প্রথমে বাঘিনি জ়িনাত। তার পর আর এক পুরুষ বাঘ। দু’জনেই দিনকয়েক আগে ঘুরে বেড়িয়েছে জঙ্গলমহলের বিস্তীর্ণ এলাকা। প্রকৃত অর্থেই তাদের পায়ের ছাপ পড়েছিল পুরুলিয়ার মানবাজারের বেশ কিছু এলাকায়। এ বার তাদের দেখা মিলল মানবাজার–২ ব্লকের বোরোর মুরগাডির মাঠে। না, রক্তমাংসের বাঘ নয়, মাটির অবয়বে হাজির হয়েছে জ়িনাত ও তার সেই ‘দোসর’।
পুরুলিয়া জেলা প্রাথমিক শিক্ষা দপ্তরের উদ্যোগে ৪০তম বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে মুরগাডির মাঠে। শুক্রবার সেখানে যোগ দিয়েছে জেলার ৪৫টি সার্কলের প্রাথমিক স্কুল, মাদ্রাসা এবং নিম্ন বুনিয়াদি শিশু শিক্ষাকেন্দ্রগুলি থেকে ৩১৫ জন খুদে পড়ুয়া। সামনে থেকে জ্যান্ত বাঘ দেখতে না পেলেও মাটির বাঘ নিয়ে ওদের মধ্যে এ দিন উৎসাহ ছিল শিখরে। কয়েকদিন আগেও যাদের ভয়ে সিঁটিয়ে ছিল ওই খুদেরা, সেই বাঘের মূর্তির সঙ্গে এ দিন একের পর এক ছবি তুলেছে তারা। জড়িয়ে ধরেছে বাঘমামার গলাও।
তবে স্কুল স্পোর্টসের মাঠে হঠাৎ বাঘ কেন? জানা গিয়েছে, ৩৬টি ইভেন্ট নিয়ে এ বারের জেলা ক্রীড়া প্রতিযোগিতার থিম করা হয়েছে অরণ্য ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ। তাতে সব থেকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় ব্যাঘ্রকুলকে। এর উদ্যোক্তা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা দপ্তরের তরফে জানানো হয়েছে, যে বাঘের ভয়ে পড়ুয়ারা স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল, তারাই এ বার বাঘদের রক্ষার বার্তা দেবে, এই ভাবনা থেকেই এমন থিম করা হয়েছে।
উদ্যোক্তাদের তরফে বিমান বিট এবং প্রসেনজিৎ বারিক নামে দুই আধিকারিক বলেন, ‘আমরা চাই যাতে শিশুকাল থেকেই বন্যপ্রাণের সঙ্গে ছাত্রছাত্রীদের একটি আত্মিক সম্পর্ক তৈরি হয়। সবুজ অরণ্যের কতটা প্রয়োজন এই দূষিত পৃথিবীতে তাও বোঝানো হয়েছে এই থিমের মাধ্যমে।’ স্থানীয় দিঘি প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক অর্পণ মণ্ডলের কথায়, ‘মাটির বাঘকে সামনে দেখে ছাত্রছাত্রীরা খুব খুশি। তাদের ভয় অনেকটাই কেটে গিয়েছে।’
সিমলিপালের বাঘিনি জ়িনাত পুরুলিয়ার বান্দোয়ান এবং বোরো এলাকায় ঘাঁটি গাড়ার পর এই এলাকার বেশ কিছু পড়ুয়া স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেয়। এই উদ্যোগে তাদের কাছে বিশেষ বার্তা দেওয়া হয়েছে শিক্ষা দপ্তরের পক্ষ থেকে। জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক প্রলয়েন্দু ভৌমিক বলেন, ‘নিজেদের বাসস্থানে থাকার অধিকার সকল প্রাণীর রয়েছে। সেটাই শিশুদের কাছে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে।’
এই উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের সভাপতি রাজীব লোচন সোরেনও। তাঁর কথায়, ‘বাঘ, হাতির মতো প্রাণী প্রায়ই আসছে এই এলাকায়। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের প্রয়োজন রয়েছে।’ বিষয়টি কেমন লাগল খুদে ছাত্রছাত্রীদের? খেলতে এসে মাঠে একটুকরো জঙ্গল আর বাঘ দেখে বেজায় খুশি চতুর্থ শ্রেণির পড়ুয়া অন্বেষা দিগর, প্রতীক জানারা। তারা বলে, ‘বাঘের কথা শুনে আগে প্রচণ্ড ভয় লেগেছিল। এখন আর অতটা ভয় লাগছে না।’