নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা ও সংবাদদাতা, বারুইপুর: ৩১ জানুয়ারি থেকে রুবি এলাকার এক ব্যবসায়ীর খোঁজ মিলিছিল না। আনন্দপুর থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন তাঁর স্ত্রী। তার পাঁচদিন পর, বুধবার রাতে উদ্ধার হল সোনু রাম (২৮) নামে সেই ব্যবসায়ীর পচাগলা দেহ। পুলিস জানিয়েছে, টাকাপয়সা নিয়ে ঝামেলার জন্য অপহরণ ও খুন করা হয়েছে সোনুকে। ঘটনায় জড়িত অভিযোগে আনন্দপুর থানার পুলিস ইতিমধ্যে মৃতের তিন বন্ধুকে গ্রেপ্তার এবং এক নাবালককে আটক করেছে। ধৃতরা হল অনুপ মণ্ডল ওরফে রাজেশ, খোকন বৈদ্য ও প্রদীপ নয়াবান। আটক নাবালকের বয়স ১৬ বছর। অপহরণে ব্যবহৃত গাড়ির চালক প্রদীপ। মৃত যুবকের আরও এক বন্ধু রঞ্জন চক্রবর্তী পলাতক। তার সন্ধানে তল্লাশি চলছে।
পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, নিখোঁজ হওয়ার পর ওই ব্যবসায়ীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে চার দফায় ১ লক্ষ টাকা গায়েব হয়েছে। বিষয়টি নজরে আসতেই রহস্যের জট খুলতে শুরু করে। ব্যাঙ্ক লেনদেনের সূত্র ধরে কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। বুধবার রাতে পুলিস আনন্দপুর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে বারুইপুরের আকনার একটি বাগানবাড়ি চত্বর থেকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় ব্যবসায়ীর পচাগলা দেহ উদ্ধার করে। গ্রেপ্তার করা হয় তিন বন্ধুকে। স্থানীয় সূত্রে খবর, রুবি মোড়ের একটি জুতোর দোকান রয়েছে সোনুর। আগে তিনি মায়ের সঙ্গে থাকতেন বাইপাসের ধারে ভিআইপি নগরে। ছ’মাস আগে তাঁর বিয়ে হয়। স্ত্রীকে নিয়ে আলাদা থাকতে সোনু প্রায় ৩০ লক্ষ টাকায় একটি ফ্ল্যাট কেনেন ভিআইপি নগরেই। এত টাকা পেলেন কোথায়? মৃতের বড়দিদি অনিতা দাসের দাবি, জমিবাড়ির দালালি বাবদ সম্প্রতি নগদ ২৫ লক্ষ টাকা আসে সোনুর হাতে। অনুপ সহ কয়েকজন বন্ধুকে সেই কথা জানিয়ে ছিল সে। তদন্তকারীরা জেনেছেন, অনুপ নিজের কয়েকজন বন্ধুকে সোনুর কাছে অনেক টাকা থাকার কথা জানায় এবং তা হাতানোর পরিকল্পনা করে। সেই মতো ৩১ জানুয়ারি রাত ৮টা নাগাদ দোকান বন্ধ করার পর সোনুকে ফোন করে অনুপ। বাইপাসের একটি জায়গায় তাকে ডেকে প্রদীপের গাড়ির মধ্যে একসঙ্গে চলে মদ্যপান। তার আগে দালালির ২৫ লক্ষ টাকা সবার মধ্যে ভাগ করে দেওয়ার জন্য তাঁকে চাপ দেওয়া হয়। তারা জানত না যে ওই টাকার সিংহভাগ ফ্ল্যাট কিনতে খরচ করে ফেলেছেন সোনু। টাকা দেওয়ার প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় গাড়ির সিট বেল্ট দিয়ে গলা পেঁচিয়ে তারা সোনুকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। তারপর মৃতের ফিঙ্গারপ্রিন্টের সাহায্যে মোবাইল অ্যাপ থেকে ১ লক্ষ টাকা ‘ট্রান্সফার’ করা হয় অন্য এক বন্ধুর অ্যাকাউন্টে। রাত ন’টা নাগাদ ব্যবসায়ীর ফোন ‘সুইচড অফ’ করে দেওয়া হয়। গাড়িতে বসেই তৈরি হয় দেহ লোপাটের ছক। সবুজ রঙের নাইলন দড়ি কিনে তা দিয়ে হাত-পা বেঁধে একটি পরিত্যক্ত বাগানবাড়ির পাঁচিলের ভিতরে ফেলে দেওয়া হয় দেহ। তিন ধৃতকে আলিপুর আদালতে পেশ করা হলে তাদের ১৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পুলিস হেফাজত হয়েছে। নাবালককে পাঠানো হয়েছে হোমে।