• ট্রাম্পের নিষ্ঠুরতা নিয়ে সরব বইমেলার অতিথি গাজ়ার কবিকন্যা
    আনন্দবাজার | ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • ভারতীয় অভিবাসীদের আমেরিকা-ছাড়া হওয়া নিয়ে ফুঁসে উঠলেন গাজ়ার কবিকন্যা নাথালি হ্যান্ডাল। বললেন, ‘‘এ তো আজগুবি নিষ্ঠুরতা! ট্রাম্পের পূর্বপুরুষেরা বাইরের নন? ট্রাম্পের স্ত্রী? আমেরিকা দেশটাই তো আদি বাসিন্দাদের থেকে দখল করা! মানুষগুলোর অবশ্যই বৈধ কাগজ পাওয়া উচিত ছিল।’’

    বৃহস্পতিবার বিকেলে বইমেলায় যাওয়ার পথে গাড়িতে গল্প হচ্ছিল প্যালেস্তাইনি-আমেরিকান কবি নাথালির সঙ্গে। বললেন, ‘‘আমি আজও এক অন্তহীন সফরে নিজের ঠাঁই খুঁজছি। আমরা বেথলেহেমের খ্রিস্টান। ইসলামি সংস্কৃতির পরিবেশকেই আপন ভাবি। জন্মেছি হাইতিতে। চারটে মহাদেশে বড় হয়েছি। আমার মা-বাবাদেরও জীবনভর বৈধ কাগজ খুঁজে বেড়াতে হয়েছে।’’ মধ্য পঞ্চাশের কবির জীবন এখন নিউ ইয়র্ক, আবু ধাবি, রোমে ছড়িয়ে। নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে আবু ধাবির ক্যাম্পাসে ক্রিয়েটিভ রাইটিং এবং সাহিত্যের অধ্যাপক নাথালি। বলেন, ‘‘লম্বা সফরে নিউ ইয়র্কেই আমার চেনা সব ক’টা মুখ দেখতে পাই। তবে নিজেকে প্যালেস্তাইনি, ইউরোপিয়ান, ল্যাটিন আমেরিকান— সব ভাবি! কারণ চলার পথে সর্বত্র আমার খণ্ড সত্তা ছড়িয়ে।’’

    হাই কোর্টের নির্দেশে ময়দানের বইমেলা ভেস্তে যাওয়ার বছরেও কলকাতায় এসেছিলেন নাথালি। দশটা দিন শহরের কবি-শিল্পী বন্ধুদের সঙ্গে টো টো করেন। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী, আমেরিকাবাসী কবিবন্ধু গৌতম দত্তের আমন্ত্রণেই ফের শহরে তিনি। বইমেলার কলকাতা সাহিত্য উৎসবে কবি সুবোধ সরকার, গৌতমদের সঙ্গে ‘শব্দের সীমান্ত নেই’ শীর্ষক আলোচনায় বসেছিলেন। আমেরিকায় নানা পুরস্কারজয়ী নাথালির কবিতা সুবোধ, গৌতমদের সম্পাদনায় বাংলাতেও অনূদিত। ওয়ার্ল্ড উইদাউট বর্ডার্স, গ্যের্নিকা, আর্ট অ্যান্ড পলিটিক্স পত্রিকায় লেখালিখি বা নানা আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাষান্তরের কাজে শরিক নাথালি। তাঁর ক্লাসঘরেও মঙ্গোলিয়া থেকে মেক্সিকোর শিক্ষার্থী। প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়, নিউ আলিপুর কলেজে ভাষান্তর ও কবিতা নিয়ে তিনি আলোচনা করেছেন। আজ, শুক্রবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে নাথালির বক্তৃতা।

    বিশুদ্ধতার বদলে আমেরিকান ইংরেজির একযোগে নানা ভাষাকে আঁকড়ে থাকা উপভোগ করেন এই কবি। অতিমারির আগে বছর বছর বেথলেহেমে যেতেন। এখনও ওয়েস্ট ব্যাঙ্কের নানা শহরে আত্মীয়েরা রয়েছেন। বললেন, ‘‘কখনও ভাবি প্যালেস্তাইনি হয়ে নিরাপদে বাঁচাটাই গ্লানির! আবার আমার কণ্ঠস্বরটাও গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়।’’

    গাজ়াবাসীদের প্রতি ট্রাম্পের নিষ্ঠুর মন্তব্য প্রসঙ্গে চোখমুখ কঠিন হয় নাথালির। বলেন, ‘‘আমি তো শুধু গাজ়ায় ধারাবাহিক ভাবে জমি দখলই দেখেছি। এখনও ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক অবরুদ্ধ। পাশাপাশি শহরের মধ্যেও পাঁচিল। এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদই সময়ের দায়।’’

    রাজনীতির দুর্বিপাকে ছিটকে যাওয়া পরিবারের মেয়ের বসত যেন এক বিচ্ছেদের ভাষার আখরেই। বললেন, ‘‘কম বয়সে পরিবারের প্রতিটা বিদায় মুহূর্তই মহাকাব্যিক মনে হত। এখন বিচ্ছেদের সঙ্গে বোঝাপড়া শিখেছি। দেশ হারিয়ে প্রিয়জনের থেকে দূরে গিয়ে দুনিয়াটাই আমার দেশ হয়ে উঠেছে।’’

  • Link to this news (আনন্দবাজার)