আরজি করে মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় দোষী সঞ্জয় রায়ের ফাঁসি চেয়ে হাই কোর্টে পশ্চিমবঙ্গ সরকার যে আবেদন জানিয়েছিল, তা শুক্রবার খারিজ হয়ে গিয়েছে। এই সংক্রান্ত সিবিআইয়ের আবেদনটি গ্রহণযোগ্য, জানিয়েছে বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মহম্মদ শব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চ। কেন রাজ্যের আবেদন গ্রহণযোগ্য বলে মনে করল না আদালত? বক্তব্য এক হলেও কেন সিবিআইয়ের আবেদন মান্যতা পেল, রায়ের নথিতে তা বিস্তারিত ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
আদালত জানিয়েছে, আরজি কর মামলার তদন্ত করেছে কেন্দ্রীয় সংস্থা সিবিআই। তাই এ ক্ষেত্রে নিম্ন আদালত যে শাস্তি দিয়েছে, তা যথেষ্ট নয় বলে মনে করলে রায় চ্যালেঞ্জ করার উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ কেন্দ্রীয় সরকারই।
রাজ্যের তরফে আবেদন করার যুক্তি হিসাবে ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতার (বিএনএসএস) সংশ্লিষ্ট ধারায় উল্লিখিত ‘এ ছাড়াও’ বা ‘অলসো’ শব্দের অবতারণা করা হয়েছিল। আদালত জানিয়েছে, বিএনএসএস-এর ধারা অনুযায়ী রাজ্য এই সংক্রান্ত আবেদন করতে পারে তখনই, যদি সিবিআই আবেদন করতে ইচ্ছুক না হয়। এ ক্ষেত্রে কেন্দ্র আবেদন করতে চাইছে। তাই রাজ্যের মামলাটি গ্রহণযোগ্য নয়।
সঞ্জয়ের ফাঁসি চেয়ে সিবিআইয়েরও আগে হাই কোর্টে আবেদন করেছিল রাজ্য। তা নিয়ে প্রথম থেকেই আলোচনা চলছে। অনেকেই বলছেন, হাই কোর্টে সবার আগে মামলা করার এই সিদ্ধান্ত যতটা না প্রশাসনিক, তার চেয়ে অনেক বেশি রাজনৈতিক। কারণ, আরজি কর-কাণ্ডে রাজ্য সরকার প্রথম থেকেই ‘ব্যাকফুটে’ ছিল। এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর হাসপাতালের পরিকাঠামো, চিকিৎসক এবং মহিলা কর্মীদের সুরক্ষা নিয়ে সরকারের ভূমিকায় প্রশ্ন ওঠে। দীর্ঘ দিন ধরে কলকাতার রাস্তায় চলে স্বতঃস্ফূর্ত নাগরিক আন্দোলন। শিয়ালদহ আদালতে রায় ঘোষণার পর সঞ্জয়ের আরও কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়ে তাই আগেভাগেই হাই কোর্টে যায় রাজ্য।
রাজ্যের আবেদনের বিরোধিতা করে সিবিআইয়ের বক্তব্য ছিল, তারাও সঞ্জয়ের সর্বোচ্চ শাস্তি চেয়েছে। কিন্তু নির্যাতিতার পরিবার, তদন্তকারী সংস্থা কিংবা দোষী নিজে হাই কোর্টের দ্বারস্থ না হলে, রাজ্য কী ভাবে এই আবেদন করতে পারে? উদাহরণ হিসাবে লালুপ্রসাদ যাদবের মামলার প্রসঙ্গও টেনে এনেছিলেন ডেপুটি সলিসিটর জেনারেল (সিবিআই আইনজীবী) রাজদীপ মজুমদার। জানিয়েছিলেন, লালুপ্রসাদের মামলার ক্ষেত্রেও রাজ্যের আবেদন গ্রহণযোগ্য হয়নি। শুক্রবার আদালত সিবিআইয়ের এই যুক্তিকেই মান্যতা দিয়েছে।
সিবিআইয়ের মামলা ধরেই এ বার হাই কোর্টের শুনানি এগোবে। আদালত এই সংক্রান্ত নোটিস জারি করেছে। ট্রায়াল কোর্টের থেকে নথি (রেকর্ড) তলব করা হয়েছে। ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৬৪ এবং ৬৬ নম্বর ধারা অনুযায়ী, আবেদনের ছ’মাসের মধ্যে মামলার নিষ্পত্তি করতে হবে। তাই ট্রায়াল কোর্ট থেকে নথি আসার দু’সপ্তাহের মধ্যে পেপারবুক তৈরি করতে বলেছে আদালত। তার পরে সংশ্লিষ্ট বেঞ্চে এই মামলার শুনানি শুরু হবে।
আরজি করের ঘটনায় সিবিআইয়ের তদন্তে প্রথম থেকেই অসন্তোষ প্রকাশ করেছিল নির্যাতিতার পরিবার। তারা সুপ্রিম কোর্টে এই সংক্রান্ত আবেদনের দ্রুত শুনানির আর্জি জানিয়েছিল। কিন্তু শুক্রবার তাদের আবেদনটি খারিজ হয়ে গিয়েছে। প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্নার বেঞ্চ জানিয়েছে, এ ক্ষেত্রে তাড়াহুড়ো করার কোনও প্রয়োজন নেই। নির্ধারিত দিনে আগামী ২৭ মার্চ মামলাটির শুনানি হবে।