দিন দুই আগে বীরভূমের জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল (কেষ্ট)-এর হাতে কৃষ্ণের বাঁশি তুলে দিয়েছিলেন সাঁইথিয়াবাসী। সেই বাঁশিতে ফুঁ দিয়ে ‘কেষ্টভূমে’ প্রেমের বার্তা দিয়েছিলেন ওই তৃণমূল নেতা। এ বার সেই সাঁইথিয়ার মাটিতেই বীরভূম জেলা পরিষদের সভাধিপতি কাজল শেখের হাতে তুলে দেওয়া হল রুপোর সুদর্শন চক্র। সেই উপহার হাতে নিয়ে ‘রাজনৈতিক শত্রুদের’ বার্তা দিয়ে রাখলেন কেষ্টর ‘ভাই’ কাজল।
গত ১ জানুয়ারি নানুরে মিলনমেলায় কাজলের মাথায় পাঁচ কিলোর রুপোর মুকুট উঠেছিল। যে মুকুট একটা সময়ে কেষ্টর মাথায় শোভা পেত, তা কাজল পাওয়ার পর তৃণমূলের অন্দরে চর্চা শুরু হয়েছিল। শুক্রবার সাঁইথিয়ায় মিলন উৎসবে রুপোর সুদর্শন চক্র উপহার পেয়ে কাজল জানালেন তিনি সম্মানিত। তাঁর কথায়, ‘‘এই চক্রের ব্যবহার তো আমি ১৯৯৮ সাল থেকেই করছি। রাজনৈতিক শত্রুদের পরাস্ত করার জন্য।’’ জেলা তৃণমূলে গোষ্ঠীকোন্দলের আবহে কাজলের এই মন্তব্য ‘তাৎপর্যপূর্ণ’।
গত ৫ ফেব্রুয়ারি সাঁইথিয়ায় গোপীনাথ মন্দিরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে হাজির হয়েছিলেন অনুব্রত। সেখানে তাঁর হাতে রুপোর বাঁশি তুলে দিয়েছিলেন অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তারাই। সেই বাঁশি হাতে হাসি মুখে দাঁড়িয়ে কেষ্ট বলেন, ‘‘বীরভূম জেলা যেন সুন্দর ভাবে সেজে থাকে। কোনও দিন যেন হানাহানি না-হয়। মানুষের সঙ্গে মানুষের ঝগড়া না-হয়। হৃদয়ের যেন মিল থাকে।’’ ওই তৃণমূল নেতা আরও বলেন, ‘‘গোপীনাথ, আমরা যদি কোনও ভুল করি, তুমি বুঝিয়ে দেবে। বলে দিও, এটা তোমার ভুল। এই রাস্তায় চলা যায় না। আগে মানুষকে ভালবাসো। এতে নিজের ভাল হবে। এটা আমার কথা নয়। এটা গোবিন্দের কথা। এটা নারায়ণের কথা।’’
সুদর্শন চক্র থাকে বিষ্ণুর হাতে। ঋগ্বেদে সুদর্শন চক্রকে সময়ের চাকা হিসাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। অন্য দিকে, বীরভূম জেলা তৃণমূলে কেষ্টর যে আর একচ্ছত্র ক্ষমতা নেই, তা আড়ালে তাঁর দলেরই একাংশ বলেন। বস্তুত, গরু পাচার মামলায় বছর দুয়েক জেলবন্দি থাকার সময়ে জেলা তৃণমূলে বেশ কয়েকটি মুখ ‘বীরভূমের নেতা’ হিসাবে উঠে এসেছে। তার মধ্যে এগিয়ে কাজলই। যাঁর সঙ্গে অনুব্রতের ‘মধুর সম্পর্ক’ সর্বজনবিদিত। তাই কেষ্টর হাতে বাঁশি দেওয়ার পরে কাজলের সুদর্শন চক্র প্রাপ্তির ঘটনায় তৃণমূলের অন্দরেই মন্তব্য ঘোরাফেরা করছে— ‘‘সময় গড়াচ্ছে।’’