নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: বৃহস্পতিবার কর্মব্যস্ত দিন। দুপুরবেলায় চূড়ান্ত ব্যস্ততা ধর্মতলাজুড়ে। দোকানগুলিতে জোরদার কেনাবেচা চলছে। ক্রেতাদের ভিড়। তার সঙ্গে ট্রাফিকের চাপও রয়েছে। এসবের মধ্যে ডোরিনা ক্রসিংয়ে পুলিসের ব্যারিকেড। হঠাৎ এক ঝাঁক লোক মিছিল করে এসে সরিয়ে দিলেন ব্যারিকেড। তারপর বসে পড়লেন ডোরিনা ক্রসিংয়ে। সাধারণ মানুষ তখনও বুঝতে পারেননি এঁরা কারা? কী দাবি নিয়ে বসলেন রাস্তায়? তারপর দেখা গেল ২০১৬ সালের এসএলএসটি’তে নিযুক্ত শিক্ষকদের মিছিল সেটি। তা থেকে স্লোগান উঠছে ‘উই ওয়ান্ট সেগ্রিগেশন (পৃথকীকরণ)।’ দুপুর একটা নাগাদ ধর্মতলায় আছড়ে পড়া সেই বিক্ষোভ সমাবেশ চলল প্রায় এক ঘণ্টা। পুলিসের উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের অনুরোধেও বিক্ষোভ উঠল না। শেষপর্যন্ত ধরপাকড়ের পর সচল হয় ধর্মতলা। এই সময়কালে চূড়ান্ত নাকাল হতে হল সাধারণ মানুষকে।
বিক্ষোভকারী শিক্ষকদের অভিযোগ, তাঁরা কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে যাওয়ার ডাক দিয়েছিলেন। কিন্তু ময়দান মেট্রোর সামনে পুলিস ধরপাকড় শুরু করে। ধৃত সহকর্মীদের মুক্তির দাবিতেই তাঁরা ধর্মতলায় চলে এসেছেন। তাঁদের আরও দাবি, যোগ্য ও অযোগ্যদের আলাদা করতে হবে। অন্যদিকে এই ঘটনায় দুপুর একটার কিছু পর থেকে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে ধর্মতলা চত্বর। পুলিসের উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা বিক্ষোভকারীদের বোঝাতে শুরু করেন। মাইকিং শুরু হয়। ঘটনাস্থলে কলকাতা পুলিসের সেন্ট্রাল ডিভিশনের ডেপুটি কমিশনার ইন্দিরা মুখোপাধ্যায় যান। আধিকারিকরা বলতে থাকেন, ‘শহর স্তব্ধ হয়ে যাচ্ছে। এই এলাকা আপনারা ছেড়ে দিন।’ তারপর ওয়াই চ্যানেলে চলে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। কিন্তু বিক্ষোভকারীরা তা মানতে নারাজ। এদিকে প্রখর রোদের মধ্যে নাকাল হতে হয় নিত্যযাত্রীদের। হাওড়া ও শিয়ালদহ স্টেশনগামী সব বাস রাস্তায় দাঁড়িয়ে পড়ে। অনেকে বাস থেকে নেমে পায়ে হেঁটে গন্তব্যে যেতে শুরু করেন। বেকবাগান থেকে শিয়ালদহ যাবেন রমাপদ সরকার। বললেন, ‘আমার তো ট্রেন রয়েছে। কিন্তু এখানে দাঁড়িয়েই অনেক সময় কেটে গেল। এই গরমে আর কত হাঁটব!’ রমাপদবাবুর মতো আরও অনেকে মিস করেছেন ট্রেন। মিছিলের মধ্যেই এক মহিলা এসে জিজ্ঞেস করলেন, ‘বাস তো বন্ধ হয়ে গেল। এখন হাওড়া যাব কীভাবে?’ আবার কেউ এসে জিজ্ঞেস করলেন, ‘এটা কাদের মিছিল হচ্ছে?’ শেষ পর্যন্ত কারও অনুরোধেই সাড়া দেননি বিক্ষোভকারীরা। আড়াইটে নাগাদ ধরপাকড় শুরু করে পুলিস। কিছুক্ষণ পর সচল হয় ধর্মতলা। নিজস্ব চিত্র