• সাইকেলে চেপে ভাজা বাদামের গান গেয়ে নজরে গুরুপদ
    বর্তমান | ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • ব্রতীন দাস, জলপাইগুড়ি: ‘বাদাম বাদাম...আমার কাছে নাই কাঁচা বাদাম, আছে শুধু ভাজা বাদাম...।’ 


    কিংবা ‘আমার বাড়ি জলপাইগুড়ির ধাপগঞ্জে / সাইকেলে গান গেয়ে বাদাম বিক্রি করি গ্রামেগঞ্জে।’ 


    দক্ষিণবঙ্গের বীরভূমে কাঁচা বাদামের গান গেয়ে ‘সেলিব্রেটি’ হয়ে ওঠা ভুবন বাদ্যকরের পর এবার উত্তরে নজর কাড়ছেন ‘ভাজা বাদাম কাকু’ গুরুপদ সরকার। সাইকেলে লাগানো রয়েছে ছোট্ট বক্স। সঙ্গে রয়েছে মাইক্রোফোন। গান গেয়ে ঘুরে ঘুরে বাদাম বিক্রি করেন। তাঁর গান শুনতে ভিড় জমে যায়। সঙ্গে বিক্রিবাটাও চলে। 


    ছোটবেলায় বাবা-মা মারা যান। কোনওদিন স্কুলের চৌকাঠে পা রাখেননি। কিন্তু তাঁর ঝুলিতে রয়েছে একাধিক গান। নিজেই গান লেখেন, সুর দেন। ভুবন বাদ্যকরের সঙ্গে গুরুপদর গানের কথার মিল না থাকলেও রয়েছে সুরের সামঞ্জস্য। ধাপগঞ্জ থেকে জলপাইগুড়ি শহর, এমনকী কখনও কখনও শিলিগুড়িতে সাইকেল চালিয়ে পৌঁছে যান। বয়স ৬৪। কিন্তু শরীরে এতটুকু ক্লান্তির ছাপ নেই। রোজ সকাল ৮টা নাগাদ বাড়ি থেকে সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। সঙ্গে থাকে ভাজা বাদামের প্যাকেট। স্কুল-কলেজের সামনে থেকে হাটবাজার, অফিস-আদালত চত্বর, বাসস্ট্যান্ড সর্বত্রই ঘুরে ঘুরে বাদাম বিক্রি করেন। পৌঁছে যান সীমান্তেও। বিএসএফ জওয়ানদের গান শুনিয়ে বিক্রি করেন ভাজা বাদাম। বললেন, ধাপগঞ্জ থেকে জলপাইগুড়ি শহরে আসা-যাওয়া ১৬ কিমি। তারপর তো সারাদিন ঘুরতে থাকি। কমবেশি দিনে ৪০ কিমি সাইকেল চালাই। 


    শরীরে বাসা বাঁধেনি প্রেশার, সুগার কিংবা কোলেস্টেরল। নিয়ম করে ওষুধ খাওয়ার হ্যাঁপা নেই। গুরুপদর কথায়, বাড়িতে মনসাদেবীর মন্দির রয়েছে। সকালে বিগ্রহ প্রণাম করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ি। বাড়ি ফিরতে রাত হয়ে যায়। 


    গুরুপদ বাড়িতে নিজেই বাদাম ভাজেন। সেই বাদাম প্যাকেট করেন। তাঁকে সাহায্য করেন স্ত্রী অনিতা। প্রথম জীবনে কাঠমিস্ত্রির কাজ করলেও বছর পাঁচেক ধরে বাদাম বিক্রি করছেন। গান গেয়ে বাদাম বিক্রির ভাবনা কেন? গুরুপদর কথায়, বীরভূমে কাঁচা বাদামের গান গেয়ে ভুবন বাদ্যকর সেলিব্রিটি হয়ে ওঠার পর লোকজন আমাকে দেখে বলতেন, কাঁচা বাদাম আছে নাকি? আমি বলতাম, আমার কাছে তো কাঁচা বাদাম নেই, আছে শুধু ভাজা বাদাম। বলা কথাটা ধীরে ধীরে গান হয়ে যায়। লোকজনও আমার গান শুনে খুশি হচ্ছে দেখে আরও গান বাঁধতে থাকি। এখন খুদে স্কুল পড়ুয়া থেকে অফিস-আদালতের কর্মীরাও গান শোনার আবদার করেন। আমিও গান শুনিয়ে আনন্দ পাই। 


    গুরুপদ বলেন, ছেলেমেয়েরা আমাকে রাস্তায় দাঁড় করিয়ে কখনও রিল বানায়। বিষয়টিতে আমিও বেশ মজা পাই। ১০০ গ্রাম ভাজা চীনাবাদামের প্যাকেট ২০ টাকা। তবে ১০ টাকার প্যাকেটও রয়েছে। ভাজা বাদামের গানে বিক্রিবাটা কিছুটা হলেও বেড়েছে।  
  • Link to this news (বর্তমান)