নিজস্ব প্রতিনিধি, বিধাননগর: ‘আমি বেরিয়ে যাচ্ছি।’ ছোট্ট চিরকুট লিখে বৃহস্পতিবার রাতে বাড়ি ছেড়েছিল অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী। বোনের সঙ্গে ঝগড়া হয়েছিল তার। রাতভর তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। শুক্রবার সকালে বাড়ি থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরে এক পরিত্যক্ত জায়গায় উদ্ধার হল ১৪ বছরের ওই কিশোরীর অর্ধনগ্ন মৃতদেহ। তাকে ধর্ষণের পর খুন করা হয়েছে বলে অনুমান। পাশ ফিরে পড়েছিল সে। গায়ে নীল-খয়েরি রঙের হুডি। কিন্তু, নিম্নাঙ্গে কোনও পোশাক ছিল না। মুখে আঘাতের চিহ্ন। মিলেছে রক্তের দাগও। নিউটাউনের লোহাপুল এলাকারএই ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। যদিও কীভাবে ঘটনাটি ঘটল, তার জট কাটেনি। ধর্ষণ-খুনের মামলা রুজু করে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিস। বিধাননগরের পুলিস কমিশনার মুকেশ বলেন, ‘বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। যে বা যারা এই অপরাধ ঘটিয়েছে, শীঘ্রই তাদের গ্রেপ্তার করা হবে। আমাদের পুরো টিম কাজ করছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পেলে তদন্তের আরও অগ্রগতি হবে।’
পুলিস ও স্থানীয় সূত্রে খবর, ওই কিশোরীর পরিবার নিউটাউনে ভাড়া থাকে। বাবা মার্চেন্ট নেভিতে কর্মরত। ভাড়া বাড়িতে মা, বোন এবং ওই কিশোরী থাকত। মৃতার মা পুলিসকে জানিয়েছেন, ‘বোনের সঙ্গে ঝগড়া করে বৃহস্পতিবার রাত ১০টা নাগাদ বড় মেয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। রাতভর অনেক খোঁজাখুঁজির পরেও তাকে পাওয়া যায়নি।’ এ ব্যাপারে নিউটাউন থানায় একটি নিখোঁজের ডায়েরিও হয়। লোহাপুলের কাছে খালের ধারে একটি পরিত্যক্ত জায়গা রয়েছে। গোটা এলাকাটি কাঁটাতার দিয়ে ঘেরা। শুধু একটি অংশ কাটা রয়েছে। সেখান দিয়ে অনেকে ভিতরে ঢুকে মদ্যপান করে। শুক্রবার সকালে ওই পরিত্যক্ত জায়গা থেকেই কিশোরীর অর্ধনগ্ন দেহটি পাওয়া যায়। পুলিস দেহটি উদ্ধার করে বিধাননগর মহকুমা হাসপাতালে পাঠায়। মৃতার মা হাসপাতালে গিয়ে দেহটি শনাক্ত করেন।
গোটা ঘটনায় পরিবারে শোকের ছায়া নেমে আসে। দোষীদের কঠোর থেকে কঠোরতম শাস্তির দাবি তুলেছেন মৃতার মা। কিন্তু কীভাবে ঘটনা ঘটল? সিসি ক্যামেরার ফুটেজে পুলিস দেখেছে, ওই কিশোরী বাড়ি থেকে বেরিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। কিন্তু, ঘটনাস্থলের কোনও ফুটেজ পাওয়া যায়নি। আশপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করা হচ্ছে। স্থানীয়দের অনুমান, সেখানে ওই কিশোরীকে দেখে কেউ বা কারা হয়তো ফুঁসলিয়ে ভিতরে নিয়ে যায়। কিংবা কিশোরী হয়তো নিজেই লুকোনোর জন্য ভিতরে ঢুকেছিল। সেই সময় মদ্যপরা তাকে দেখতে পায়। তারাই ধর্ষণের পর খুন করে ওই ছাত্রীকে। ধর্ষক ও খুনি এক না একাধিক, তা জানার চেষ্টা চলছে। পুলিস জানিয়েছে, এ ক্ষেত্রে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ওই রিপোর্ট হাতে এলে ঘটনার সঠিক কারণ জানা যাবে।