নিজস্ব প্রতিনিধি, পুরুলিয়া ও সংবাদদাতা, মানবাজার: প্রথমে মোবাইল চুরি। তারপর তা থেকে সিমকার্ড বের করে অন্য ফোনে লাগিয়ে জালিয়াতি। ফোন চুরির কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ব্যাঙ্ক থেকে উধাও হয়ে যাচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। সাইবার প্রতারকদের কাছে প্রতারণার এই স্টাইলই বর্তমানে ‘ট্রেন্ডিং’। আর এই মোবাইল চুরিতে কাজে লাগানো হচ্ছে বাচ্চাদের। জেলায় এই কায়দায় একের পর এক প্রতারণার ঘটনায় মূল মাথাদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করছিল পুলিস। অবশেষে মিলল বড়সড় সাফল্য। পুলিসের হাতে ধরা পড়ল তিন নাবালক সহ ১৪ জন। তবে, পুলিসের দাবি, এই চক্রের সঙ্গে আরও অনেকেই জড়িয়ে রয়েছে। ধৃতদের জেরা করে বাকিদের হদিশ পেতে চাইছে পুলিস।
পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, এধরনের অপরাধীদের মূলত টার্গেটে ছিল ভিড় বাজার, মেলা। সেখানে ‘প্রশিক্ষিত’ শিশুদের ছেড়ে দেওয়া হয় মোবাইল চুরির জন্য। আশেপাশেই তাকে মূল মাথারা। শিশুরা মোবাইল চুরির পরেই তা পৌঁছে দেয় ‘ওস্তাদের’ কাছে। ওই ফোন হাতে পেয়েই তার সিমকার্ড বের করে অন্য ফোনে লাগানো হয়। ব্যাঙ্ক থেকে টাকা হাতাতে এখন মূলত প্রয়োজন হয় ওটিপির। সিমকার্ড তো প্রতারকদের কাছেই রয়েছে। ফলে একটি ফোন চুরি করতে পারলেই লক্ষ লক্ষ টাকা প্রতারণা কার্যত ‘নস্যি’ প্রতারকদের কাছে। গত কয়েক মাস ধরে পুলিসের চোখে ধুলো দিয়ে এভাবে জেলাজুড়ে প্রতারণা করে যাচ্ছিল প্রতারকরা। এনিয়ে বিভিন্ন মেলাতেই সতর্ক ছিল জেলা পুলিসও।
গত বুধবার মানবাজারের মাকুড়ি মেলাতেও একইভাবে বহু মোবাইল খোয়া যায়। খবর পায় পুলিস। নজরদারি আরও আঁটোসাঁটো করা হয়। পুলিসের নজরে আসে অপরাধীরা। তবে, চরম মুহূর্তের জন্য ওত পেতে বসে থাকে। সন্ধ্যার পর অপরাধীরা ‘অপারেশন’ সেরে দু’টি গাড়িতে চড়ে বলমপুরের দিকে বেরিয়ে যায়। পুলিসও তাদের অনুসরণ করতে থাকে। মানবাজার-পুঞ্চা রোডের চল্লা গ্রামের কাছে নাকাচেকিং করে পুলিস। সেখানেই দু’টি গাড়িকে পুলিস আটক করে। গাড়িতে থাকা তিনজন নাবালক সহ ১১জনকে পাকড়াও করে পুলিস। তাদের বাড়ি বলরামপুর থানা এলাকায়। ভোজালি সহ বিভিন্ন ধারালো অস্ত্র ও বহু মোবাইল উদ্ধার করেছে পুলিস।
পুলিস সূত্রের খবর, ধৃত নাবালকদের জুভেনাইল কোর্টে পাঠানো হয়। বাকি ১১জনকে এদিন পুরুলিয়া জেলা আদালতে তোলা হয়। তারমধ্যে চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিসি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। বাকিদের ১৪ দিনের জেল হেফাজতে পাঠানো হয়েছে। পুলিস সূত্রের খবর, ধৃতদের বিরুদ্ধে নানা অপরাধমূলক কাজকর্মের রেকর্ড রয়েছে। কোন কোন অপরাধের সঙ্গে তারা যুক্ত ছিল, তা জিজ্ঞাসাবাদ করে জানার চেষ্টা করছে পুলিস।