উপরতলার নির্দেশে বেশ কয়েক বছর আগে বেলেঘাটা অঞ্চলে বেআইনি বাড়ি ভাঙতে গিয়েছিলেন কলকাতা পুরসভার বিল্ডিং বিভাগের এক ইঞ্জিনিয়ার। সেই সময়ে তিনি ছিলেন বরো–৩–এর অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার। এখন ১১ নম্বর বরোর একজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার। কয়েক দিন আগে পুলিশের কাছে জানতে পারেন, বেলেঘাটার একটি মামলায় সময়ে কোর্টে হাজিরা না দেওয়ায় তাঁর নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। গ্রেপ্তারি এড়াতে তাঁকে জামিন নিতে হয়।
বিল্ডিং বিভাগের ইঞ্জিনিয়াররা জানাচ্ছেন, কর্তৃপক্ষের নির্দেশে এখন কোথাও বেআইনি নির্মাণের অভিযোগ পেলেই অভিযুক্ত প্রোমোটারের বিরুদ্ধে থানায় এফআইআর করছেন তাঁরা। সেই মামলা গড়াচ্ছে মিউনিসিপ্যাল কোর্টে। আরও বিভিন্ন আদালতে অজস্র মামলা ঝুলে। মামলার শুনানি চলাকালীন আদালতে ডেকে পাঠানো হচ্ছে ইঞ্জিনিয়ারদের। গরহাজিরায় জারি হয়ে যাচ্ছে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা। রীতিমতো নাস্তানাবুদ হতে হচ্ছে। এই সব মামলায় পুলিশের তরফে যাঁরা আইও (ইনভেস্টিগেটিং অফিসার), আদালতে তাঁদেরও ঘনঘন হাজিরা দিতে হচ্ছে।
পুরসভার হিসাব অনুযায়ী, বেআইনি নির্মাণের জন্যে ২০২৪–’২৫ অর্থবর্ষে মোট ২১৬টি নতুন এফআইআর হয়েছে। কলকাতা মিউনিসিপ্যাল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, মিউনিসিপ্যাল বিল্ডিং ট্রাইব্যুনাল, সিটি সিভিল কোর্ট এবং কলকাতা হাইকোর্টে বেআইনি নির্মাণ সংক্রান্ত প্রায় ১৪০০ মামলা ঝুলে রয়েছে। মামলা সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন ইঞ্জিনিয়াররা।
নিয়ম অনুযায়ী, বেআইনি নির্মাণের ক্ষেত্রে কলকাতা পুর–আইনের ৪০১–র ‘ক’ ধারায় প্রথমে মামলা রুজু করেন বিল্ডিং বিভাগের ইঞ্জিনিয়াররাই। সেই মতো থানায় পুরসভার তরফে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়। থানা সেটাকে এফআইআর হিসাবে গণ্য করে মামলা রুজু করে। চার্জশিট জমা পড়ে মিউনিসিপ্যাল কোর্টে। তার পর শুরু হয় ট্রায়াল। মিউনিসিপ্যাল আদালতের আইনজীবীরা জানাচ্ছেন, মামলার নিষ্পত্তি হতে কম করে ২–৩ বছর সময় লাগে। বেআইনি নির্মাণের অভিযোগ প্রমাণিত হলে পাঁচ বছরের জেল এবং ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান রয়েছে।
কিন্তু বহু ক্ষেত্রেই পুরসভার ইঞ্জিনিয়াররা সাক্ষ্য দিতে না আসায় প্রোমোটাররা অল্প কিছু জরিমানা দিয়ে নিস্তার পেয়ে যাচ্ছেন। মিউনিসিপ্যাল কোর্টের আইনজীবী অনির্বাণ দত্ত বলেন, ‘বেআইনি নির্মাণের ক্ষেত্রে মেয়র ফিরহাদ হাকিম এফআইআর করতে বললেও অনেক ক্ষেত্রে সেটাও হচ্ছে না। বিল্ডিং বিভাগের ইঞ্জিনিয়াররা ঝামেলায় জড়াতে চাইছেন না। ফলে প্রোমোটাররা আরও সাহস পেয়ে যাচ্ছেন।’