অর্ণব আইচ: হর্ন বাজানোর প্রতিবাদ করতে গিয়ে রাতের শহরে রীতিমতো ‘স্ট্রিট ফাইটিং’! নিখুঁত স্টাইলে চলল ‘পাঞ্চ’, ‘কিক’, পরপর ঘুসি। পদাঘাতে কারও ভাঙল হাড়, কারও মুখ ফাটল, কারও বা আঘাত লাগল চোখে। এভাবে জখম হলেন তিনজন। পুলিশের অভিযোগ, এর সঙ্গে হেলমেট দিয়েও মারা হয় প্রতিবাদীদের। ওই ব্যক্তিদের চোখে, মুখে গুরুতর আঘাত লাগে। এই অভিযোগে বাইকের নম্বরের সূত্র ধরে কিক বক্সিংয়ের জাতীয়স্তরের চ্যাম্পিয়নকে গ্রেপ্তার করল আলিপুর থানার পুলিশ।
জানা গিয়েছে, ধৃত ওই যুবকের নাম আমন চৌধুরী, একবালপুরের বাসিন্দা। তার পরিবারের অভিযোগ, তিন গাড়ি আরোহী প্রচণ্ড মদ্যপ অবস্থায় প্রথমে আমনকে অশ্লীল গালিগালাজ করেন ও তাঁর উপর হামলা চালান। তারই পালটা হিসেবে ওই ব্যক্তিদের মারধর করেছেন আমন। পুলিশ জানিয়েছে, আমন শুধু জাতীয় স্তরের কিক বক্সার নন, কলকাতার একাধিক জায়গায় কিক বক্সিং শেখানও। ঘটনা যেদিন ঘটে অর্থাৎ বুধবার রাত পর্যন্ত তিনি কিক বক্সিংয়ের ক্লাস নেন। এরপর একবালপুরে নিজের বাড়ি ফিরছিলেন। আলিপুরের এসবিআই মোড়ের কাছে লাল সিগন্যালে একটি গাড়ি দাঁড়ায়। সিগন্যাল সবুজ হয়ে যাওয়ার পরও গাড়িটি চলতে শুরু করেনি। গাড়ির পিছনেই বাইক নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন আমন।
পুলিশের কাছে আসা অভিযোগ অনুযায়ী, পিছন থেকে আমন ক্রমাগত বাইকের হর্ন বাজাচ্ছিলেন। রাত ১১টার পর ক্রমাগত হর্ন বাজানোর কারণে শব্দ দূষণের প্রতিবাদ করেন গাড়ির তিন আরোহী। তাঁরা গাড়ি থেকে নেমে এসে হর্ন বাজানো নিয়ে প্রশ্ন করেন। ওই আরোহীদের সঙ্গে আমনের বচসা হয়। রাস্তার উপর শুরু হয় গোলমাল। অভিযোগ, তারই জেরে রাস্তার উপরই ‘স্ট্রিট ফাইটিং’ শুরু করেন ওই কিক বক্সার। তিনি তিনজন ‘প্রতিপক্ষ’কে রাস্তার উপরই মারধর করতে থাকেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা পুলিশকে জানান, মার খেয়ে রাস্তায় দৌড়াদৌড়ি করছিলেন তিনজন। রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁরা রাস্তায় পড়ে যাওয়ার পর আমন তাঁর বাইক নিয়ে বেরিয়ে যান। আহতরা রাতেই হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা করান। বৃহস্পতিবার তাঁরা আলিপুর থানায় গিয়ে অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ এলাকার সিসিটিভি দেখে তদন্ত করে বাইকের নম্বর পান। তারই সূত্র ধরে একবালপুরে আমনের বাড়িতে পুলিশ হানা দেয়। তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। শুক্রবার আলিপুর আদালতে তোলা হলে আমন চৌধুরীকে ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক।
যদিও আমনের পরিবারের লোকেদের অভিযোগ, মদ্যপ অবস্থায় পেশায় ব্যবসায়ী, কসবার বাসিন্দা ওই ব্যক্তিরা ইচ্ছাকৃতভাবেই গাড়ি রাস্তায় দাঁড় করিয়ে রাখেন। পিছন থেকে হর্ন দিয়ে গাড়িটিকে যেতে বলায় বাইরে বেরিয়ে এসে আমনকে অশ্লীল গালিগালাজ শুরু করেন তাঁরা। আমন বারণ করলে তাঁরাই আমনকে ধাক্কাধাক্কি শুরু করেন। এর পরই আমন তাঁদের মারেন। পরিবারের লোকেদের দাবি, ওই ব্যক্তিরা আমনকে গালিগালাজ ও ধাক্কাধাক্কি করার কারণেই ‘শান্ত মেজাজে’র আমন ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। জানা গিয়েছে, গত কয়েক বছর ধরে এই রাজ্যের হয়ে বিভিন্ন রাজ্যে জাতীয় স্তরে কিক বক্সিং চ্যাম্পিয়নশিপে যোগ দেন আমন। প্রচুর পুরস্কারও পেয়েছেন। জাতীয় চ্যাম্পিয়নও হয়েছেন। বিদেশে গিয়ে কিক বক্সিং প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার পরিকল্পনাও ছিল তাঁর। কলকাতা পুলিশের আয়োজিত প্রকল্পে কিক বক্সিং প্রশিক্ষণও দিয়েছেন। এলাকার সিসিটিভি দেখে এই ঘটনাটির তদন্ত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।