• কল্যাণীতে বেআইনি বাজি কারখানায়   ভয়াবহ বিস্ফোরণ, মৃত ৪ মহিলা কর্মী
    বর্তমান | ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • সংবাদদাতা, কল্যাণী: বসতি এলাকার মধ্যে বেআইনিভাবে চলা এক বাজি কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণ। তাতেই ঝলসে মৃত্যু চার মহিলা কর্মীর। বিস্ফোরণে গুরুতর জখম অপর এক মহিলা কর্মীকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। শুক্রবার দুপুরে কল্যাণী শহরের রথতলা এলাকার ভয়াবহ ওই বিস্ফোরণ কাণ্ডকে ঘিরে তুমুল আলোড়ন শুরু হয়েছে গোটা পুরসভা এলাকায়। একটি পাকা বাড়ির পিছনে টিনের ছাদ ও দেওয়াল দিয়ে ঘর তৈরি করে বেআইনি ওই বাজি কারখানাটি চলছিল। দুপুর দেড়টা নাগাদ ওই বিস্ফোরণের তীব্রতায় গোটা ঘরটাই উড়ে যায়। আগুন ধরে যায় গোটা এলাকায়। খবর দেওয়া হয় দমকল এবং পুলিসকে। সঙ্কীর্ণ গলি হওয়ার কারণে দমকলের ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে পৌঁছতে পারেনি। বাধ্য হয়েই আগুন নেভাতে টিউবওয়েলের জল ব্যবহার করতে হয় দমকলকর্মীদের। বিস্ফোরণস্থলের ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার করা হয় ঝলসে যাওয়ার চারটি মৃতদেহ। উজ্জ্বলা ভুঁইয়া নামে বছর ৪০’এর গুরুতর জখম এক মহিলাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়। বিস্ফোরণের পরই গা-ঢাকা দিয়েছিল বেআইনি বাজি কারখানার মালিক সাধন বিশ্বাস ওরফে খোকন। সন্ধ্যায় তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিস। বিস্ফোরণের এই খবর পৌঁছনো মাত্রই মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ নদীয়ার জেলাশাসকের কাছে ঘটনার রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে বিস্ফোরণে মৃতদের পরিবারপিছু দু’লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণের ঘোষণা করেছে নবান্ন। প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, বেআইনি বাজি কারখানা চিহ্নিত করতে খুব শীঘ্রই রাজ্যের সব জেলাশাসকের সঙ্গে বৈঠকে বসবে নবান্নের শীর্ষস্তর। 


    পুলিস জানিয়েছে, বিস্ফোরণ কাণ্ডে মৃতরা হল ভারতী চৌধুরী (৬০), রুমা সোনার (৩৫), অঞ্জলি বিশ্বাস (৬০) এবং দুর্গা সাহা (৪০)। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই কারখানায় ঘটনার সময় ওই পাঁচজনই কাজ করছিলেন। তাঁরা সকলেই স্থানীয় বাসিন্দা। স্থানীয়দের একাংশের দাবি, বাজি তৈরির জন্য সুতলি দড়ি রাখা হতো ওই কারখানায়। সুতলি কাটার ছুরি ধার দেওয়ার সময় কোনওভাবে আগুনের ফুলকি ডাঁই করে রাখা বারুদের উপর পড়াতেই এই বিপত্তি ঘটেছে। যদিও বিস্ফোরণের সঠিক কারণ জানতে তদন্ত শুরু করেছে দমকল ও পুলিসের আধিকারিকরা। ঘটনাস্থলে যাচ্ছেন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা।   পুলিস জেনেছে, ওই কারখানা মালিকের শুধুমাত্র বাজি মজুত এবং তা প্যাকেটজাত করার লাইসেন্স ছিল। বাজি তৈরি করার অনুমতি ছিল না। গোপনে সেখানে বাজি তৈরি হতো। রথতলার শুধু ওই বাড়িতেই নয়, বহু বছর ধর এলাকার একাধিক বাসস্থান সংলগ্ন অংশে এই ধরনের বেআইনি বাজি কারখানা রয়েছে। স্থানীয়রা প্রকাশ্যে এই বিষয়ে পরিষ্কার করে কিছু বলতে না চাইলেও, অনেকেই প্রশাসনের নজরদারিতে গাফিলতি থাকার অভিযোগ তুলেছেন। কল্যাণী পুরসভার চেয়ারম্যান নীলিমেশ রায়চৌধুরী বলেছেন, প্রশাসনের উচিত, কড়া পদক্ষেপ করা। কল্যাণী দমকল কেন্দ্রের ফায়ার অফিসার প্রশান্ত সরকার বলেন, বাজি থেকে আগুন লেগেছে বলেই মনে হয়েছে। বিস্ফোরণের খবর পেয়ে কল্যাণী বিধানসভার বিজেপি বিধায়ক অম্বিকা রায় ঘটনাস্থলে গেলে, সারাবছর দেখতে পাওয়া যায় না এই অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ দেখান স্থানীয়রা। গো ব্যাক স্লোগান দেওয়া হয়। সন্ধ্যায় ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি শুভঙ্কর সরকারও। 
  • Link to this news (বর্তমান)