কৌশিক দে, মালদা
অত্যাধুনিক সফটওয়্যার বসানো গাড়িও গায়েব করে দিচ্ছে দুষ্কৃতীরা। ল্যাপটপের মাধ্যমে সফটওয়্যার হ্যাক করে মালদার মানিকচকে দুটি গাড়ি চুরির ঘটনায় বিহারি গ্যাংয়ের হ্যাকারদের সন্দেহ করছে পুলিশ। সিসিটিভির ক্যামেরায় দুষ্কৃতীদের গাড়ি চুরির কর্মকাণ্ড খতিয়ে দেখেই এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন তদন্তকারীররা। রীতিমতো সফটওয়্যার ব্যবহারে পারদর্শী দুষ্কৃতীদের গাড়ি চুরির কৌশলে হতবাক পুলিশও।
মালদার পুলিশ সুপার প্রদীপকুমার যাদব বলেন, ‘সবদিক খতিয়ে দেখে ঘটনার তদন্ত ঠিক পথে এগোচ্ছে।’ পুলিশের একটি সূত্র থেকে জানা গিয়েছে, মাহিন্দ্রা কোম্পানির আধুনিক যে সব মডেলের গাড়ি বেরিয়েছে, সেগুলির সফটওয়্যার সম্পর্কে জ্ঞান না থাকলে যে কোনও চালকের পক্ষে চালানো সম্ভব নয়।
ঠিক মতো না জানলে এই ধরনের আধুনিক গাড়ির গেট খোলাও অসম্ভব ব্যাপার। এ জন্য গাড়ি কেনার সময়ে রীতিমতো প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন সংশ্লিষ্ট শোরুম এবং কোম্পানি কর্তৃপক্ষ। কিন্তু মাত্র ১০ মিনিটের মধ্যে ল্যাপটপের মাধ্যমে সফটওয়্যার হ্যাক করে দরজা খুলে সেই গাড়ি নিয়ে চম্পট দিয়েছে দুষ্কৃতীরা। সিসিটিভি ফুটেছে দেখা গিয়েছে, দুষ্কৃতীরা গাড়ির সামনের গেটে একটি ডিভাইস লাগিয়ে ল্যাপটপ ব্যবহার করে দরজা খুলে সেই গাড়ি চালিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে।
গত ৩ ফেব্রুয়ারি রাতে কালিয়াচক থানার বালিয়াডাঙা এবং জালালপুর এলাকা থেকে দু’টি এসইউভি চুরি হয়। দু’টি গাড়ির বর্তমান বাজার মূল্য ২৫ লক্ষ করে প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা। ইতিমধ্যে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন পেশায় ব্যবসায়ী রাজু আলি এবং মহম্মদ সাকিব হোসেন।
কালিয়াচকের বাসিন্দা দুই ব্যবসায়ীর সাদা এবং একটি কালো রঙের দুটি এসইউভি চুরির খবরে গাড়ি চালকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। রাজু বলেন, ‘বালিয়াডাঙা এবং জালালপুর স্ট্যান্ডের কাছে বাড়ির সামনেই দীর্ঘদিন ধরেই গাড়ি রেখে আসছি। ৩ ফেব্রুয়ারি রাতে অদ্ভুতভাবে একই সময়ের মধ্যে পৃথক দু’টি জায়গা থেকেই দুটি গাড়ি চুরি হয়ে যায়। এই ধরনের উন্নতমানের গাড়ি চুরির ক্ষেত্রে ওরা যে কতটা পারদর্শী, সেটা পরে সিসিটিভি ক্যামেরায় দেখে অবাক হয়েছি।’
সাকিব বলেন, ‘এটা বিহারের দুষ্কৃতী ছাড়া সম্ভব নয়। গাড়ি চুরির পরে সম্ভবত চাঁচল মহকুমার হরিশ্চন্দ্রপুর থানা এলাকা দিয়েই বিহার পালিয়ে গিয়েছে দুষ্কৃতীরা।’
আধুনিক এ সব গাড়ির লোকেশন জানার সুযোগ থাকলেও পুলিশ ওই গাড়ি দুটির অবস্থান এখনও জানতে পারেনি। কালিয়াচক ট্যাক্সি ইউনিয়ন সমিতির সভাপতি নবকুমার গুপ্ত বলেন, ‘আমরা মালিকের গাড়ি চালাই। ভাড়া অনুযায়ী পারিশ্রমিক পাই। অধিকাংশ সময়ে গাড়ি স্ট্যান্ডে বা রাস্তার ধারেই থাকে। কিন্তু এই গাড়ি চুরির ঘটনায় এখন আতঙ্কে রয়েছি। কিছু হয়ে গেলে মালিক তো আমাদের কাছে তার ক্ষতিপূরণ বুঝে নেবে।’
তিনি বলেন, ‘দুষ্কৃতীরা কী ভাবে গাড়ি চুরি করছে, সিসিটিভি ফুটেজ দেখে অবাক হয়েছি। ওদের হাতে ল্যাপটপ, আধুনিক কিছু যন্ত্রপাতিও ছিল। তাতেই মনে করছি, বিহার এবং ঝাড়খণ্ডের দুষ্কৃতীদের পক্ষে এই ধরনের অপরাধ ঘটানো সম্ভব। কারণ, কালিয়াচক বা মালদায় এ রকম কোনও দুষ্কৃতী নেই যারা গাড়ির সফটওয়্যার হ্যাক করায় পারদর্শী।’
মালদার ১২ নম্বর জাতীয় সড়কের উত্তর প্রান্তে গাজোলে টোল প্লাজা রয়েছে। অন্যদিকে, মালদার বৈষ্ণবনগরের ১৮ মাইলে একই ভাবে টোল প্লাজা রয়েছে। সুতরাং গাড়ি চুরির পরে দুষ্কৃতীরা ওই রাস্তা ব্যবহার করলে সেটা অবশ্যই সিসিটিভি ক্যামেরায় ধরা পড়বে। পুলিশ তার খোঁজ চালাচ্ছে।
মালদা চাঁচল মহকুমার হরিশ্চন্দ্রপুরের একটি রুট দিয়ে বিহারে যাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। সেখানে অবশ্য টোলপ্লাজা নেই। মাঝেমধ্যে ওই রাস্তায় পুলিশ নাকা চেকিং করলেও অনেক সময়ে এ রকম হাইফাই মডেলের গাড়ি সন্দেহের চোখে আসে না। তাই বিহার যাওয়ার ওই রুটটিও দুষ্কৃতীরা ব্যবহার করেও থাকতে পারে বলে অনুমান পুলিশের।