• সংসদে অভিষেকের বাজেট বক্তৃতায় কেন্দ্রকে বিঁধতে ত্রিফলা: উপমায় রামায়ণ, জিও এবং থ্রি ইডিয়ট্‌স
    আনন্দবাজার | ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের পেশ করা বাজেটের উপর বৃহস্পতিবার আলোচনা করার কথা ছিল তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। কিন্তু দফায় দফায় সংসদ মুলতুবি হয়ে যাওয়ায় বলতে পারেননি। শুক্রবার বাজেট বিতর্কে অংশ নিয়ে কেন্দ্রকে বিঁধতে ত্রিফলা আক্রমণ করলেন ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ। তাতে যেমন রয়েছে ‘রামায়ণ’, তেমনই রয়েছে ‘জিও’ নেটওয়ার্ক এবং আমির খান অভিনীত ‘থ্রি ইডিয়ট্‌স’ ছবির প্রসঙ্গ।

    অভিষেক আলোচনার শুরুতেই রামায়ণের প্রসঙ্গ আনেন। তিনি বলেন, ‘‘এই বাজেট দেখে আমার রামায়ণের কথা মনে পড়ছে। রামায়ণে মারীচ যেমন সোনার হরিণ দেখিয়ে মা সীতাকে পথভ্রষ্ট করেছিল, এখানেও সরকার তেমনই করেছে। শুধু মরীচিকা!’’ সেখানেই না থেমে অভিষেক বলতে থাকেন, ‘‘এই সরকারের আমলে রাবণ হয়ে হাজির হয়েছে ক্রোনি ক্যাপিটালিস্টরা (সুবিধাভোগী পুঁজিপতি)।’’ কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদীর সরকারকে ‘রবিনহুডের বিপরীত মডেল’ বলেও কটাক্ষ করেন অভিষেক। তৃণমূল সাংসদের কথায়, ‘‘রবিনহুডের কাহিনি আমরা সকলেই জানি। যিনি বড়লোকের থেকে নিয়ে গরিবদের বিলিয়ে দিতেন। এই সরকার তার ঠিক উল্টো। এরা গরিবের থেকে কেড়ে নিয়ে বড়লোকদের আরও বড়লোক করছে।’’

    অভিষেক রিলায়্যান্সের জিও সংযোগের শুরুর কথা মনে করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘‘জিও-র ফ্রি ডেটা প্ল্যান এক সময় কোটি কোটি গ্রাহককে প্রলুব্ধ করেছিল। এখন সেই জিও-ই বিনামূল্যে ইন্টারনেট ব্যবহার তুলে দিয়েছে। ফলে মোবাইলের সংযোগ টিকিয়ে রাখাটাই গ্রাহকদের অনেকের কাছে বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে! এই সরকারও নানা ফিকির করে মানুষকে প্রলুব্ধ করেছে। তার পর জাঁতাকলে পিষছে।’’ এই বাজেটে আয়কর ছাড়ের ঊর্ধ্বসীমাকে কেন্দ্রীয় সরকার বড় করে দেখাতে চাইছে। পাল্টা পরিসংখ্যান দিয়ে অভিষেক দাবি করেন, ‘‘বাজেটে বার্ষিক ১২ লাখ টাকা আয় পর্যন্ত করে ছাড় দেওয়া জিও-র ওই প্ল্যানের মতো। এক দিকে ছাড় দিয়ে অন্য দিক দিয়ে টাকা তুলে নেওয়া হচ্ছে।’’

    রাজকুমার হিরানি পরিচালিত বলিউডের ওই সুপারহিট ছবিতে দেখানো হয়েছিল, শিক্ষাব্যবস্থায় নম্বরের জন্য দৌড়তে গিয়ে ছাত্রছাত্রীদের বুনিয়াদি শিক্ষার ভিতটাই গড়ে উঠছে না। ছবিতে দেখানো কলেজ অধ্যক্ষ ‘ভাইরাস’-এর কাজের সঙ্গে বর্তমান সরকারের তুলনা টেনে অভিষেক বলেন, ‘‘এই বাজেট আমাকে ‘থ্রি ইডিয়ট্‌স’-এর কথা মনে করাচ্ছে। যেখানে আমির খান অভিনীত ‘র‍্যাঞ্চো’ চরিত্রটি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিল পুঁথিগত শিক্ষাব্যবস্থার ত্রুটি। একই ভাবে এই সরকার সেই ভাইরাসের (এখানে হাজির ভাইরাসের কথা বলছি না। ছবির চরিত্রের কথা বলছি) কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। তাঁর কথায়, ‘‘এই সরকার মানুষের প্রকৃত উন্নতিসাধনের পরিবর্তে নিজেদের চকচকে ভাবমূর্তি বজায় রাখতেই বেশি আগ্রহী।’’

    প্রায় ৩৫ মিনিট বক্তৃতা করেন অভিষেক। ফের এক বার বাংলার প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের বঞ্চনা নিয়ে সরব হন তৃণমূল সাংসদ। বলেন, ‘‘এই বাজেট বাংলা বিরোধী। কেন্দ্রীয় সরকার বাংলার মানুষকে ভাতে মারতে চাইছে। কিন্তু কেন্দ্র টাকা না দিলেও আবাস, রেগার মজুরির টাকা রাজ্য মিটিয়েছে নিজেদের তহবিল থেকে। বাংলা মাথা নত করতে জানে না।’’

  • Link to this news (আনন্দবাজার)