বিনিয়োগ-পথের সরলীকরণ (ইজ় অব ডুইং বিজনেস) হোক বা ক্ষুদ্র-ছোট ও মাঝারি (এমএসএমই) শিল্প ক্ষেত্র— কেন্দ্রীয় বাজেটে তুলনায় জোর বেড়েছে বিনিয়োগ থেকে রফতানির উপর। প্রশাসনের শীর্ষ আধিকারিকদের একাংশের অভিমত, সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রগুলিতে কেন্দ্রীয় সহযোগিতা পাওয়া গেলে বিনিয়োগ এবং বাণিজ্য, দুই-ই মজবুত হবে। সম্ভবত সেই কারণে রাজ্যের সদ্য সমাপ্ত বাণিজ্য সম্মেলনের (বেঙ্গল গ্লোবাল বিজনেস সামিট বা বিজিবিএস) অন্যতম অভিমুখ সচেতন ভাবে রাখা হয়েছে এই দিকেই।
পারস্পরিক বিশ্বাসের পরিবেশ জোরদার করে ‘ইজ় অব ডুয়িং বিজনেস’কে মজবুত করার বার্তা কেন্দ্রীয় বাজেটে দিয়েছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। এই কাজে যুক্ত হতে রাজ্যগুলিকে যে উৎসাহিত করা হবে, সেই কথাও বলা হয়েছে। ভারতের রফতানিতে ৪৫ শতাংশ অবদান এমএসএমই-র— এই বিষয়টি উল্লেখ করে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন, দক্ষতা বৃদ্ধি, মূলধনের সংস্থান ইত্যাদি ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলির আর্থিক আদানপ্রদানের সীমা বাড়ানো হয়েছে অনেকটা।
রাজ্যের আধিকারিক মহলের একাংশ মনে করছেন, এ রাজ্যেও এমএসএমই ক্ষেত্রে অগ্রগতি বাড়ছে। প্রায় ৯০ লক্ষ এমএসএমই-ইউনিটে কর্মরত রয়েছেন প্রায় ১.৩ কোটি মানুষ। এ বারের সম্মেলনে যে ভাবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কর্মসংস্থানকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন, তাতে বাকিগুলির সঙ্গে এই শিল্প ক্ষেত্রেরও বৃদ্ধি জরুরি। তাই কেন্দ্রীয় নীতির সঙ্গে একই অভিমুখে রাজ্যের নীতি পরিচালিত হলে রাজ্য এবং কেন্দ্রের উভয় সহযোগিতা মিলবে। তাতে এই শিল্পের পরিধি বাড়লে বাড়বে কর্মসংস্থানও। সংশ্লিষ্ট মহল মনে করিয়ে দিচ্ছে, এর সমান্তরালে রফতানি ক্ষেত্রেও জোর দেওয়া হয়েছে বিজিবিএস-এ। একই জোর দেখা গিয়েছে কেন্দ্রীয় বাজেটেও।
‘ইজ় অব ডুইং বিজনেস’ পরিবেশ আরও মজবুত করার কেন্দ্রীয় বার্তার সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে বিজিবিএস-এ হওয়া ঘোষণাতেও। রাজ্যস্তরের নতুন একটি সিনার্জি কমিটি গড়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে সেই কমিটি কাজ করবে শিল্পমহল তথা বিনিয়োগকারীদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা এবং সরকারি অনুমোদন দিতে। সময়ের মধ্যে দ্রুত সেই কাজ হচ্ছে কি না, তা দেখার জন্য ১৫ দিন অন্তর কমিটির বৈঠকও চেয়েছেন মমতা। প্রসঙ্গত, এর আগেও সংশ্লিষ্ট সব দফতরকে নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি তৈরি হয়েছিল। এক জানলা নীতিতে বিনিয়োগকারীদের প্রয়োজনীয় অনুমোদন দেওয়া তার কাজ ছিল। কিন্তু গত কিছু মূল্যায়ন বৈঠকে শিল্পমহলের তরফে নানা ধরনের সমস্যার কথা তুলে ধরা হয়। ফলে ফের এই নতুন কমিটি গঠনের সিদ্ধান্তকে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। এক কর্তার কথায়, “দীর্ঘদিন ধরে জটে আটকে থাকা অশোকনগরে তেল উত্তোলন প্রকল্পে সব ধরনের সহযোগিতার বার্তা দিয়ে জাতীয়স্তরের কোনও প্রকল্পে শরিক হতে চেয়েছে রাজ্য। ওএনজিসি-কে জমি এবং লাইসেন্সও দেওয়া হয়েছে। উন্নয়নের প্রশ্নে কেন্দ্রের সঙ্গে সমন্বয় যে জরুরি, সেই বার্তা হয়তো দেওয়া গিয়েছে।”
তবে আধিকারিকদের একটি অংশ মনে করছেন, ক্ষেত্র (সেক্টর) ভাগ করে শিল্প-কর্তাদের একাংশকে তার সঙ্গে যুক্ত করার ইতিবাচক একটা দিক রয়েছে। কারণ, শিল্পমহলকে জাতীয় বা আন্তর্জাতিক স্তরেও বাণিজ্যের পথ সুগম রাখতে হয়। সেই প্রয়োজনের নিরিখে তাঁদের দিক থেকে অভিমুখ সংশোধনের পরামর্শের প্রতিফলন রাজ্যের পরবর্তী পদক্ষেপে থাকলে পরিস্থিতি হয়তো ইতিবাচক দিকে মোড় নিতে পারে।