• কল্যাণীতে বাজি কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণ, মৃত ৪, গুরুতর জখম ১
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • কল্যাণীতে বাজি কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণে মৃত ৪ জন মহিলা। গুরুতর জখম হয়েছেন আরও ১ জন মহিলা। তাঁকে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। শুক্রবার মর্মান্তিক এই ঘটনাটি ঘটেছে নদিয়ার কল্যাণী পৌরসভার ২০ নম্বর ওয়ার্ডের রথতলা এলাকায়।

    স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, একটি টিনের তৈরি বাজি কারখানায় বিস্ফোরণটি ঘটে। সেখানে বাজি তৈরির কাজে যুক্ত ছিলেন এই ৫ জন মহিলা। ঘটনার সময় তাঁরা এই কারখানাতেই কাজ করছিলেন। যেহেতু নিয়মিত বাজি তৈরির কাজ চলত, সেজন্য এখানে প্রচুর পরিমাণে বারুদ মজুত করা ছিল। এদিন আচমকা সেই বারুদের স্তূপে বিস্ফোরণ ঘটে। দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়তেই দাউ দাউ করে জ্বলতে থেকে কারখানাটি। কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলীতে ভরে যায় গোটা এলাকা।

    খবর পেয়ে ছুটে আসে দমকল বাহিনী। খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে ছুটে আসে কল্যাণী থানার পুলিশ। বাজি কারখানার সংলগ্ন রাস্তা খুব সরু হওয়ায় ঢুকতে পারেনি দমকলের গাড়ি। যার ফলে দমকল কর্মী ও স্থানীয় বাসিন্দারা টিউবওয়েল থেকে জল নিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। কিন্তু ততক্ষণে সব শেষ। আগুনে ঝলসে যান কারখানার ওই চারজন মহিলা কর্মী।

    ঘটনাস্থলে ঘুরে গিয়েছেন রানাঘাট পুলিশ জেলার পুলিশ সুপার কুমার সানি রাজ। যদিও তিনি এই বিষয়ে কোনও মুখ খোলেননি।
    স্থানীয় সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরেই এখানে বাজি তৈরির কারখানা রয়েছে। ঘন বসতি এলাকা। কী করে? কার মদতে এই বাজি কারখানায় বাজি তৈরি হত, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। যদিও কল্যাণী পৌরসভার পৌরপ্রধান নীলিমেশ রায় চৌধুরী ঘটনাস্থলে এসে বলেন, বাজি মজুত রাখার অনুমতি ছিল। বাকি বিষয়টি পুলিশ তদন্ত করে দেখবে।

    পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনার সময় ৫ জন মহিলা এই কারখানায় কাজ করছিলেন। মৃতদের নাম ভারতী চৌধুরী (৬০), রুমা সোনার (৩৫), অঞ্জলি বিশ্বাস (৬০) ও দুর্গা সাহা (৪০)। এছাড়া আহত মহিলার নাম উজ্জ্বলা ভূঁইয়া (৩৮)। মৃত ও আহতদের সকলেই স্থানীয় বাসিন্দা। বাজি কারখানার মালিকের নাম খোকন বিশ্বাস। এই কারখানায় বারুদ মজুত ছিল। বাজি তৈরি হত। কিভাবে আগুন লেগেছে তা এখনই বলা সম্ভব নয়। বাজি মজুত রাখার অনুমতি ছিল। বাকিটা তদন্তের পরে জানা যাবে। বাজি কারখানার মালিক খোকন বিশ্বাস পলাতক। তাঁর খোঁজ শুরু করেছে কল্যাণী থানার পুলিশ। পুরো ঘটনার তদন্ত চলছে। সেফটি টেপ দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে পুড়ে যাওয়া কারখানাটি।

    দমকল বাহিনী সূত্রে খবর, রাস্তা সরু। ঘন জন বসতি। দমকল নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করা সম্ভব হয়নি। শেষে স্থানীয় বাসিন্দা, পুলিশ ও দমকল বাহিনীর আধিকারিকদের সহযোগিতায় টিউবওয়েল থেকে জল নিয়ে আগুন আয়ত্বে আনা সম্ভব হয়েছে। যদিও কারখানায় কোনও ইলেক্ট্রিকের ব্যবস্থা ছিল না। এমনকি আগুন নিয়ন্ত্রণে আনারও কোনও ব্যবস্থা ছিল না।

    ওই এলাকার আরও এক বাসিন্দা প্রশান্ত বিশ্বাস বলেন, খুব মর্মান্তিক ও ভয়ানক ঘটনা। জনবহুল এলাকায় এইভাবে বাজি কারখানা থাকায় জীবনের ঝুঁকি থাকে। দাউ দাউ করে জ্বলেছে কারখানাটি। নিমেষের মধ্যেই পুড়ে গিয়েছেন চারজন মহিলা।

    স্থানীয় বাসিন্দা সুভাষ সরকার বলেন, হঠাৎ বিকট আওয়াজ শুনতে পাই। আওয়াজ শুনে ছুটে আসি। স্থানীয় বাসিন্দারাও ছুটে আসেন। এসে দেখতে পায় দাউ দাউ করে জ্বলছে কারখানাটি। উড়ে গিয়েছে টিনের চাল। একজন মহিলাকে বের করা গিয়েছে। বাকি চারজনকে বের করা সম্ভব হয়নি। চারজন মহিলা পুরো ঝলসে গিয়েছে।

    অন্যদিকে ঘটনাস্থলে এসে এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন কল্যাণী বিধানসভার বিধায়ক ও বিজেপি নেতা অম্বিকা রায়। তিনি বলেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগ করা দরকার। ঘন জনবসতির মধ্যে বাজি কারখানা। কোনও ব্যবস্থা নেই। প্রশাসনের লোক জানে না সাধারণ মানুষ মরছে। অথচ প্রশাসন চোখ-মুখ বন্ধ করে বসে রয়েছে।
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)