শেয়ালের উৎপাতে ছাড়া পেল অপহৃত! ভেস্তে গেল মুক্তিপণ আদায়ের ছক...
আজকাল | ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
মিল্টন সেন,হুগলি,৭ ফেব্রুয়ারি: অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের মুহূর্তে শেয়ালের উৎপাত। ভেস্তে গেল ছক। অপহৃত যুবককে উদ্ধার করল পুলিশ। বিদেশে কাজ পাইয়ে দেওয়ার নাম করে যুবককে ডেকে অপহরণ করা হয়। চন্ডিতলা থেকে অপহরণ করে যুবককে নিয়ে আসা হয় পরিত্যক্ত সাহাগঞ্জের ডানলপ কারখানায়। কারখানা সংলগ্ন জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে যুবককে গাছে বেঁধে বেধড়ক মারধর করা হয়। এরপর মারধরের লাইভ ভিডিও দেখিয়ে পরিবারের কাছে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করেন অপহরণকারীরা। জানা যায়, এই কার্যকলাপ চলাকালীন বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে হয়ে যায়। শব্দ পেয়ে জঙ্গলের চারদিক থেকে দলে দলে শেয়াল ধেয়ে আসে। ভয় পেয়ে সেখান থেকে পালায় অপহরণকারীরা। কোনও রকমে বাঁধন খুলে দৌড়ে রাস্তায় পৌঁছন যুবক। স্থানীয়দের সাহায্যে খবর দেন থানায়। চন্ডীতলা থানার পুলিশ পৌঁছে উদ্ধার করল অপহৃত যুবককে। অভিযুক্তদের খোঁজে শুরু হয়েছে তল্লাশি।
জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার সকালে অপহরণ করা হয় চন্ডীতলা থানার অন্তর্গত নবাবপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ছিটপুকুরের নাসিরউদ্দিন মল্লিককে।নাসিরউদ্দিনের দাবি, ওই দিন সকাল দশটা নাগাদ তার পরিচিত ভগবতীপুর এলাকার সাফাজুল মন্ডল তাঁকে ফোন করে ডাকেন। বলে তাঁকে সৌদি আরবে সোনার গহনা তৈরির কাজ দেবেন। আরবে যাঁর কাছে তাঁর কাজ হবে, তিনি ব্যান্ডেলে এসেছেন। এই বলে তাঁকে নিয়ে বালি রেল স্টেশন থেকে ট্রেন ধরে ব্যান্ডেল পৌঁছন। বেলা সাড়ে ১২ টা নাগাদ ব্যান্ডেল থেকে সাফাজুল সঙ্গে এক ব্যক্তি তাঁকে বাইকে চাপিয়ে ডানলপ কারখানা সংলগ্ন পরিত্যক্ত জঙ্গলে নিয়ে যায়। সেখানে আগে থেকেই আরও চারজন উপস্থিত ছিল। পৌঁছনোমাত্রই সকলে মিলে তাঁকে গাছে বেঁধে ফেলে। তারপর মারধর শুরু করে। মোট ৬ জন দুষ্কৃতী মিলে তাঁকে মারধর করে। ভিডিও কল করে মারধরের ভিডিও দেখায় মুম্বইয়ে কর্মরত তাঁর ছেলেকে। দু'লক্ষ টাকা দাবি করে ছেলের কাছে। একইসঙ্গে ফোন করে নাসিরুদ্দিনের স্ত্রীকে। তাঁর কাছেও মুক্তিপণ বাবদ পাঁচ লক্ষ টাকা দাবি করে। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে যায় টাকার দাবিতে, এমনকী অত্যাচারও চলতে থাকে। সন্ধ্যে হতেই চার দিক থেকে ভেসে আসতে থাকে শেয়ালের শব্দ। রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ এক দল শেয়াল ধেয়ে আসে ওই জায়গার দিকে। অনেক শেয়াল জড়ো হতে দেখে নাসিরুদ্দিনকে ফেলে পালান দুষ্কৃতীরা। এর পর কোনও রকমে বাঁধন খুলে লোকালয়ে এসে এলাকার মানুষের কাছে সাহায্য চায় নাসির। এলাকার মানুষ থানায় ফোন করলে চন্ডিতলার থানার পুলিশ সেখানে পৌঁছে নাসিরকে উদ্ধার করে প্রথমে চুঁচুড়া হাসপাতালে নিয়ে যায়। চিকিৎসা করায়। শুক্রবার তাঁকে ফিরিয়ে চন্ডিতলায় নিয়ে যায়। এদিন সেই ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে নাসিরউদ্দিনের চোখে মুখে আতঙ্কের ছাপ। চন্ডীতলা থানায় একটা লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। অভিযুক্তদের খোঁজ শুরু করেছে পুলিশ। একইসঙ্গে অপহরন করা এবং মুক্তিপন চাওয়ার বিষয়টিও খতিয়ে দেখছে তদন্তকারী পুলিশ।