এই সময়: একদিকে কুলতলি আর অন্য দিকে ঝড়খালি। মাঝে পড়ে থাকা মাতলা নদীটাই যেন বিরাট একটা ফারাক গড়ে দিয়েছে। ওই নদী পার করা মানেই সুন্দরবনের এলাকা শুরু হয়ে গেল। পুরোপুরি সুন্দরবন নয়, আবার তার ‘ফ্লেভার’–টাও রয়েছে।
আর ওই ফ্লেভারের জন্যই ক্রমশ জনপ্রিয়তা বাড়ছে ঝড়খালির। সরাসরি সুন্দরবনে না থেকেও যে সুন্দরবনের আবহ এমন ভাবে উপভোগ করা যায়, সেটাই ভ্রমণপিপাসুদের জানাচ্ছেন ঝড়খালিতে তৈরি হওয়া বিভিন্ন হোমস্টে–র পরিচালকরা।
কুলতলি আর ঝড়খালির মাঝের মাতলা নদী ছাড়াও ঝড়খালির ‘নিজস্ব’ একটি নদীও রয়েছে — হেরোভাঙা। ওই নদী এবং তার পাড় থেকে গজিয়ে ওঠা জঙ্গলই এখানে ‘মিনি সুন্দরবন’–অনুভূতি জাগিয়ে তুলতে বিশেষ ভূমিকা নিয়েছে বলে জানাচ্ছেন ঝড়খালির বনছায়া হোমস্টে–র সৌমিক ভট্টাচার্য।
তিনি বলছেন, ‘পাশেই রয়েছে টাইগার রেসকিউ সেন্টার। বিভিন্ন জায়গায় ধরা পড়া বাঘ এখানেই এনে রাখা হয়। তারপর তাদের স্বাস্থ্যপরীক্ষা করে ফের ছেড়ে দেওয়া হয়। কান পাতলে ওই রেসকিউ সেন্টার থেকে বাঘের গর্জনও শোনা যায়।’
ঝড়খালিরই অন্য একটি হোমস্টে ‘আরণ্যক’–এর গৌতম মণ্ডল বলছেন, ‘সুধন্যখালি ওয়াচটাওয়ার আমাদের এই জায়গার একেবারে কাছেই। এ ছাড়াও রয়েছে দোবাঁকির জঙ্গলে হেঁটে ঘোরার সুযোগ।’
সুন্দরবনের এত কাছে থাকার পরেও আলাদা করে ঝড়খালি কেন ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে? এর সবচেয়ে বড় কারণ হয়তো কলকাতা থেকে গাড়িতে সরাসরি ঝড়খালি পর্যন্ত চলে আসার সুবিধা। মাত্র ১০৫ কিলোমিটার গাড়িতে যেতে খুব বেশি সময়ও লাগে না।
সৌমিকের কথায়, ‘ঝড়খালিতে উইক–এন্ড ট্যুরিজ়ম এতটাই জনপ্রিয় হয়েছে যে মার্চের মাঝামাঝি পর্যন্ত এখানকার হোম–স্টেগুলো সবই বুকিং হয়ে রয়েছে।’ নিরিবিলিতে সুন্দরবনের স্বাদ নেওয়া ছাড়াও ঝড়খালির কাছাকাছি গ্রামের কারিগরদের উলু ঘাস দিয়ে তৈরি ঝুড়ি, বাস্কেট, হাতপাখা, টুপি এবং নানা ধরনের ব্যাগ পর্যটকদের কাছে খুবই জনপ্রিয়। বনিক্যাম্প, নেতাধোপানি ওয়াচটাওয়ার এবং সূর্যমণি দ্বীপের মতো যে জায়গাগুলোয় পর্যটকদের ভিড় তুলনামূলক ভাবে কম, সেই জায়গাগুলোও ঘুরে দেখার সুযোগ রয়েছে এখান থেকে।
প্রকৃতির সান্নিধ্য, বাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের সাধারণ মানুষদের প্রতিদিনের জীবনচর্চা কাছ থেকে দেখার সুযোগ পাওয়ার পরেও যাঁদের মন ভরবে না, তাঁদেরও হতাশ করে না ঝড়খালি। কাছেই রয়েছে জলগোপালপুর। সেখানকার প্রত্নতত্ত্ব সংগ্রহশালাটি তৈরি হয়েছে প্রধানত সুন্দরবন এবং সংলগ্ন অঞ্চল থেকে পাওয়া নানা ধরনের প্রত্নসামগ্রী দিয়ে। কে বলতে পারে হয়তো পুরোপুরি ব্যক্তিগত উদ্যোগে তৈরি এই সংগ্রহশালা দেখতে গিয়ে আপনিও সুন্দরবনের প্রাচীন ইতিহাসের প্রতি অনুরক্ত হয়ে পড়বেন!