরের যুবক!
    প্রতিদিন | ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • অর্ণব দাস, বারাসত: দত্তপুকুরের যুবক খুনের ঘটনায় এখনও কাটা মুণ্ডু উদ্ধার না হলেও পরতে পরতে রহস্যের ভাঁজ। নিহত হজরত লস্কর খুনের নেপথ্যে ত্রিকোণ প্রেমের আঁচ পাওয়া গিয়েছিল আগেই। এবার সম্পর্কের টানাপোড়েনের আরও জটিলতার কথা প্রকাশ্যে এল। জানা গেল, নিষিদ্ধ পল্লির মেয়ে পূজার সঙ্গে প্রেম, বিয়ে হয় নিহত হজরতের। তারপর তাঁদের বিচ্ছেদও হয়। বিচ্ছেদের পরও যোগাযোগ ছিল দুজনের। পরে হজরতের তুতোভাই ওবায়দুলকে বিয়ে করেন পূজা। তারপরও হজরতের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ছিল। তা জানতে পেরে ব্যক্তিহত আক্রোশ হয় ওবায়দুলের। তার জেরেই খুন বলে অনুমান তদন্তকারীদের। পুজা, ওবায়দুলকে জেরা করে আরও সূত্রের খোঁজ করছে পুলিশ।

    হাতের ‘ট্যাটু’ ও পোশাকের রং দেখে দত্তপুকুরের নিহত যুবককে শনাক্ত করেছিল পুলিশ। জানা যায়, মৃত তিরিশ বছরের হজরত লস্কর। সেই সূত্র ধরে গ্রেপ্তার হয় ওবায়দুল গাজি ও স্ত্রী পূজা দাস ওরফে নিশা। খুনের অভিযোগে দম্পতি গ্রেপ্তার হওয়ার পরই পুলিশি তদন্তে উঠে আসে ত্রিকোণ প্রেমের তত্ত্ব। তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, বনগাঁর বাসিন্দা পূজা দাস কলকাতার নিষিদ্ধ পল্লির বাসিন্দা ছিল। সেখানে তার নাম ছিল নিশা। নিষিদ্ধ পল্লিতে যাতায়াতের সূত্র ধরে পূজার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয় হজরতের। পরে পূজাতে বিয়ে করেন তিনি।

    কিন্তু বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই দুজনের সম্পর্কের টানাপোড়েনে বিচ্ছেদ হয়। এক বছর আগে পূজাকে বিয়ে করে ওবায়দুল। এর মধ্যেও পূজা নিয়মিত যোগাযোগ রেখেছিল হজরতের সঙ্গে। বিষয়টি জানতে পারে ওবায়দুল। হজরতের প্রতি ব্যক্তিগত আক্রোশে তৈরি হয় হজরতের উপর। পুলিশ আরও জানতে পেরেছে, ওবায়দুল এবং হজরত বিরুদ্ধে হাওড়া, হুগলি, উত্তরপাড়া-সহ বেলঘড়িয়া, বরানগর এলাকায় চুরি, ছিনতাই ডাকাতির অভিযোগে দুজনকেই বেশ কয়েকবার গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। ওবায়দুলের সন্দেহ ছিল, গ্রেপ্তারিতে পুলিশকে সহযোগিতা করেছিল হজরত। সবমিলিয়ে আক্রোশ চরম পর্যায়ে পৌঁছয়। এরপরই সে খুনের পরিকল্পনা করে।

    জানা যায়, গাইঘাটার থেকে প্রায় ৩০কিলোমিটার দূর দত্তপুকুর থানার ছোট জাগুলিয়া পঞ্চায়েতের মালিয়াকুর ও বাজিতপুর গ্রামের মধ্যবর্তী চাষের জমিতে হজরতকে ডেকে নেয় এক পরিচিতর মাধ্যমে। তাকে মদ্যপান করিয়ে বেহুঁশ করা হয়। জামা দিয়ে হাত আর প্যান্ট দিয়ে পা বেঁধে গলার নলি কেটে খুন করা হয়। তারপর কেরোসিন ঢেলে জ্বালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয় মৃতদেহ। তাতেও হত্যালীলা শেষ হয়নি! হজরতের পরিচয় যাতে সহজে বোঝা না যায়, তার জন্য গলা কেটে মাথা লোপাট করা হয়। নৃশংস এই খুনের ঘটনায় ওবায়দুল ছাড়াও আরও তিন-চারজন যুক্ত রয়েছে বলেও জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা। ইতিমধ্যেই তাদের খোঁজে তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার ধৃত স্বামী স্ত্রীকে বারাসত আদালতে পেশ করা হলে ১০দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক। বারাসত জেলা পুলিশ সুপার প্রতীক্ষা ঝাড়খড়িয়া জানান, মৃতদেহের কিছু নমুনা ডিএনএ পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। ধৃতদের জেরা করে নিহতের কাটা মুন্ডু উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।
  • Link to this news (প্রতিদিন)