• মোবাইল-সহ ধরা পড়লে কঠোর শাস্তি
    আনন্দবাজার | ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • এ বার মাধ্যমিক পরীক্ষায় মোবাইল নিয়ে ধরা পড়লে সেই বছরের সমস্ত পরীক্ষা বাতিল করবে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ, জানিয়েছেন পর্ষদের সভাপতি রামানুজ গঙ্গোপাধ্যায়। অন্য দিকে, মোবাইল নিয়ে আরও কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ মাদ্রাসা শিক্ষা পর্ষদ। মাদ্রাসা পর্ষদের সভাপতি শেখ আবু তাহের কামরুদ্দিন জানিয়েছেন, পরীক্ষা চলাকালীন মোবাইল নিয়ে ধরা পড়লে সেই পরীক্ষার্থীর রেজিস্ট্রেশনই বাতিল করবে মাদ্রাসা বোর্ড। অর্থাৎ, ওই পরীক্ষার্থী আর কখনও মাদ্রাসা বোর্ডের হাই মাদ্রাসা, আলিম এবং ফাজিল পরীক্ষায় বসতে পারবে না।

    আগামী সোমবার শুরু হচ্ছে মাধ্যমিক। মাদ্রাসা বোর্ডের দশম শ্রেণির পরীক্ষা হাই মাদ্রাসা, আলিম ও দ্বাদশ শ্রেণির বোর্ডের পরীক্ষা ফাজিল-ও শুরু হচ্ছে সেই দিন। দুই বোর্ডের সভাপতিই জানান, গত বারের চেয়ে এ বছর পরীক্ষার্থী বেড়েছে। রামানুজ জানালেন, মাধ্যমিকে পরীক্ষার্থী বেড়ে‌ছে ৬০ হাজারের মতো। আবু তাহের জানান, তাঁদের পরীক্ষার্থী তিন হাজারের মতো বেড়েছে। হাই মাদ্রাসা, আলিম ও ফাজিল মিলিয়ে এ বার পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৬৫,১০০। ২০টি জেলার ২০৬টি পরী‌ক্ষা কেন্দ্রে এই তিন পরীক্ষা হবে। আবু তাহের জানান, রেজিস্ট্রেশন বাতিল-সহ বেশ কিছু কড়া পদক্ষেপ এ বার করবেন তাঁরা। এত দিন নিয়ম ছিল, কোনও শিক্ষকের ছেলে বা মেয়ে পরীক্ষা দিলে তিনি গার্ড দিতে পারবেন না। এ বার নিয়ম হয়েছে, শুধু ছেলে বা মেয়ে নয়, ওই শিক্ষকের উপরে নির্ভরশীল কোনও আত্মীয় পরীক্ষা দিলেও তিনি গার্ড দিতে পারবেন না। পরী‌ক্ষার হলে এ বার এক ঘণ্টা আগে নয়, ৩০ মিনিট আগে পরীক্ষার্থীরা ঢুকতে পারবে।

    শুক্রবার সাংবাদিক বৈঠকে রামানুজ জানান, এ বার মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৯ লক্ষ ৮৪ হাজার ৭৫৩। তাদের মধ্যে ছাত্র ৪,২৮,৮০৩ জন এবং ছাত্রী ৫,৫৫,৯৫০ জন। তবে, আদালতের নির্দেশে আরও কিছু পরীক্ষার্থী ফর্ম পূরণ করছে। তাই পরীক্ষার্থীর সংখ্যা আরও কিছুটা বাড়বে। সোমবার থেকে পরীক্ষা হলেও এখনও ১৮১ জন অ্যাডমিট কার্ড পায়নি। কবে তারা অ্যাডমিট কার্ড পাবে? রামানুজের দাবি, স্কুলগুলির গাফিলতিতেই ১৩৬টি স্কুলের ১৮১ জন পরীক্ষার্থী অ্যাডমিট কার্ড পায়নি। তাদের শনি ও রবিবারের মধ্যে অ্যাডমিট কার্ড দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। রামানুজ বলেন, “শিক্ষক সংগঠনগুলি ১৩৬টি অপদার্থ স্কুল নিয়ে কেন লড়াই করছে? প্রতিবছর একই ভুল করছে, এমন স্কুলও আছে। যার ফলে হয়রান হচ্ছে পরীক্ষার্থীরা।”

    ‘অতি স্পর্শকাতর’ জেলা মালদহের জন্য এ বার প্রধান পরীক্ষা কেন্দ্রগুলিতে দু’জন অতিরিক্ত ভেনু সুপারভাইজ়ার থাকবেন, জানান রামানুজ। তাঁরা এক্সাম অ্যাপের মাধ্যমে প্রতিটি পরীক্ষা কেন্দ্রের পরিস্থিতি নিয়ে সর্বশেষ তথ্য দেবেন। এ বার মাধ্যমিকে মোট পরীক্ষা কেন্দ্র ২৬৮৩টি। এর মধ্যে সাধারণ কেন্দ্র ১৭৩৬টি। প্রধান কেন্দ্র ৯৪৭টি। সিসি ক্যামেরা ছাড়াও এক্সাম অ্যাপের মাধ্যমে নজরদারি চলবে।

    যে সমস্ত যোগ্য শিক্ষক আন্দোলন চালাচ্ছেন, তাঁরা যদি পরীক্ষার কাজে অংশ না নেন, তা হলে পরিস্থিতি কী ভাবে সামলানো হবে? রামানুজ বলেন, “পরীক্ষায় অংশ নেবেন না জানিয়ে কোনও শিক্ষকের ইমেল বা চিঠি আমাদের কাছে আসেনি। এ ব্যাপারে এখনই মন্তব্য করতে পারব না।” তবে সূত্রের খবর, যে শিক্ষকদের মাধ্যমিক পরীক্ষায় কাজ করার কথা, তাঁরা যদি কাজ না করেন, তা হলে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। এ দিন ২০১৬ সালের যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চের কয়েক জন প্রতিনিধি শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর সঙ্গে বিকাশ ভবনে বৈঠক করেন। ব্রাত্য বলেন, “শিক্ষকদের ওই প্রতিনিধিরা মাধ্যমিক বয়কট করছেন, এমন কিছু আমাকে বলেননি। তাই পরীক্ষা বয়কটের খবরের কোনও সারবত্তা আছে বলে আমি মনে করি না।”

    তবে, ওই প্রতিনিধিদলের তরফে শিক্ষক মেহবুব মণ্ডল ও ধীতীশ মণ্ডলের দাবি, “শিক্ষামন্ত্রী এবং এসএসসি-র চেয়ারম্যান আশ্বাস দিয়েছেন, আমাদের দাবিগুলি নিয়ে ১০ ফেব্রুয়ারির আগে শিক্ষা দফতর এবং এসএসসি বৈঠকে বসবে। যোগ্য শিক্ষকেরা যাতে ন্যায়বিচার পান, তা দেখতে সমস্ত তথ্য একত্রিত করে সমাধানে আসার চেষ্টা করা হবে।” মেহবুব জানান, ১০ তারিখ সুপ্রিম কোর্টে কী হয়, তা দেখেই তাঁরা মাধ্যমিক পরীক্ষার কাজ করবেন কি না, সেই সিদ্ধান্ত নেবেন।

  • Link to this news (আনন্দবাজার)