• নুন আনতে পান্তা ফুরোয়, কিডনি বেচতে চান নেতা
    এই সময় | ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • শীতল চক্রবর্তী, বালুরঘাট

    সে এক সময় ছিল! মঞ্চে উঠলেই উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়তেন কর্মীরা। হাতের তালুর মতো চেনা ব্লকের রাজনৈতিক চালচিত্র নিয়ন্ত্রণ করতেন তিনি। একাই। তারপরে? সেই পদও নেই, নেই আশপাশে জমে ওঠা ভিড়টাও। চরম আর্থিক সঙ্কটে নিজের কিডনি বিক্রির ‘বিজ্ঞাপন’ দিলেন তৃণমূলের দক্ষিণ দিনাজপুরের তপন ব্লকের প্রাক্তন ব্লক সভাপতি অনাদি লাহিড়ী!

    বুধবার গভীর রাতে নিজের ফেসবুক ওয়ালে অনাদি লেখেন, ‘ও পজ়িটিভ একটা কিডনি বিক্রি আছে। উপযুক্ত মূল্য দিলে রাজি আছে ডোনার...। যোগাযোগ করুন।’ দক্ষিণ দিনাজপুরের তপন ব্লকের প্রাক্তন সভাপতির সেই পোস্ট ভাইরাল হয়ে যায় মুহূর্তেই! এক সময়ের ‘দাপুটে’ নেতার এমন ‘পরিণতি’ দেখে রাজনৈতিক মহলেও শুরু হয় চর্চা।

    বছর পঞ্চাশের অনাদির রাজনীতিতে হাতেখড়ি ১৯৯০ সালে। টানা আড়াই দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনিই ছিলেন আরএসপি-র চেনা মুখ। ২০১৭ সালে যোগ দেন তৃণমূলে। ২০১৯ থেকে ২০২১ পর্যন্ত তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের ব্লক সভাপতি। ২০২২ সালে তপন ব্লক তৃণমূলের সভাপতি। এরপরেই তাঁর বিরুদ্ধে ওঠে চাকরির নামে টাকা তোলার অভিযোগ। ২০২৩ সালে দল সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দেয়। অনাদির দাবি, তাঁকে পরিকল্পিত ভাবে ফাঁসানো হয়েছে।

    ব্লক সভাপতির পদ হারানোর পর থেকেই অনাদির জীবন অন্য খাতে বইতে শুরু করে। সব কিছু বদলে যায়। রাজনীতির মূলস্রোত থেকেও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। দলের কোনও কর্মসূচিতেও তাঁকে দেখা যেত না। পরিবারের দাবি, রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড থাকা সত্ত্বেও আয়ের কোনও বিকল্প পথ তৈরি করতে পারেননি তিনি।

    আর সেই কারণেই ধীরে ধীরে জাঁকিয়ে বসে আর্থিক সঙ্কট। গত কয়েক মাসে নিজের হাতে গড়ে তোলা প্রায় সব কিছুই বিক্রি করে দিয়েছেন। ট্রেকার, মিনিবাস, মারুতি থেকে শুরু করে সাধের এনফিল্ড বাইক— কিছুই আর তাঁর কাছে নেই। কিন্তু তারপরেও সঙ্কট কাটেনি।

    অনাদি বলছেন, ‘সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছি। স্ত্রী অসুস্থ। ছেলেদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। আমার সামনে আর কোনও পথ খোলা নেই। তাই বাধ্য হয়েই এই সিদ্ধান্ত।’

    এমন ঘটনায় বিস্মিত তৃণমূলের নেতারা। রাজ্য তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক গৌতম দাস বলেন, ‘অনাদি মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত বলেই এমন পোস্ট করেছেন। আমি ওঁর সঙ্গে কথা বলব।’

  • Link to this news (এই সময়)