• নবমে নথিভুক্ত হয়ে দশমেই উধাও, পরীক্ষার্থীদের নিয়ে উঠছে প্রশ্ন
    এই সময় | ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • চাঁদকুমার বড়াল, কোচবিহার

    নবম শ্রেণিতে রেজিস্ট্রেশন করেছে। কিন্তু দশমে তারা উধাও। এই পড়ুয়ারা মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসছে না। কোচবিহার জেলায় এমন ছাত্র–ছাত্রীর সংখ্যা উদ্বেগ জাগানোর মতো। ৪৫ হাজারের বেশি পড়ুয়া রেজিস্ট্রেশন করেছিল। কিন্ত মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে চলেছে ৩৩ হাজারের মতো পড়ুয়া। ১২ হাজারের বেশি পরীক্ষার্থী কোথায় গেল? খাতায়–কলমে এরা ‘ড্রপ আউট’। এই পড়ুয়াদের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

    ১০ ফেব্রুয়ারি শুরু হচ্ছে এ বছরের মাধ্যমিক পরীক্ষা। কোচবিহার জেলায় সব মিলিয়ে ১১৭টি স্কুলে মাধ্যমিক পরীক্ষা হবে। এই পরীক্ষা দেওয়ার জন্য নবম শ্রেণিতেই ছাত্র-ছাত্রীদের রেজিস্ট্রেশন করতে হয়। জেলা শিক্ষা দপ্তর সূত্রে খবর, গত বছর ৪৫ হাজার ৭০২ জন নবমে নাম নথিভুক্ত করেছিল।

    নবম–দশমের পড়াশোনা শেষে এদেরই এ বছর মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসার কথা। কিন্তু পরীক্ষার দিন চারেক আগে শিক্ষা দপ্তর যে তথ্য দিচ্ছে, তা চোখ কপালে তুলে দেওয়ার মতো। এতে দেখা যাচ্ছে, রেজিস্ট্রেশন করানো পড়ুয়াদের মধ্যে পরীক্ষায় বসছে ৩৩ হাজার ১৭৫ জন। অর্থাৎ ১২ হাজার ৫২৭ জন পরীক্ষার্থী রেজিস্ট্রেশন করালেও পরীক্ষা দিচ্ছে না। শিক্ষা দপ্তরের ভাষায় এরা ‘ড্রপ আউট’। প্রশ্ন উঠছে, কেন এরা নবমে পড়া শুরু করলেও দশমে পরীক্ষায় বসছে না?

    ‘ড্রপ আউট’ হওয়া পড়ুয়াদের মধ্যে বেশিরভাগই ছাত্র। অনেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছে। কিন্তু এর পর আর স্কুলমুখো হয়নি। কেউ কেউ অকৃতকার্য হয়েছে নবম শ্রেণিতে। তবে স্থানীয় সূত্রের খবর, অনেকেই কাজে যুক্ত হয়ে গিয়েছে। দারিদ্রের কারণে রোজগারের পথ নিয়েছে। কেউ কেউ ভিন রাজ্যে চলে গেছে, যাদের বলা হয় পরিযায়ী। মেয়েদের ক্ষেত্রে ছবিটা আলাদা।

    এখানে কর্মসংস্থান নয়, পারিবারিক কারণটাই বেশি। নবমের রেজিস্ট্রেশনের পর বাড়ি থেকে বিয়ে দেওয়া হচ্ছে তাদের। বিয়ের পর শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে অনেকেই পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারছে না। হঠাৎই তাদের উপর সাংসারিক কাজকর্মের বোঝা চাপছে। তার উপর অনেকের বিয়ে দূরে কোনও জায়গায় হওয়ায় তারা নতুন স্কুলে যেতে পারছে না। ছাত্রদের পরিযায়ী হয়ে যাওয়ার মতো ছাত্রীদের বিয়ে দেওয়ার নেপথ্যে সামাজিক কারণের পাশাপাশি অর্থনৈতিক কারণও রয়েছে।

    কোচবিহারের শহর, গ্রাম ও সীমান্ত এলাকা, সর্বত্রই কমবেশি এই সমস্যা রয়েছে। বিভিন্ন স্কুলের পরীক্ষার্থীর সংখ্যায় নজর রাখলে সেটা বোঝা যাচ্ছে। মেখলিগঞ্জ মহকুমার সীমান্ত এলাকা কুচলিবাড়ির উপনচৌকি হাইস্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক বিপুল বর্মন বলেন, ‘আমাদের স্কুলে ৪০০ জন নবমে রেজিস্ট্রেশন করেছিল। তার মধ্যে ৩৬২ জন পরীক্ষা দিচ্ছে। ৩৮ জন মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসছে না। পড়াশোনা ছেড়ে দেওয়ার পিছনে অর্থনৈতিক কারণ অন্যতম। ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠানোর জন্য সচেতনতামূলক প্রচার চলছে, কিন্তু তাতে সমস্যা কিন্তু মিটছে না।’

    মধ্যশিক্ষা পর্ষদের কোচবিহার জেলার কনভেনার সঞ্জয়কুমার সরকার বলেন, ‘ড্রপ আউটের সংখ্যাটা অনেকটাই বেশি। এত ছাত্র-ছাত্রী পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছে, সেটা চিন্তার বিষয়।’

  • Link to this news (এই সময়)