• অধ্যক্ষের মার শেষ রাতে! অবসরের দু’দিন আগে কলেজের জমি বেচলেন জলের দরে
    বর্তমান | ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: অবসর নেওয়ার দু’দিন আগে স্বয়ং প্রিন্সিপাল জলের দরে কলেজের বিপুল পরিমাণ জমি বিক্রি করে দিয়েছেন! এহেন অভিযোগকে ঘিরে তোলপাড় পূর্ব মেদিনীপুর। এগরা সারদা শশীভূষণ কলেজের ওই সম্পত্তি যাঁরা কিনেছেন, সেই তালিকায় শহরের দুই তৃণমূল নেতার আত্মীয় সহ অনেকেই আছেন। ওই দুই তৃণমূল নেতা কলেজেরই শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মী। এখনও পর্যন্ত সাতজন ক্রেতার খোঁজ মিলেছে। ওই ঘটনায় অস্বস্তি বাড়তেই আজ, শনিবার জরুরি ভিত্তিতে কলেজ পরিচালন কমিটির মিটিং ডাকা হয়েছে। গোটা ঘটনায় উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত চেয়ে শুক্রবার এগরা মহকুমা শাসকের অফিসে গণস্বাক্ষর সহ অভিযোগ জমা পড়েছে। মহকুমা শাসক মণজিৎ যাদব বলেন, ‘এগরা কলেজের নামে থাকা জমি বিক্রির অভিযোগ পেয়েছি। তার ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে।’


    গত ৩১ জানুয়ারি এগরা সারদা শশীভূষণ কলেজ থেকে অবসর নিয়েছেন প্রিন্সিপাল দীপককুমার তামলি। গত ২৮ জানুয়ারি কলেজের নামে থাকা এগরা পুরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডে রাজ্য সড়কের ধারে আকলাবাদ মৌজায় দুই ডেসিমাল এবং আরও একটি দাগে দেড় ডেসিমাল জমি বিক্রির ঘটনা ঘটেছে। বিক্রেতা হিসেবে কলেজের অধ্যক্ষ সই করেছেন। অদ্ভুতভাবে বাজার দরের তুলনায় এক-তৃতীয়াংশ কম দামে সম্পত্তি বিক্রি করা হয়েছে। দলিলে উল্লেখ, রাজ্য সড়কের ধারে দুই ডেসিমাল জমির বাজারমূল্য ১৫ লক্ষ ৫১ হাজার ৬৬৬ টাকা। যদিও ওই জমি পটাশপুরের টেপরপাড়ার বাসিন্দা পম্পা নন্দ কিনেছেন মাত্র ৫ লক্ষ ৫০ হাজার টাকায়। পম্পাদেবীর জামাই উদয় পাল এগরা শহর তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি। তিনি ওই কলেজের অশিক্ষক কর্মীও। এছাড়াও ওই মৌজায় আরও দেড় ডেসিমাল জমি কিনেছেন কসবা এগরার কৃষ্ণেন্দু মাইতি। দলিলে উল্লেখ, জমির বর্তমান বাজার মূল্য ১১ লক্ষ ৬৩ হাজার ৭৫০ টাকা। কিন্তু বিক্রি হয়েছে? মাত্র ৪ লক্ষ ১২ হাজার ৫০০ টাকায়। কৃষ্ণেন্দুবাবু এগরা পুরসভার ১৩ নম্বর ওয়ার্ড কমিটির তৃণমূলের সভাপতি গৌতম আচার্যের জামাই। গৌতমবাবু ওই কলেজের আংশিক সময়ের শিক্ষকও বটে।


    এছাড়াও এগরা পুরসভার জগন্নাথপুর মৌজায় প্রতি ডেসিমাল মাত্র ২০ হাজার টাকা দরে তিনজনকে ৮৭ ডেসিমাল জমি বিক্রি করা হয়েছে। জানা গিয়েছে, এগরা পুরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ডের তিন বর্গাদার পরেশ শীট, প্রফুল্ল শীট ও নিরঞ্জন শীট দীর্ঘদিন ধরে কলেজের সম্পত্তি দখল করে ছিলেন। তাঁদের প্রত্যেককে ২ লক্ষ ৪৫ হাজার টাকা করে দিয়ে দখলমুক্ত করা হয় ওই সম্পত্তি। গোটা ঘটনায় হইচই শুরু হতেই মোবাইল বন্ধ রেখে, ঘরে তালা ঝুলিয়ে চলে গিয়েছেন কলেজের অধ্যক্ষ দীপককুমার তামলি। গভর্নিং বডির সভাপতি তথা এগরার বিধায়ক তরুণকুমার মাইতি বলেন, ‘বিষয়টি নজরে এসেছে। কাল শনিবার গভর্নিং বডির জরুরি মিটিং ডাকা হয়েছে। তারপর যা বলার বলব।’ তৃণমূল নেতা গৌতম আচার্য বলেন, ‘আমার জামাই জমি কিনেছেন, একথা ঠিক। তবে, এনিয়ে কোনও মন্তব্য করব না।’ উদয় পালের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি কোনও মন্তব্য করতে চাননি। 


       
  • Link to this news (বর্তমান)