• বকেয়া সম্পত্তিকর আদায়ে নিলামে বাড়ি, কড়া পুরসভা
    এই সময় | ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • সোজা পথে ঘি না উঠলে আঙুল বেঁকাতে হয়— বোধহয় এই আপ্তবাক্য মেনেই বকেয়া সম্পত্তিকর আদায়ে কড়া পথে হাঁটতে চলেছে কলকাতা পুরসভা। ঠিক হয়েছে যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে সম্পত্তিকর মেটাচ্ছেন না, তাঁদের বাড়ি অ্যাটাচ করে পর নিলামে তোলা হবে। সম্পত্তি নিলাম করে যে টাকা উঠবে তা থেকে নিজেদের বকেয়া কেটে নিয়ে বাকি টাকা মালিককে ফিরিয়ে দেওয়া হবে। এ নিয়ে জোরদার প্রস্তুতি চলছে পুরসভায়।

    পুরকর্তারা জানাচ্ছেন, পুর আইন অনুযায়ী কেউ দীর্ঘদিন সম্পত্তিকর জমা না করলে সেই সম্পত্তি অ্যাটাচ করে নিলামে তুলতে পারে পুরসভা। যদিও পুরসভার ইতিহাসে এই ধরনের নজির খুব একটা নেই। বকেয়া সম্পত্তিকর আদায়ে পুরকর্তারা বাড়ি নিলামের হুমকি দিলেও শেষপর্যন্ত রণে ভঙ্গ দিতে বাধ্য হয়েছেন।

    কিন্তু গত কয়েক বছরে কর আদায় ভালোরকম ধাক্কা খাওয়ায় পুরসভার কোষাগারের হাল একেবারে তলানিতে এসে ঠেকেছে। কর আদায়ে পুরসভা কঠোর পদক্ষেপ করতে না পারায় অনেকের মধ্যে কর না দেওয়ার প্রবণতাও বাড়ছে। এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে বকেয়া সম্পত্তিকর আদায়ে এ বার কঠোর পদক্ষেপ করতে চলেছেন পুর কর্তৃপক্ষ।

    পুরসভা সূত্রের খবর, যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে সম্পত্তিকর মেটাচ্ছেন না, তাঁদের তালিকা তৈরি করতে বলা হয়েছে অ্যাসেসমেন্ট বিভাগকে। সেই মতো তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করা হবে। যে সব সম্পত্তি নিলাম করা হবে তার দাম নির্ধারণের জন্য মোট ১১ জন ভ্যালুয়ারের একটি প্যানেল তৈরি করা হয়েছে। তারাই সেল প্রাইস এবং রিজ়ার্ভ প্রাইস ঠিক করে দেবেন।

    পুরসভার অ্যাসেসমেন্ট বিভাগের এক আধিকারিকের ব্যাখ্যা, ‘কোনও সম্পত্তি নিলামে তোলার আগে প্রথমে বাড়ির মালিককে এলওআই (লেটার অফ ইন্টিমেশন) পাঠানো হয়। তাতে কাজ না হলে এনওডি (নোটিস অফস ডিমান্ড) নোটিস দেওয়া হয়। সেই নোটিস ধরানোর এক মাসের মধ্যে টাকা জমা না করলে পুরকর্মীরা গিয়ে বাড়িতে পোস্টার মেরে দিয়ে আসেন।

    তাতেও যদি মালিকের হুঁশ না ফেরে সেক্ষেত্রে কলকাতা পুর আইনের ২১৯ ধারায় তাঁকে কড়া নোটিস দেওয়া হয়। মালিককে জানিয়ে দেওয়া হয়, তিনি টাকা না মেটালে সম্পত্তি অ্যাটাচ করবে পুরসভা। তারপরেও কাজ না হলে পুর আইনের ২২১ নম্বর ধারায় সম্পত্তি অ্যাটাচ করা হয়।’

    পুলিশকেও সেই খবর জানিয়ে দেওয়া হয়। অ্যাটাচ করার পর সেই সম্পত্তি আর কেনা–বেচা করা যায় না। যদি বাড়িতে লোকজন না থাকে তা হলে গেটে তালা মেরে সিল করে দেওয়া হয়। আর যদি বাড়িতে লোক থাকে সেক্ষেত্রে প্রতীকী তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়।

    পরিকল্পনা অনুযায়ী, প্রথম ধাপে যে বাড়িগুলি ইতিমধ্যেই পুরসভা অ্যাটাচ করেছে এবং যে সব বাড়ির মালিকের কোনও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না, সেগুলিকে প্রথমে নিলামে তোলা হবে। সারা শহরে এই রকমের শতাধিক বাড়ি এবং জমি রয়েছে যাদের কোটি টাকার উপর সম্পত্তিকর বাকি। পুরকর্তাদের আশা, এই সব সম্পত্তিকে যদি ‍নিলামে বিক্রি করা হয়, তা হলে পুরসভার ভাঁড়ারে কয়েক হাজার কোটি টাকা জমা হবে।

  • Link to this news (এই সময়)