• ফের ছেলের হাতে মা খুন, সম্পত্তি লিখে না দেওয়ায় আক্রোশ
    বর্তমান | ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, শিলিগুড়ি: স্বামীর গড়া সম্পত্তি। তা বিক্রি করতে নারাজ মা। এজন্যই গুণধর ছেলের হাতে খুন হলেন গর্ভধারিণী। শুক্রবার ভরদুপুরে এমন নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ড ঘটেছে শিলিগুড়ি শহরে দুর্গাদাস কলোনিতে। মৃতের নাম মঞ্জু মহন্ত (৫৫)। অভিযোগ, বসতভিটা লিখে না দেওয়ায় বেধড়ক পেটানোর পর গলায় নারকেলের দড়ির ফাঁস দিয়ে তাঁকে খুন করেছে ছোট ছেলে। অভিযুক্তের নাম শ্রীকৃষ্ণ মহন্ত। এলাকায় এনিয়ে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়ায়। স্থানীয়রা অভিযুক্তকে ধরে পুলিসের হাতে তুলে দেন। 


    শিলিগুড়ির ডেপুটি পুলিস কমিশনার রাকেশ সিং বলেন, ওই মহিলাকে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে। অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সম্পত্তি নিয়ে বিবাদের জেরে ঘটনাটি ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে। ঘটনার সমস্ত দিক গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। 


    দুর্গাদাস কলোনিতে দুই ছেলেকে নিয়ে থাকতেন মঞ্জুদেবী। কাঠের দোতলা বাড়ি। এদিন দুপুরে বাড়িতে ছেলের সঙ্গে মঞ্জুদেবীর ঝামেলা শুরু হয়। পুলিস ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বেল দেড়টা নাগাদ জোর করে মঞ্জুদেবীকে ঘরে নিয়ে যায় তাঁর ছোট ছেলে শ্রীকৃষ্ণ। এরপর দরজা বন্ধ করে দেয়। কিছুক্ষণ পর বিকট চিৎকার করেন মঞ্জুদেবী। এরপর দরজা খুলে অভিযুক্ত পালানোর চেষ্টা করে। প্রতিবেশীরা তাকে ধরে ফেলেন। 


    স্থানীয়রা বলেন, মঞ্জুদেবীর মেয়ে বাড়িভাসায় থাকেন। দুপুরে তিনি মা’কে দেখতে এসেছিলেন। সেই সময় বসতভিটা বিক্রির জন্য দিদির কাছে তাঁর সই চায় শ্রীকৃষ্ণ। মা জীবিত থাকায় দিদি তা দিতে রাজি হননি। এর কিছুক্ষণ পরই ওই বাড়িতে মা ও ছেলের মধ্যে ঝামেলা বাধে। স্থানীয়দের অভিযোগ, বসতভিটা বিক্রির জন্য লিখে না দেওয়ায় মা’কে খুন করে পালানোর চেষ্টা করে শ্রীকৃষ্ণ। 


    দু’বছর আগে মঞ্জুদেবীর স্বামী পূর্ণ মহন্তর মৃত্যু হয়। দম্পতির তিন ছেলে এক মেয়ে। বড় ছেলে ভক্তিনগর থানা এলাকায় থাকেন। মানসিক ভারসাম্যহীন মেজ ছেলে ও ছোট ছেলে মঞ্জুদেবীর সঙ্গে থাকে। এদিন মঞ্জুদেবীর খুনের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে পুলিস। তারা দেহ উদ্ধার করে তা ময়নাতদন্তের জন্য উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। পুলিস ঘটনাস্থল থেকে দড়ি, লাঠি উদ্ধার করে। ঘটনার প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিসের সন্দেহ, সম্ভবত বিক্রির জন্যই বাড়ির হোল্ডিং নম্বর নিজের নামে করতে চেয়েছিল ধৃত। তাতে মঞ্জুদেবী রাজি না হওয়ায় খুনের ঘটনাটি ঘটেছে। 


    সংশ্লিষ্ট পাড়াটি ২০ নম্বর ওয়ার্ডে। খবর পেয়ে চলে আসেন স্থানীয় কাউন্সিলার অভয়া বসু। তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন যুবকের খাবারের ব্যবস্থা করেন। বলেন, স্থানীয়দের কাছ থেকে শুনেছি অভিযুক্ত মাদকাসক্ত। সম্পত্তি নিজের নামে করার জন্য মাঝেমধ্যেই বাড়িতে ঝামেলা করত। ওর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি পুলিসের কাছে জানিয়েছি। 


    প্রসঙ্গত, চলতি সপ্তাহের মঙ্গলবারই শিলিগুড়ির ১ নম্বর ওয়ার্ডে অজয় মল্লিক নামে এক যুবক তাঁর মাকে খুন করেছিল। শুক্রবার আবার একটি খুনের ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে শহরে। 


    (স্থানীয়দের জটলা। - নিজস্ব চিত্র।)
  • Link to this news (বর্তমান)