অর্ঘ্য বিশ্বাস ■ ময়নাগুড়ি
কোলেপিঠে করে এক সময়ে সন্তানকে বড় করেছিলেন মা। সন্তান এখন তরতাজা যুবক। মায়ের বয়স বেড়েছে। তার উপরে অসুস্থতার কারণে শরীরও আজকাল তেমন সঙ্গ দেয় না। বৃহস্পতিবার রাতে সন্তানের কোলে চেপেই হাতির হানা থেকে কোনও রকমে রক্ষা পেলেন মা। গোরুমারা জঙ্গলঘেঁষা রামসাই এলাকার ঘটনা। তবে প্রাণে রক্ষা পেলেও হাতির হানায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দুটো ঘর।
বন দপ্তর ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় হাতির একটি দল নাথুয়া রেঞ্জের বনাঞ্চল থেকে জলঢাকা ও মূর্তি নদী পেরিয়ে চলে আসে রামসাইয়ের পানবাড়ি-কালীবাড়ি এলাকায়। ইতিমধ্যে হাতির দলটি দু'টি ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। একটি দলকে গোরুমারা বন্যপ্রাণী বিভাগের রামসাই মোবাইল স্কোয়াডের কর্মীরা রাতেই জঙ্গলের দিকে ফেরত পাঠালেও কিছু হাতি লোকালয়ে চলে আসে।
সেই দলের একটি দাঁতাল ও একটি মাকনা গ্রামে ঢুকে পড়ে। প্রতিদিনের মতোই রাতের খাওয়াদাওয়া সেরে ঘুমোতে গিয়েছিলেন পেশায় লটারির টিকিট বিক্রেতা প্রাণগোপাল রায় ও তাঁর স্ত্রী মিনতি। পাশের বিছানায় ঘুমোচ্ছিলেন তাঁদের ছেলে জীবন। রাত তখন প্রায় ১১টা। আচমকা ঘরের টিন ভাঙার শব্দে ঘুম ভেঙে যায় রায় পরিবারের লোকজনের।
কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঘরের এক প্রান্ত থেকে একটি হাতির মাথা ও শুঁড় এসে পৌঁছোয় বিছানার উপরে। শরীরে শুঁড় ঠেকতেই প্রাণগোপাল কোনওমতে বিছানা থেকে সরে আসেন। অসুস্থ মিনতি বিছানা ছেড়ে উঠতে পারেননি। কী করবেন তা বুঝে ওঠার আগেই ঘরের অন্য প্রান্ত দিয়ে আর একটি হাতি শুঁড় ও দাঁত ঢুকিয়ে দেয়। বিকট আওয়াজে সকলেই তখন বুঝতে পারেন, একটি-দু'টি নয় হাতির দলই হাজির হয়েছে।
জীবন আর দেরি করেননি। শয্যাশায়ী অসুস্থ মাকে সঙ্গে সঙ্গে কোলে তুলে নিয়ে চৌকির নীচে আশ্রয় নেন। তখনও হাতি দুটোর শুঁড় যেন কিছু খুঁজে চলেছে। কিছুক্ষণ পরে ঘরের পাশে থাকা মজুত করা চালের বস্তা টেনে নেয় হাতি দুটো। রান্নাঘরে মজুত রাখা নুন, চাল খেয়ে নেয়। প্রায় কুড়ি মিনিট উঠোনে ঘোরাফেরা করে হাতিগুলো কলাবাগানে চলে যায়।
জীবনের কথায়, ‘মা দীর্ঘদিন থেকে অসুস্থ। ঠিক মতো চলাফেরা করতে পারে না। মাকে বিছানা থেকে ঠিক সময়ে না-তুললে বড় বিপদ ঘটে যেত।’ শুক্রবার সকালেও মিনতির চোখেমুখে আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট। তিনি বলেন, ‘জীবনটা না-থাকলে মরেই যেতাম গো!’ প্রাণগোপাল জানান, গত বছরেও হাতির দল তাঁর বাড়িতে হানা দিয়েছিল। সে বারে তাঁদের ছেলে জীবন হাতির হানা থেকে অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পেয়েছিলেন।