এই সময়: টপিক কী, টপিক?
না, সে ভাবে কোনও ‘টপিক’ নেই। আবার আছেও। সত্যি বলতে কী, আড্ডার কোনও টপিক হয় না। এক প্রসঙ্গ থেকে অন্য প্রসঙ্গের জার্নিটাই নিখাদ আড্ডা।
‘এই সময়’–এর বইমেলার স্টলে বৃহস্পতিবার সন্ধেটা জমে উঠল এমনই এক আড্ডায় ও পরিচয়ে।
পরিচয়?
যে দুই বঙ্গতনয় এ দিনের মূল আকর্ষণবিন্দু ছিলেন, তাঁদের সঙ্গে অন্যদের পরিচয় ইতিমধ্যেই আছে। তবু, যিনি এই অনুষ্ঠানটির লাটাই ধরেছিলেন, সেই অরিত্র গঙ্গোপাধ্যায়ের হাত ধরে আরও একবার চেনা–জানা হয়ে গেল আদিত্য বিক্রম সেনগুপ্ত এবং অরিন্দম ঘোষের সঙ্গে।
যে সূত্রে ওয়াশিংটন ডিসি–র বাসিন্দা অরিন্দম আর মুম্বই প্রবাসী আদিত্য আজ এই শহরে, সেটাই শেষ পর্যন্ত হয়ে উঠল এই আড্ডার মূল ‘টপিক’। মায়ানগর। আগামী কাল যে ছবির প্রিমিয়ার হতে চলেছে, সেই ‘মায়ানগর’ বা ‘ওয়ানস আপন এ টাইম ইন ক্যালকাটা’ ছবিটি পরিচালনা করেছেন আদিত্য বিক্রম। গোটা প্রোডাকশনের এক অপরিহার্য অংশ এবং ছবির অভিনেতা হলেন অরিন্দম। ৪১ বছরের আদিত্যর সঙ্গে পঞ্চাশোর্ধ্ব অরিন্দমের বয়সের যতই ফারাক থাকুক, এ দিনের আড্ডায় স্পষ্ট ধরা দিচ্ছিল তাঁদের মধ্যেকার এক অভিনব বন্ডিং। এই প্রতিযোগিতার দিনে যা খুব কমই দেখা যায়।
ফিল্ম মেকার, সিনেমাটোগ্রাফার, গ্র্যাফিক ডিজ়াইনার (ম্যাজিশিয়ানও!) আদিত্য বিক্রমের প্রথম ছবি ‘আসা যাওয়ার মাঝে’(২০১৪) ইতিমধ্যেই ভেনিস ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে পুরস্কৃত। এ ছাড়াও একাধিক দেশি–বিদেশি পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন তিনি। কিন্তু কথা বলার সময়ে, বিশেষ করে সামান্য কোনও বাঁকা প্রশ্নের মুখোমুখি হলেই এ দিন তিনি এক সহজ শিশুর সারল্যে হয় সেই সব প্রশ্নের খুব সহজ উত্তর দিচ্ছিলেন, না–হলে অবাক বিস্ময়ে প্রশ্নের উত্তরে নিজেই ছুড়ে দিচ্ছিলেন প্রশ্ন। এ এক মজার খেলা, যা এ দিনের ঘণ্টা দুয়েকের আলোচনা–চক্রে নতুন মাত্রা যোগ করছিল।
কথা হচ্ছিল ‘মায়ানগর’ নিয়ে। এই শহর নিয়ে ছবি। যে শহর থেকে দু’জনেই পেশাগত কারণে আজ অনেকটা দূরে। শ্রীলেখা মিত্র, ব্রাত্য বসু, অনির্বাণ চক্রবর্তীর সঙ্গে এই ছবিতে অভিনয় করেছেন অরিন্দমও। প্রথমেই বিক্রম বলেছিলেন, তিনি ছোটবেলা থেকেই চিন্তা–ভাবনায়, কাজে–কর্মে কোনও গণ্ডিতে আবদ্ধ থাকেননি কোনওদিন। পরিবারের কেউ কখনও তাঁর কোনও কাজে বাধাও দেননি। নিজের ছবি ‘মায়ানগর’ নিয়ে কোনও প্রিভিউ বা রিভিউ দিতে নারাজ পরিচালক।
অরিত্র অনেক বার চেষ্টা করলেন ঠিকই, ছবিটি বিষয়ে পরিচালকের কাছ থেকে সবিস্তার কিছু শুনতে, কিন্তু কী এক ম্যাজিকে সব বার সেই প্রশ্ন এড়িয়ে গেলেন বিক্রম। ম্যাজিক আবার তাঁর খুব প্রিয়। এ নিয়েও কথা হলো অনেকক্ষণ। সেই ছোট্টবেলা থেকে কী ভাবে ম্যাজিক শো করতেন এই ৪১–এর বালক। আজও করেন। অরিত্র জানতে চাইলেন, মেলায় ঘুরে বই কেনার ইচ্ছে আছে কি না তাঁর। সহজ ভাবে বড় বড় চোখ তুলে পরিচালক জানিয়ে দিলেন, বই পড়তে মোটেও ভালোবাসেন না তিনি। পড়েন, কিন্তু বিষয় বেছে বেছে। আর ফিকশন পড়ার ধৈর্য তো তাঁর কোনওদিনই নেই।
এ বার আরও একটা বাঁকানো প্রশ্ন: যদি এমন হয়, কী ভাবে আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেতে হয়, তার রুট গাইড নিয়ে যদি তাঁকে কোনও বই লিখতে বলা হয়? প্রশ্নে অপ্রতিরোধ্য অরিত্র। আর উত্তরে ততটাই নিষ্পাপ বিক্রম—‘ যে ভাবে অন্যেরা পাঠায় নিজেদের ছবি, আমিও সে ভাবেই পাঠিয়েছি। কোনও রুট ম্যাপ নেই তো!’
এই জুটির পাশে একদা নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের ছাত্র অরিন্দম অনেকটাই শান্ত, সংযত, সৌম্য। নাটকের প্রতি নিজের ভালোবাসার কথা জানালেন, আর সভা জমিয়ে দিলেন শুটিংয়ের নানান মজার গল্পে।
‘মায়ানগর’ কোনও স্থানের গল্প নয়। এ হলো নাগরিকদের কাহিনি। এই দিয়ে সভা শুরু হয়েছিল। ছবিটি দেখার প্রতীক্ষার পাশাপাশি এ দিনের দুই অতিথি রেখে গেলেন একটি প্রশ্নও: এই নগরে কি আর কোনওদিন পাকাপাকি ভাবে ফিরবেন এই দুই বিশ্ব নাগরিক?