সমীর মণ্ডল ■ মেদিনীপুর
শালবনিতে এ বার নাকি পাওয়ার প্ল্যান্ট! এই আশ্বাসে ১৬ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের ঘোষণা জিন্দল গোষ্ঠীর। বিপুল কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা! তবু খুশি নয় শালবনির জমিদাতারা। শুক্রবার হতাশ জমিদাতারা জানান, ২০০৬ সাল থেকে কত ঘোষণাই শুনেছেন তাঁরা। কিন্তু কোনওটাই বাস্তবায়িত হয়নি, আজও। তাই আবার নতুন করে একটি ঘোষণায় তাঁদের কোনও হেলদোল নেই! তাঁদের দাবি, আমাদের শুধু স্বপ্ন দেখালে হবে না। তা বাস্তবায়িত করতে হবে।
বুধবার কলকাতায় বিজিবিএসে (বাংলার শিল্প সম্মেলন) জিন্দল গোষ্ঠী শালবনিতে তাদের জমিতে এ বার বিদ্যুৎ প্রকল্প করার আশ্বাস দিয়েছে। এলাকায় ১৬ বছর আগে জমি দেওয়া লোকজনের দাবি, তাঁরা জমি দিয়েছেন অনেক দিন আগে। তখন জিন্দল গোষ্ঠী আরও বেশি মূলধনে অন্য শিল্প করার কথা বলেছিল। তার পরে এই দীর্ঘ ১৭ বছরে এখানে কিছুই হয়নি। কোনও কর্মসংস্থান হয়নি।
শালবনি জেএসডব্লিউ ল্যান্ড লুজ়ার ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক জমিদাতা পরিষ্কার মাহাত শুক্রবার বলেন, ‘এ রকম ঘোষণা কতই না শুনলাম। জমি অধিগ্রহণের আগে ঘোষণা ছিল, এশিয়ার মধ্যে বৃহত্তম ইস্পাত কারখানা হবে শালবনীতে। বাম আমলে ঢাক ঢোল পিটিয়ে শিলান্যাস হলো। আশায় বুক বেঁধে ছিলেন এলাকার যুবক-যুবতীরা। প্রশিক্ষণ দেওয়া হলো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ইস্পাত কারখানা হলো না। হলো জেএসডব্লিউ-এর সিমেন্ট কারখনা। উদ্বোধন করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানেই জিন্দালদের তরফে ঘোষণা হলো, শালবনিতে সিমেন্টের পাশাপাশি তৈরি হবে রং-এর কারখানা। কর্মসংস্থান হবে। তাও বিশ বাঁও জলে। বছর খানেক আগে স্পেন থেকে ঘোষণা হলো, শালবনিতে ইস্পাত কারখানা করবেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। কিছু দিনের মধ্যে শুনলাম, ওই কারখানা হবে পশ্চিম মেদিনীপুররের গড়বেতার কোনও একটি জায়গায়। আবার শুনছি জিন্দল গোষ্ঠী পাওয়ার প্ল্যান্ট করবেন শালবনীতে। খুব ভালো। কিন্তু আমরা বিশ্বাস করি না। তৈরি না হওয়া পর্যন্ত বিশ্বাস করা যাবে না।’
স্থানীয় বিশিষ্ট বাসিন্দাদের কথায়, শালবনিতে শিল্পের পরিবেশ আছে। পরিকাঠামোও তৈরি। কিন্তু এখন অবি্বাস ও সন্দেহের পরিবেশ বাড়ছে। এলাকার মানুষের সহযোগিতা থাকলেই কি শিল্প আসে? প্রশ্ন এলাকায়। ফলে জিন্দলদের নবতম ঘোষণায় কোনও প্রভাব পড়েনি এলাকায়।
জমিদাতা বিমল চালক বলেন, ‘ইস্পাত কারখানা তৈরি হবে বলে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার একর জমি অধিগ্রহণ হয়। যেখানে প্রায় হাজার জন জমিদাতা আছেন। ওই জমির ১১৮০ একর জমির ওপর ফডার ফার্ম ছিল। যেখানে উন্নতমানের বীজ, ছাগল, ভেড়া, কাজু বাদাম উৎপাদান হত। সেখানে সারা বছর ২০০ থেকে ২৫০ জন কাজ পেতেন। ইস্পাতের বদলে জিন্দল গোষ্ঠী সিমেন্ট কারখানা করেছেন। মাত্র ১৫০ থেকে ২০০ জন স্থানীয় মানুষ কাজ করছেন। যাদের বেতন ৮ থেকে ১২ হাজার টাকা। অনেক যোগ্য ছেলেকে তাঁর যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ দেওয়া হয়নি। আবার ঘোষণা করছে, স্বপ্ন দেখাচ্ছে। শুধু স্বপ্ন দেখলে হবে না। স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে হবে। শিল্প হলে আমরা সব রকম সহযোগিতা করব।’
জানা গিয়েছে, শালবনিতে সরাসরি জিন্দল সংস্থায় কাজ করেন মাত্র তিন স্থানীয় যুবক। বাকিরা ঠিকাদারের অধীনে কাজ করেন। শালবনিতে ইস্পাত শিল্প গড়ে উঠেনি। পরিবর্তে ৬০০ একর জমির উপর গড়ে উঠেছে জেএসডব্লিউ সিমেন্ট প্রকল্প। স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়েছে হাজার জমিদাতার। স্বপ্ন ভেঙেছে গোটা জেলাবাসীর। যা নিয়ে এলাকাবাসীর ক্ষোভ।
তৃণমূল বিধায়ক তথা মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা বলেন, ‘একটা বড় শিল্প গড়তে গেলে তাঁর প্রক্রিয়া শেষ করতে অনেক সময় লাগে। সেই প্রক্রিয়া চলছে। সময় লাগবে। শালবনিতে বিভিন্ন শিল্প গড়ে উঠছে। জিন্দলরা পাওয়ার প্ল্যান্ট করার কথা ঘোষণা করেছেন। আমরা আশাবাদী শিল্প হবে।’ বিজেপির মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সুদাম পণ্ডিত বলেন, ‘শালবনি এলাকার মানুষ ভুক্তভোগী। কী শিল্প হয় বাংলার মানুষ দেখতে পাবেন। এ ভাবে না দেওয়াই ভালো।’