বিস্ফোরণের পরেই জখম অবস্থায় গা ঢাকা দিয়েছিলেন। বার বার তাঁর মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন বদলাচ্ছিল। শেষে মোবাইলটি বন্ধ করে দেন নদিয়ার কল্যাণীর বাজি কারখানার মালিক খোকন বিশ্বাস। তবে শেষরক্ষা হয়নি। প্রায় সাত ঘণ্টা ‘লুকোচুরি’র পর কল্যাণী বিস্ফোরণকাণ্ডে গ্রেফতার হলেন খোকন। কল্যাণী থানার পুলিশ সূত্রে খবর, খোকনের এক পরিচিতের মাধ্যমে খবর পেয়ে শুক্রবার সন্ধ্যায় তাঁকে ধরা হয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনের নজর এড়িয়ে অবৈধ বাজি কারখানা তৈরি করেছিলেন খোকন। শুক্রবার দুপুরে যে কারখানায় বিস্ফোরণে চার শ্রমিক মারা গিয়েছেন। গুরুতর আহত অবস্থায় এক জনের চিকিৎসা চলছে হাসপাতালে।
শুক্রবার দুপুরে নদিয়ার কল্যাণীর রথতলায় ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা আচমকা বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে। পরে জানা যায় বিস্ফোরণের উৎসস্থল স্থানীয় বাজি কারখানা, যার মালিক খোকন। পুলিশ সূত্রের খবর, অনুমতি ছাড়াই খোকন একটি বাড়ি ঘিরে বাজি তৈরির মশলা জড়ো করে ব্যবসা শুরু করেন। আগুন নেভানোর সময় দমকলও জানায় জানিয়ে বৈধ ছিল না ওই বাজি কারখানা। যদিও স্থানীয় পুরপ্রতিনিধি দাবি করেন, বিস্ফোরণস্থলটিতে বাজি কারখানা নয়, বাজির দোকান ছিল। পুলিশ অবশ্য অবৈধ ভাবে বাজি কারখানা চালানো এবং অনিচ্ছাকৃত খুনের দায়ে খোকনকে গ্রেফতার করেছে।
জানা যাচ্ছে, শুক্রবার দুপুরে বিস্ফোরণের পর থেকে খোকনের খোঁজ চলছিল। কোথাও তাঁকে খুঁজে না পেয়ে প্রৌঢ়ের মোবাইলের টাওয়ার লোকেশনের দিকে নজর রাখা শুরু করেন তদন্তকারীরা। এক সময়ে বোঝা যায়, কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ের আশপাশে রয়েছেন খোকন। পরে জানা যায়, তিনি নৈহাটির দিকে যাচ্ছেন এবং পুলিশ তাঁর গতিবিধি নজর রাখছে বুঝতে পেরে ফোন বন্ধ করে দেন খোকন। শেষ পর্যন্ত খোকনের এক সঙ্গীর মাধ্যমে তাঁর হদিস পায় পুলিশ। নির্দিষ্ট ঠিকানায় হানা দিয়ে তাঁকে পাকড়াও করে পুলিশ। কী ধরনের বিস্ফোরক বা মশলা কারখানায় মজুত ছিল, তা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। খোকনের সঙ্গে ওই ব্যবসায় আরও কেউ যুক্ত কি না, সেই খোঁজও চলছে। সেখানে মজুত করা ছিল? ইতিমধ্যে খোকনকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছেন রানাঘাট পুলিশ জেলার উচ্চপদস্থ আধিকারিকেরা। অন্য দিকে, বিস্ফোরণস্থলে গিয়েছেন রানাঘাট পুলিশ জেলার সুপার সানি রাজ। বিস্ফোরণস্থল মুড়ে ফেলা হয়েছে সিসি ক্যামেরায়। এসটিএফের একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়েছে। জানা যাচ্ছে, শনিবার সকাল হলেই ঘটনাস্থলে যাবেন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা।
শুক্রবার সন্ধ্যাতেও ঘটনাস্থলে গিয়ে বাজি তৈরির আধপোড়া সরঞ্জাম দেখা গিয়েছে। স্থানীয়দের দাবি, দুপুর দেড়টা নাগাদ ওই বিস্ফোরণের অভিঘাতে কারখানাটির টিনের ছাউনি উড়ে গিয়েছে। দেওয়ালের একাংশ ভেঙেছে। ছিটকে পড়েন কারখানার ভিতরে থাকা লোকজন। তাঁর মধ্যে খোকনও ছিলেন। স্বাভাবিক ভাবে এই ঘটনায় রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়ে গিয়েছে। এই ঘটনার জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে দায়ী করেছেন কল্যাণীর বিধায়ক অম্বিকা রায়। বিজেপি এনআইএ তদন্তের দাবি করেছেন। অন্য দিকে, কল্যাণী শহর তৃণমূলের সভাপতি বিপ্লব দে জানান, যা ঘটেছে দুর্ভাগ্যজনক। পুলিশপ্রশাসনের তদন্তে তাঁরা আশা রাখছেন। দোষী যে-ই হোন, আইনত তাঁর শাস্তি হবে। রানাঘাট পুলিশ জেলার সুপার সানি বলেন, ‘‘বিস্ফোরণকাণ্ডে মূল অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁকে হেফাজতে নিয়ে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করবে। এলাকার নিরাপত্তা বাড়ানো হচ্ছে। প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নেওয়া হবে।’’