বারুইপুরের উত্তর খোদার বাজারের মণ্ডলপাড়া থেকে উদ্ধার হওয়া কোটি টাকার মাদক এসেছিল নদিয়ার পলাশির একটি মাদক তৈরির কারখানা থেকে। এ ছাড়া, মুর্শিদাবাদের লালগোলা থেকেও মাদক এসেছিল বারুইপুরের ওই বাড়িতে। তা-ও এক বার নয়, একাধিক বার। নদিয়া ও মুর্শিদাবাদ থেকে সড়কপথে বারুইপুরের ওই বাড়িতে মাদক নিয়ে এসেছিল এই ঘটনায় ধৃত মাদক কারবারি মোকলেসুর শেখ। তাকে জেরা করার পরে এ সব জানতে পেরেছেন রাজ্য পুলিশের এসটিএফের গোয়েন্দারা।
সূত্রের খবর, গত মঙ্গলবার বারুইপুর থানা এলাকার উত্তর খোদার বাজারের মণ্ডলপাড়ার একটি চারতলা বাড়ির একতলায় হানা দেয় এসটিএফ বাহিনী। সেখান থেকে প্রায় এক কোটি টাকা মূল্যের হেরোইন উদ্ধার করেন তদন্তকারীরা। সেই সঙ্গে বাজেয়াপ্ত করা হয় প্রায় ২৬ লক্ষ টাকা। গ্রেফতার করা হয় মোকলেসুর শেখ এবং তার শাশুড়ি সেরিনা বিবিকে।
গোয়েন্দাদের দাবি, বারুইপুরে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে মাদকের কারবার চালাচ্ছিল অভিযুক্তেরা। সঙ্গে ছিল মোকলেসুরের স্ত্রী-ও। যদিও সে পলাতক। ধৃতদের জেরা করে গোয়েন্দারা জেনেছেন, বারুইপুর স্টেশন রোড-সহ দু’জায়গায় মাদকের পুরিয়া বিক্রির দোকান খুলেছিল তারা। সেখানে মোকলেসুর ও তার আত্মীয়েরা ঝুপড়ির আড়াল থেকে মাদক বিক্রি করত। এই কাজের জন্য কয়েক জন এজেন্ট-ও নিয়োগ করেছিল তারা।
এক তদন্তকারী জানান, এই ঘটনায় পলাশির এক মাদক কারবারির নাম উঠে এসেছে, যার বাড়িতেই মাদক তৈরির কাঁচামাল নিয়ে এসে হেরোইন তৈরি করা হত। সেই মাদক সড়কপথে নিয়ে আসা হত বারুইপুরে। তবে গোয়েন্দারা জানান, ওই মাদক কারবারির খোঁজে তল্লাশি চললেও তার নাগাল মেলেনি। একই সঙ্গে মোকলেসুরের স্ত্রীরও খোঁজ চলছে বলে গোয়েন্দারা জানান। তাঁরা আরও জানিয়েছেন, ২০২১ সালে মোকলেসুরকে প্রথম বার গ্রেফতার করেছিলেন এসটিএফের গোয়েন্দারা। কিন্তু এই মামলার তদন্তভার ছিল দক্ষিণ ২৪ পরগনার উস্তি থানার হাতে। অভিযোগ, সেই মামলায় তদন্তকারী অফিসার মোকলেসুরের বিরুদ্ধে ১৮০ দিনের মধ্যে চার্জশিট না দিয়ে ১৮১তম দিনে সেটি আদালতে পেশ করেন। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে চার্জশিট জমা দিতে না পারায় মোকলেসুর আদালত থেকে জামিন পেয়ে যায়। তার পরেই সে নতুন করে বারুইপুরে মাদকের ঘাঁটি তৈরি করে।
বারুইপুরের ওই বাড়িতে মাদক নিয়ে আসার পরে মোকলেসুরের স্ত্রী এবং শাশুড়ি সেটির পুরিয়া তৈরি করে এজেন্টদের হাতে তুলে দিত। সেই কাজে সাহায্য করত মোকলেসুরের নাবালক ছেলেও। এক পুলিশকর্তা জানান, বর্তমান মামলায় ধৃতদের বিরুদ্ধে আর্থিক তদন্ত করা হবে। মাদকের ব্যবসা করে মোকলেসুর কত টাকার সম্পত্তি করেছিল, সেই তালিকা তৈরি করা হবে। তদন্তের শেষে তার সমস্ত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হবে।